নিজস্ব প্রতিনিধি: সপ্তাহের শুরুতেই বড়সড় ধাক্কা দিয়েছে প্রকৃতি। তুরস্ক(Turkey) ও সিরিয়ার(Syria) বুকে ঘটে গিয়েছে ভয়াবহ ভূমিকম্প(Earthquake)। মৃতের সংখ্যা ১৫ হাজার ছাড়িয়ে গিয়েছে। হু(WHO) বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আশঙ্কা মৃতের সংখ্যা ৫০ হাজার ছাড়িয়ে যেতে পারে। কার্যত মৃতের সংখ্যা ঠিক কোথায় গিয়ে থামবে, তা এখনও কেউ বলতে পারছেন না। গোটা পরিস্থিতি দেখে উদ্বিগ্ন ভারতীয় ভূবিজ্ঞানীরাও। কপালের চিন্তার ভাঁজ আরও চওড়া করেছে কেন্দ্রীয় সরকারের তথ্য। প্রশ্ন উঠেছে, তুরস্ক ও সিরিয়ার বুকে এই ভয়াবহ ভূমিকম্পের পরে ভারতবর্ষ(India) কতটা নিরাপদ? কতটাই বা নিরাপদ বাংলা(Bengal) ও কলকাতা(Kolkata)? সরকারি পরিসংখ্যান কিন্তু বলে দিচ্ছে বিপদ শিয়রেই। কেননা গত ডিসেম্বর মাসেই কেন্দ্রের ভূবিজ্ঞান মন্ত্রক জানিয়ে দিয়েছিল, দেশের ৬০ শতাংশ এলাকাই কমবেশি ভূমিকম্পপ্রবণ। সবচেয়ে ভয়াবহ অবস্থা হিমালয় পার্বত্য অঞ্চলের। প্রায় ২ হাজার ৪০০ কিলোমিটার বিস্তৃত এই অঞ্চল একাধিকবার উচ্চ (কম্পনের মাত্রা ৮) থেকে মাঝারি মাত্রার কম্পনের সাক্ষী থেকেছে। অতি বেশি নগরায়ণ ও কংক্রিটের বহুতল গড়ে ওঠায় বিপদ বাড়ছে সল্টলেক, নিউটাউন, রাজারহাট ও পূর্ব কলকাতারও।
আরও পড়ুন অত্যাধুনিক রোবটের সাহায্যে ক্যানসারের সফল অস্ত্রোপচার কলকাতায়
বিজ্ঞানীদের মতে, হিমালয় পর্বতের গঠনকাজ এখনও শেষ হয়নি। কেননা গোটা বিশ্বে হিমালয় সব থেকে নবীন ভঙ্গিল পর্বত। তাই প্রতিনিয়ত ছোট ছোট ভূমিকম্প হয়ে চলেছে সেখানে যা সবসময় ধরাও পড়ে না। নেপালের বুকে ঘটে যাওয়া ভূমিকল্পের পরে হিমালয়ের উচ্চ তা বেড়েছে বলেও তথ্য সামনে এসেছে। আগামীদিনেও এই ধরনের ঘটনা ঘটবে। বাংলার সব থেকে বড় উদ্বেগের বিষয়, দেশের যে সব এলাকায় আগামীদিনে ভয়াবহ ভূমিকম্প হতে পারে বলে মনে করা হচ্ছে তার মধ্যে থাকছে দার্জিলিং সহ উত্তরবঙ্গ ও সুন্দরবন মায় কলকাতারও। দেশের কোন এলাকা কতটা ভূমিকম্পপ্রবণ তার ভিত্তিতে দেশকে পাঁচটি জোনে (সিসমিক জোন) ভাগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। এরমধ্যে পাঁচ নম্বর জোনে থাকা এলাকাগুলিকে অত্যধিক ভূমিকম্পপ্রবণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। তারপর যথাক্রমে চতুর্থ, তৃতীয় ও দ্বিতীয় জোন। অর্থাৎ, দ্বিতীয় জোনে থাকা এলাকাগুলিতে ভূমিকম্পের আশঙ্কা অপেক্ষাকৃত কম বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
আরও পড়ুন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক জিটিএ প্রধান অনিত থাপার
ভূকম্পনবিদরা বিশেষ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন রাজধানী দিল্লি নিয়ে। তাঁদের মতে, রাজধানী ও পার্শ্ববর্তী গুরুগ্রাম অত্যন্ত ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকার মধ্যে পড়ে। কলকাতাও যে সম্পূর্ণ বিপন্মুক্ত নয়, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন তাঁরা। ২০১৫ সালে পুরভোটের দিন মৃদু ভূমিকম্পে কেঁপে উঠেছিল শহর তিলোত্তমা। উত্সস্থল ছিল নেপাল। সেখানে কম্পনের মাত্রা ৭.৮ হলেও সমস্যায় পড়তে হয়নি দেশের সাংস্কৃতিক রাজধানীকে। তবে ধাক্কা জোরদার হলে পরিস্থিতি কী হবে, তা ভেবে আঁতকে উঠছেন অনেকেই। এছাড়া, উত্তরবঙ্গ ও সুন্দরবনও বিপদসীমার মধ্যেই রয়েছে। এর আগে দেখা গিয়েছে নেপাল বা সিকিমের ভূমিকম্প হলে শিলিগুড়িতে কী ভয়াবহ পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে তার নানা নিদর্শন। বিশেষজ্ঞদের দাবি, তুরস্কে যে মাত্রায় ভূমিকম্প হয়েছে সেই ৭.৮ রিখটার স্কেলে ভূমিকম্প যে কোনও দিন হতে পারে নেপাল, সিকিম, অসমের বুকে। সেক্ষেত্রে তার আঁচ বেশ ভাল ভাবেই ছড়িয়ে পড়বে উত্তরবঙ্গের কোচবিহার, আলিপুরদুয়ার, জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং ও উত্তর দিনাজপুর জেলাজুড়ে। আবার একই মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে খাস কলকাতা ও সুন্দরবনের বুকেও। কেন্দ্রের এই তালিকায় তাই বাংলা ও অসমের পাশাপাশি নাম আছে জম্মু ও কাশ্মীর, লাদাখ, হিমাচল প্রদেশ উত্তরখণ্ড মায় বিহার, ওড়িশারও।
আরও পড়ুন সাগরদিঘি উপনির্বাচন: বৃহস্পতিবারই রাজ্যে কেন্দ্রীয় বাহিনী
হিমালয়ের বুকে বড়সড় ভূমিকম্প হলে সব থেকে বেশি বিপদে পড়বে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ও শিলিগুড়ি – এই ৪ শহর। আবার সুন্দরবনে বড়সড় ভূমিকম্প হলে বিপদে পড়বে কলকাতা, সল্টলেক, রাজারহাট, নিউটাউন মায় হাওড়ার মতো শহর। বিশেষজ্ঞরা কিন্তু সতর্ক করছেন বার বার জলাজমি বুজিয়ে বহুতল নির্মাণ বন্ধ হোক বৃহত্তর কলকাতায়। কেননা ভূমিকম্পের তরঙ্গ কাদামাটিতে ঘুরে গুরে শক্তি বাড়িয়ে ধাক্কা মারে ওপরের দিকে যা বহুতল বাড়িকে ধূলিসাৎ করে দেয়।