নিজস্ব প্রতিনিধি: একুশের বিধানসভা নির্বাচনের পর থেকেই আকচাআকচি শুরু হয়ে গিয়েছিল। দিন যত গড়াচ্ছে দেখে যেন ততই মনে হচ্ছে বাংলার বুকে ক্রমশ রসাতলে তলিয়ে যাচ্ছে বিজেপি(BJP)। প্রতিদিনই এখন দলের বড়, ছোট, মেজ, সেজ নেতারা আক্রমণ শানছেন দলের রাজ্য নেতৃত্বকে। সঙ্গে চলছে একে অপরের বিরুদ্ধে কামান দাগার পালাও। বাকযুদ্ধ চূড়ান্ত কদর্য চেহারা নিয়েছে যা বিজেপিকে চূড়ান্তভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করছে নিত্যদিন। এমনিতেই বাংলার(Bengal) বুকে ইদানিংকালের প্রায় সব নির্বাচনের দেখা যাচ্ছে, মানুষের কাছে বিশ্বাসযোগ্যতা, গ্রহণযোগ্যতা, জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে বিজেপি। তুলনায় বিরোধী পরিসরে ক্রমশ ফিরে আসছে বামেরা। এই অবস্থায় জোর তরজা বাঁধল বঙ্গ বিজেপির দুই প্রাক্তন সভাপতির মধ্যে। একজন দিলীপ ঘোষ(Dilip Ghosh), অন্যজন তথাগত রায়(Tathagatha Roy)। এদিন দিলীপ চাঁছাছোলা ভাষায় আক্রমণ শানিয়েছেন তথাগতকে। বলেছেন, ‘যাঁরা বিজেপি পার্টি অফিসকে পানশালা বানিয়ে দিয়েছিলেন, জীবনে ফুর্তি ছাড়া কিছু করেননি, সেই সব আহাম্মকদের কথা কে শোনে?’
ঠিক কী বলেছেবন দিলীপ আর কেনই বা বলেছেন? অতীতে দিলীপ তাঁর ঘনিষ্ঠমহলে তথাগতকে পানাসক্ত বলে সমালোচনা করেছেন একাধিকবার। অন্তত তেমনটাই দাবি বঙ্গ বিজেপির একাংশের। কিন্তু সেই সমালোচনা সীমাব্দধ ছিল চার দেওয়ালের মধ্যে। কিন্তু এদিন সেই সমালোচনা ও আক্রমণ নেমে এসেছে রাজপথে, প্রকাশ্যে। গত সোমবার তথাগতবাবু একটি টুইট(Tweet) করেন। সেখানে তিনি লেখেন, ‘কেডিএসএ অর্থাৎ কৈলাস, দিলীপ, শিবপ্রকাশ, অরবিন্দদের টিম পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির জেতা গেম হারিয়ে দিয়েছে এবং সেই প্রক্রিয়ার মধ্যে কামিনী-কাঞ্চন আকণ্ঠ উপভোগ করেছে। আমার জীবনে এ রকম রাজনৈতিক ভাবে নিজের পায়ে কুড়ুল মারা আমি কখনও দেখিনি বা শুনিনি। এই কথাটা প্রকাশ্যে বলা প্রয়োজন ছিল। কারণ তা না হলে এরা যেরকম চালাচ্ছিল তাই চালিয়ে যেত। আসানসোল ও বালিগঞ্জের উপনির্বাচনে বিজেপির যা ফল হল তা তো অপ্রত্যাশিত নয় ! শুধু শুধু দুটো মেয়েকে এই উৎকট গরমের মধ্যে ঘুরিয়ে অপমান করানো হল। বেবুন এবং ফিটার মিস্ত্রি যা মজা লুটবার তা তো লুটে নিয়েছে। বিজেপির শোচনীয় ফল— সেটা মজা লোটারই পরিণাম। কর্মীদের মনোবল তলানিতে। পেট্রল-গ্যাসের দাম গৌণ কারণ।’
তথাগতের সেই টুইটের জেরে দিলীপ দাবি করেছিলেন, তথাগতের ক্ষমা চাওয়া উচিত কেননা তিনি প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং তৃণমূলের থেকেও সুবিধা নিয়েছেন। তার জেরে তথাগত আবার পাল্টা টুইট করে লেখেন, ‘যে ফিটার মিস্ত্রিটি ২০১৬ সালের নির্বাচনের আগে মিথ্যা এফিডেভিট করে নিজেকে ঝাড়গ্রাম পলিটেকনিকের ডিপ্লোমাপ্রাপ্ত বলে লিখেছিলেন, এবং যা ওই পলিটেকনিক অস্বীকার করেছে, তার কাছে ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্ন নেই। কারণ, মিথ্যা এফিডেভিট করা একটি দণ্ডযোগ্য অপরাধ।’ এরপরেই এদিন দিলীপ প্রকাশ্যে তথাগতকে আক্রমণ শানিয়ে বলেছেন, ‘যাঁরা লোকের পায়ে ধরে চাকরি পেয়েছেন, যাঁরা বিজেপি পার্টি অফিসকে পানশালা বানিয়ে দিয়েছিলেন, জীবনে ফুর্তি ছাড়া কিছু করেননি, যাঁরা সিপিএম ও তৃণমূলের থেকে সব সুবিধা নিয়েছেন, তাঁদের উদ্দেশ্য ছিল বিজেপি যাতে কোনও দিনই চার শতাংশের বেশি ভোট পায় না। সেই সব আহাম্মকদের কথা কে শোনে? আসলে এটা বয়সের দোষ। ৭২ হয়ে গেলে মাথা কাজ করে না।’ যদিও দিলীপের এই আক্রমণের পাল্টা দাবি বা বক্তব্য বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত তথাগবাবুর তরফে থেকে মেলেনি।