নিজস্ব প্রতিনিধি: চাকরি পেতে দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়ার ঘটনা নতুন নয় বিশ্বের বুকে। সারা পৃথিবী জুড়ে এই ধরনের ভুরি ভুরি ঘটনা ছড়িয়ে আছে। ভারতেও এই ধরনের ঘটনা কিছু কম ঘটে না। বাংলার বুকেই এখন নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় শোরগোল পড়ে গিয়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। অনেকেই এই ঘটনায় গ্রেফতার হয়েছেন। প্রায় ২ হাজার মানুষের চাকরি গিয়েছে। আরও সমসংখ্যক কী তারও বেশি মানুষের চাকরি আগামী দিনে যেতে পারে। আর এই নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় এখন রাজ্যের শাসক দলকে প্রতিনিয়ত সব থেকে জোরালো ভাবে আক্রমণ করে চলেছে যে শিবিরটি তা হল বামফ্রন্ট(Leftfront)। কিন্তু সেই বাম জমানার এক নিয়োগ দুর্নীতি এবার সামনে চলে এল রাজ্য গোয়েন্দা বাহিনী CID’র দৌলতে। রাজ্যের কৃষি দফতরের(Agriculture Department) ৩২১টি করণিক পদে(Clerk Post) নিয়োগের জন্য ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল। সেই পরীক্ষায় চাকরি পাওয়া ৩৪জন প্রার্থীর মোট নম্বর বৃদ্ধি করার জন্য তাঁদের উত্তরপত্রে কাটাকুটি করা হয়েছে এবং ভুল উত্তরেও নম্বর দেওয়া হয়েছে। ১৮ কেটে ৮১ ও ১৯ কেটে ৯১ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন BSK-তে আধার পরিষেবা দিতে ৩ হাজার পদে নিয়োগ শীঘ্রই
ঠিক কী হয়েছে? CID’র দৌলতে এখন যে ঘটনা সামনে এসেছে তা কার্যত বামজমানার। ২০০৭ সালের ডিসেম্বরে কৃষিদফতরের করণিক পদে নিয়োগের জন্য যে লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হয়েছিল তা ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম ও স্বজনপোষণের অভিযোগ ওঠে। পরবর্তীকালে সরকার ওই পরীক্ষা বাতিল বলে ঘোষণা করলেও সফল পরীক্ষার্থীরা সুপ্রিম কোর্ট(Supreme Court) পর্যন্ত আইনি লড়াই চালিয়ে যান। তার জেরে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে ২০০-র বেশি সফল পরীক্ষার্থী কয়েক বছর পর চাকরিতে যোগও দেন। পরিবর্তনের পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার সেই নিয়োগ নিয়ে CID-কে তদন্ত করে দেখার নির্দেশ দেয়। সেই ঘটনার তদন্তে নেমে CID’র আধিকারিকেরা দেখেন যারা চাকরি পেয়েছেন তাঁদের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা কৃষিদফতরের আধিকারিক বা কর্মী। এই পরিস্থিতিতে সফল চাকরিপ্রার্থীদের উত্তরপত্রগুলি পরীক্ষা করতে গিয়ে তাঁরা চমকে ওঠেন। অন্তত ৩৪ জনের উত্তরপত্র ঘেঁটে তাঁরা দেখেন মোট নম্বর বৃদ্ধি করার জন্য উত্তরপত্রে কাটাকুটি করা হয়েছে এবং ভুল উত্তরেও নম্বর দেওয়া হয়েছে। যিনি ১৭ পেয়েছেন তাঁর নম্বর কেটে ৭১ করা হয়েছে। যিনি ২৯ পেয়েছেন তাঁর নম্বর কেটে ৯২ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন ED’র নজরে এবার ২৫০০ স্কুলশিক্ষক, যেতে পারে চাকরি
এরপরেই গোটা বিষয়টি নিয়ে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হন। নগর দায়রা আদালতের ৪ নম্বর বিশেষ আদালতে এই সংক্রান্ত মামলার শুনানি প্রক্রিয়া চলার সময় বিষয়টি CID’র আধিকারিকেরা তুলেও ধরেন। চার্জ গঠন সংক্রান্ত শুনানি চলাকালীন গত ১৬ সেপ্টেম্বর নগর দায়রা আদালতের চতুর্থ বিশেষ কোর্টের বিচারক ১২ পাতার একটি নির্দেশও দেন। পাশাপাশি এই কেলেঙ্কারির ঘটনায় দুর্নীতিতে জড়িত থাকার অভিযোগে রাজ্য কৃষিদফতরের ৩জন পদস্থ আধিকারিকের বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দিয়েছেন CID’র আধিকারিকেরা। আগামী মাসে তাঁদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠনের দিনক্ষণ চূড়ান্ত হয়েছে।