নিজস্ব প্রতিনিধি: হায় রে এক কী দুরাবস্থা! যারা ৩৪ বছর ধরে বাংলা শাসন করেছে আজ কিনা তাঁদের ব্রিগেডের(Brigade Parade Ground) মাঠ ভরানোর কথা ভাবতে হচ্ছে! ভাবা যায়। অবশ্য হবে নাই বা কেন! মরিচঝাঁপি, সাঁইবাড়ি, ধানতলা, বানতলা, ছোট আঙারিয়া, সূচপুর, সিঙ্গুর, নন্দীগ্রামের বুকে গণহত্যা আর গণধর্ষণের ট্র্যাক রেকর্ড যাদের ঝুলিতে রয়েছে তাঁদেরকেই তো ব্রিগেড ভরাতে ‘ফতোয়া’(Order) জারি করতে হবে। কেননা বাংলার জনগণ তো তাঁদের লাথি মেরে বনবাসে পাঠিয়ে দিয়েছে। কবে তাঁরা ফের ক্ষমতায় ফিরবে তা তো তাঁরা নিজেরাও জানে না। কিন্তু যতদিন না ফেরে ততদিন তো দলটাকে ধরে রাখতে হবে। আর তাই দলেরই সদস্যদের ওপর নামিয়ে দেওয়া হয়েছে ‘ফতোয়া’। আগামী ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডের মাঠে হাজিরা(Must be present in Brigade) দিতে হবে দলের সব সদস্যকেই(All Party Members)। কিন্তু যারা নিজেদের ভোট নিজেরা ধরে রাখতে পারে না, নিজেদের লোক নিজেরা ধরে রাখতে পারে না, রাজ্য বিধানসভায় একজনও বিধায়ককে পাঠাতে পারে না, তাঁদের কথা শুনবে কে?
শুনুন তাহলে বলি এক কথা। আগামী ৭ জানুয়ারি কলকাতার(Kolkata) ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে লালপার্টি মানে সিপিআই(এম)’র(CPIM) যুব সংগঠন DYFI’র সভা রয়েছে। সেই সভায় আদৌ লোক হবে কিনা তা নিয়ে এখন দলের অন্দরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। লোকসভা নির্বাচনের আগে সেই ব্রিগেড সমাবেশ Super Duper Flop হয় তাহলে তো গোটা দলেরই মুখ পুড়বে। সেই সঙ্গে ২৪’র ভোটে লড়াই করার মতো কোনও সঙ্গী নাও পাওয়া যেতে পারে। অতএব ব্রিগেড ভরাতে ভরসা একমাত্র ‘ফতোয়া’। হাসিও পায়, ‘চিনের প্রেসিডেন্ট আমাদের প্রেসিডেন্ট’ শ্লোগান আওড়ানো লালপার্টির নেতারা এখন দলের নেতাদেরই ‘ফতোয়া’ দিচ্ছে ব্রিগেডে আসার জন্য। কার্যত লালপার্টির সূত্রে জানা গিয়ছে, যুবদের ব্রিগেডে মানুষের ঢল নামবে না বুঝেই এখন দলের প্রবীন পার্টি সদস্য থেকে নীচুতলার সদস্যদেরও ব্রিগেডে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছে আলিমুদ্দিন।
কার্যত বাংলার রাজ্যপাট চলে যাওয়ার পর থেকেই লালপার্টির সাফল্যের গ্রাফ নিচের দিকে। ক্ষমতা হারিয়ে যেটুকুও বা বজায় ছিল সেখানেও থাবা গেড়েছে ‘জয় শ্রী রাম’। লাল রক্ত টেনে বাংলায় বলবৃদ্ধি ঘটেছে পদ্মশিবিরের। এই কারণেই বাংলার বিধানসভা থেকেও তাঁরা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছেন। এখন একক শক্তিতে ব্রিগেড ভরানো সম্ভব নয় বুঝেই, লজ্জার মুখ ঢাকতে বাবুরা দলেরই সব সদস্যকে নির্দেশ দিচ্ছেন ‘ব্রিগেডে আসা চাই ই চাই।’ না এলে? আপাতত কারও কিছু জানা নাই। ব্রিগেড সমাবেশে জমায়েত ভাল না হলে লোকসভা ভোটের আগে সিপিএমেরই যে মুখ পুড়বে সেটা দলেরই বিভিন্ন জেলা নেতৃত্ব থেকে জানানো হয়েছে আলিমুদ্দিনকে। অনেকের কথায়, ছাত্র-যুব সমাবেশ ডেকে ধর্মতলা ভরানো আর ব্রিগেড ভরানো এক বিষয় নয়। সেই আশঙ্কার কথা মাথায় রেখেই নবীনদের ব্রিগেডে প্রবীনদের জমায়েত বাধ্যতামূলক করে নির্দেশ দিতে হয়েছে রাজ্য সিপিএমকে। পার্টির সমস্ত শাখাকে বলা হয়েছে সদস্যদের প্রত্যেককে ব্রিগেডে যেতেই হবে। একইভাবে সংগঠন দুর্বল হলেও শ্রমিক, কৃষক ও মহিলা শাখার নেতৃত্বকেও ব্রিগেডে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কোনও পার্টি সদস্য যদি ৭ জানুয়ারি, সমাবেশে হাজির না থাকেন তাহলে তাঁকে অনুপস্থিতির উপযুক্ত কারণ দেখাতে হবে।