নিজস্ব প্রতিনিধি: রেশন দুর্নীতি কাণ্ডে(Ration Distribution Scam) কলকাতা হাইকোর্টে(Calcutta High Court) ধাক্কা খেল কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা Enforcement Directorate বা ED। কলকাতার SSKM Hospital-এ ভর্তি রয়েছেন ED’র হাতে গ্রেফতার হওয়া রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক(Jyotipriya Mallik) ওরফে বালু। তাঁর ওপর নজরদারি বজায় রাখতে হাসপাতালের কেবিনে CCTV বসিয়েছে ED। নিম্ন আদালতের নির্দেশে সেই CCTV Footage’র Link ED-কে দিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এর ফলে ব্যক্তিগত গোপনীয়তা খর্ব হচ্ছে, এই অভিযোগ তুলে কলকাতা হাইকোর্টে মামলা করেন জ্যোতিপ্রিয়। সেই মামলাতেই এদিন অর্থাৎ শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্ট ED-কে ধাক্কা দিয়ে জানিয়েছে, প্রাক্তন মন্ত্রীর ঘরে যে CCTV লাগানো রয়েছে তা খুলে ফেলতে হবে। পরিবর্তে মন্ত্রীর কেবিনের বাইরে CRPF কমান্ড্যান্ট মোতায়েন করতে হবে। তাঁরাই নজর রাখবেন ওই কেবিনে কারা ঢুকছেন ও বার হচ্ছেন। এক্ষেত্রে রেজিস্টার খাতা ব্যবহার করতে হবে।
এদিন মামলার শুনানিকালে বালুর আইনজীবীর বক্তব্য ছিল, বলা হচ্ছে তদন্তের স্বার্থে CCTV’র মাধ্যমে নজরদারি করা হচ্ছে। কিন্তু কেন? এর ফলে তাঁর মক্কেলের গোপনীয়তার অধিকার খর্ব হচ্ছে। এই প্রেক্ষিতেই শুক্রবার কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি তীর্থঙ্কর ঘোষের নির্দেশ, রুমের ভিতরে কোনও CCTV রাখা যাবে না। তবে, রুমের বাইরে কোনও CCTV আগে থেকেই লাগানো থাকলে তদন্তের স্বার্থে ওই ফুটেজ দেখতে পারবেন ED’র তদন্তকারী অফিসার। CCTV’র বদলে প্রাক্তন মন্ত্রীর নিরাপত্তা দেখভাল করবেন CRPF জওয়ানরা। সমস্ত গতিবিধি নথিভুক্ত করতে হবে রেজিস্টার খাতায়। এদিকে রাজ্যের রেশন দুর্নীতির তদন্তে নেমে সমস্যায় পড়েছে ED’র তদন্তকারী অফিসাররা। তাঁরা জানতে পেরেছেন, রেশন ব্যবস্থায় অনিয়ম নিয়ে রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে গুচ্ছের অভিযোগ জমা পড়লেও, তার তদন্ত সে ভাবে হয়নি। রেশন নিয়ে এখনও পর্যন্ত রাজ্যে কয়েকশো কোটি টাকার দুর্নীতির খোঁজ পেয়েছে ED। তাঁদের বিশ্বাস, রেশন নিয়ে জমা পড়া এই সমস্ত অভিযোগ খতিয়ে দেখলে আরও কোটি কোটি টাকার দুর্নীতির খোঁজ মিলবে। তাই এ ব্যাপারে পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য পুলিশকেই বিশেষ পরামর্শ-সহ একটি চিঠি দিয়েছে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থাটি।
ED সূত্রে খবর, খুব সম্প্রতিই ওই চিঠি গিয়েছে রাজ্য পুলিশের ডিজি মনোজ মালব্যের কাছে। চিঠিতে ED জানিয়েছে, রেশন বণ্টন দুর্নীতিতে কলকাতা পুলিশ-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা পুলিশের কাছে যে সমস্ত অভিযোগ জমা পড়েছে, তার বিস্তারিত তদন্ত হয়নি। যেহেতু ED কেবলমাত্র আর্থিক বিষয় সংক্রান্ত তছরুপেরই তদন্ত করতে পারে, তাই রাজ্য পুলিশের ডিজিকে এ ব্যাপারে বিস্তারিত তদন্ত করতে বলেছে ED। শুধু তা-ই নয়, ED সূত্রে খবর, ওই চিঠিতে তাঁরা রাজ্য পুলিশকে জানিয়েছে, রেশন দুর্নীতির জাল ছড়িয়ে রয়েছে গোটা রাজ্য জুড়ে। এ ব্যাপারে যদি কোনও তথ্যপ্রমাণ বা সাহায্যের প্রয়োজন পড়ে, তবে তা দিয়ে রাজ্য পুলিশকে সাহায্যও করতে পারে ED। প্রসঙ্গত, রেশন দুর্নীতি মামলায় রাজ্যের মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে গ্রেফতার করেছে ED। গ্রেফতার করা হয়েছে মন্ত্রীর ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বাকিবুর রহমানকেও। সম্প্রতি এঁদের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিটও জমা দিয়েছে ED। তাতে বলা হয়েছে, সরকারি তহবিল থেকে মন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয়ের আনুকূল্যে অন্তত ৪৫০ কোটি টাকা গিয়েছে বাকিবুরের হাতে।