নিজস্ব প্রতিনিধি: দুর্ঘটনাস্থল থেকে খোলা ছোট ম্যাটাডোর করে বা ট্রাক্টরে করে দেহ আসছে বাহানারা সরকারি স্কুলে। জীবন গড়ার পাঠাশালায় মৃত শরীরের মিছিল। ক্লাসের চেয়ার, টেবিল সরিয়ে শয়ে শয়ে শুইয়ে রাখা হয়েছি দেহ। সেখানেই কেউ এসে দেহ শনাক্ত করছেন, আবার কোনও দেহ শনাক্ত করার কেউ আসছেনও না। কেউ আবার এসেও যাকে খুঁজছেন তাঁকে পাচ্ছেন না। কোন কোন দেহ শনাক্ত করার মতো অবস্থাতেও নেই। সাদা কাপড়ে ঢাকা সার সার শরীর। পিছনে দু’পা অন্তর অন্তর রক্তমাখা দেহ। পরনের কাপড় তালগোল পাকিয়ে রয়েছে, তার ফাঁক দিয়ে বেরিয়ে যাত্রীদের হাতের আঙুল, গোড়ালি। স্কুলের মধ্যেই চলছে ময়নাতদন্তের(Post Mortem) কাজ। যারা দেহ শনাক্ত করছেন তাঁদের হাতে সেই দেহ তুলে দেওয়া হচ্ছে। দেওয়া হচ্ছে Death Certificate-ও। কিন্তু তারপরেও ১৬০টি দেহ এখনও শনাক্ত(Unidentified Bodies) হয়নি। রেলের কর্মীরাই এখন অনেককে অনুরোধ করছেন, ‘কেউ একটু শনাক্ত করে দেবেন’।
আরও পড়ুন ১৯ লক্ষ টাকার ক্ষতিপূরণ, সবাই কী পাবেন! উঠছে প্রশ্ন
ওড়িশার বালেশ্বরের কাছে শুক্র সন্ধ্যায় করমণ্ডল এক্সপ্রেসের দুর্ঘটনায়(Coromondol Express Accident) এখনও পর্যন্ত ২৯৫জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গিয়েছে। সেই দুর্ঘটনায় মৃতদের মধ্যে অনেকেরই পরিচয় এখনও জানা যায়নি। খোঁজ মেলেনি পরিবারের কারও। সেই সমস্ত মৃত আপাতত বালেশ্বর থেকে সরিয়ে ফেলা হচ্ছে। আরও ভাল করে যাতে মৃতদেহ সংরক্ষণ করা যায়, তাই সেগুলিকে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে রাজধানী ভুবনেশ্বরে। তেমনই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ওড়িশা সরকার। বালেশ্বরের চেয়ে ভুবনেশ্বরে মৃতদেহ সংরক্ষণের পরিষেবা তুলনামূলক উন্নত। তাই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ওড়িশার মুখ্যসচিব প্রদীপ কুমার জেনা। তিনি জানান, ‘এখনও পর্যন্ত ১৬০টি মৃতদেহ শনাক্ত করা যায়নি। ১৬০টি মৃতদেহ ভুবনেশ্বরে নিয়ে আসছি আমরা। সেগুলি রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি এবং বেসরকারি হাসপাতালের মর্গে সংরক্ষণ করে রাখা হবে।’ সেই মতো রবি সকাল থেকেই দেহ সরানোর কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন মৃত্যুমিছিল সুন্দরবনে, তবুও পা বাড়িয়ে ভিন রাজ্যের পথে
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ৪২ ঘণ্টা সংরক্ষিত অবস্থায় রাখা থাকবে দেহগুলি। তার মধ্যে পরিচিতদের ভুবনেশ্বরে এসে দেহ শনাক্ত করতে হবে। এই সময়ের মধ্যে যে সমস্ত মৃতদেহ শনাক্ত করা যাবে না, সেগুলি নির্দিষ্ট মেডিকেল পদ্ধতি মেনে সৎকার করে ফেলবে ওড়িশা সরকার। মুখ্যসচিব জানান, দুর্ঘটনার জন্য ভদ্রক এবং বালেশ্বরে ট্রেন চলাচল ব্যাহত হয়েছে। তাই সরাসরি ভুবনেশ্বরে এসে মৃতদের আত্মীয়েরা দেহ শনাক্ত করে যেতে পারেন। দুর্ঘটনাস্থল থেকে যে মৃতদেহগুলি শনাক্ত করা গিয়েছে, সেগুলি ময়নাতদন্তের পর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। যাঁদের চেনা যায়নি, তাঁদের দেহগুলি বালেশ্বরের বাহানগা হাইস্কুল এবং উত্তর ওড়িশা চেম্বার অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির একটি অস্থায়ী মর্গে রাখা হয়েছিল। সেখান থেকেই ভুবনেশ্বরে পাঠানো হবে দেহগুলি। ওড়িশার বিভিন্ন হাসপাতালে এখনও বহু মানুষ চিকিৎসাধীন। অনেককে ছেড়েও দেওয়া হয়েছে।