নিজস্ব প্রতিনিধি: থমকে গেল কন্ঠ। হারিয়ে গেলেন আরও এক নক্ষত্র। ভারত হারাল এক সুরেলা গায়ককে। বুধ সকালেও ঘোর কাটছে না অনেকেরই, সত্যি নেই আর কে কে। যার গান শুনে অনেকে কৈশোর থেকে যৌবনে পা রেখেছে, অনেকে তাঁর যৌবনটা কাটিয়েছে, সেই কে কে(KK) আর নেই। ভাবা যায়। কিন্তু এটাই চরম বাস্তব। কৃষ্ণকুমার কুনাথ ওরফে কে কে আর নেই আমাদের মধ্যে। মাত্র ৫৩ বছর বয়সেই থেমে গেলেন তিনি। আর সেটাও এই কলকাতায়(Kolkata)। তাই তাঁর অকাল প্রয়াণে শোকস্তব্ধ দেশের সঙ্গীতমহলের পাশাপাশি কলকাতাও। কাঁদছে কলকাতা কে কে’র জন্য। একটাই বার্তা শহরের, যেখানেই থাকো ভাল থেকো বন্ধু।
কে কে’র মৃত্যুতে শোকবার্তা দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। বুধ সকালে টুইটে(Tweet) তিনি লিখেছেন, ‘বলিউড প্লেব্যাক গায়ক কে কে’র আকস্মিক এবং অকাল মৃত্যু আমাদের স্তব্ধ ও মর্মাহত করেছে। আমার সহকর্মীরা গতকাল রাত থেকেই তাঁর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে চলেছে, প্রয়োজনীয় সমস্তরকম সহযোগিতা করছে। তাঁর মৃত্যুতে আমি গভীরভাবে শোকাহত।’ কে কে পর পর দুই দিন কলকাতার বুকে লাইভ পরফর্ম করেছেন। প্রথমটি ছিল ৩০ মে বিবেকানন্দ কলেজে। সেদিন থেকেই অসুস্থ বোধ করছিলেন কে কে। গতকাল লাইভ পারফর্ম ছিল নজরুল মঞ্চে। সেই অনুষ্ঠান চলাকালীন সময়েই অসুস্থ বোধ করতে শুরু করে দেন। বার বার বলেন স্পট লাইভ বন্ধ করে দিতে। অনুষ্ঠান শেষে হোটেলে ফেরার সময় বলেছিলেন ঠান্ডা লাগছে। এরপর গ্র্যান্ড হোটেলে ফিরে সেখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়ে যান। রাত সাড়ে ৯টা নাগাদ তাঁকে কলকাতার সিএমআরআই হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানেই তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
জানা গিয়েছে, হোটেলে ফিরে বমি করেছিলেন কে কে। তারপরই চেতনা হারিয়ে পড়ে যান। তাঁর কপালে ও ঠোঁটে আঘাতের চিহ্ন মিলেছে। এদিন সকালে তাঁর দেহের ময়নাতদন্ত হবে এসএসকেএম হাসপাতালে। রাতেই খবর পেয়ে সিএমআরআই হাসপাতালে চলে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস(Arup Bishwash)। রাতেই খবর চলে যায় কে কে’র পরিবারের কাছে। এদিন সকালেই কে কে’র স্ত্রী ও পুত্র কলকাতায় এসে পৌঁছেছেন। একই সঙ্গে কলকাতার নিউমার্কেট থানায় কে কে’র অকাল প্রয়াণে একটি অস্বাভাবিক মামলা রুজুও হয়েছে। তবে এইসবের মাঝে কে কে’র জন্য কাঁদছে কলকাতা। বাঙালি গায়ক অভিজিৎ জানিয়েছেন, ‘প্রাণবন্ত ছেলে। গানপাগল ছেলে। ওকে কেউ কোনও দিন রিয়্যালিটি শো-এ দেখেনি। ও যাবেই না। গান নিয়ে যেখানে রাজনীতি হচ্ছে, সেখান থেকে সরে আসবে। ও গান গেয়ে কিছু হতে চায়নি। ওর গানই ওকে বিশ্বে জনপ্রিয় করেছে। ড্রাম আর পিয়ানো বাজলেই যে শুধু গান হয় না, সেটা কে কে ওর গলার মেজাজ দিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছিল। আমার, উদিত, শানুর পরে আমাদের একমাত্র যোগ্য উত্তরসূরী ছিল কে কে।’
শোকবার্তা দিয়েছেন প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ও। জানিয়েছেন, ‘আমি হতবাক! অবিস্মরণীয় এক কণ্ঠ.. কে কে আমাদের হৃদয়ে থেকে যাবেন চিরকাল। তাঁর পরিবার, বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীদের সমবেদনা জানাই।’ বাবুল সুপ্রিয় জানিয়েছেন, ‘গানের জগতে সবচেয়ে ভাল মানুষদের এক জন, সবচেয়ে সুকণ্ঠী গায়কদেরও এক জন.. কে কে-র এমন আকস্মিক এবং অকালপ্রয়াণ কী অভাবনীয় এবং ভয়ানক বাস্তব! শান্তিতে থেকো বন্ধু।’ সাংসদ ও অভিনেতা দেব জানিয়েছেন, ‘জানি না কী বলা উচিত: শান্তিতে থেকো কে কে..।’ জানা গিয়েছে এদিন ময়নাতদন্তের পরে কে কে’র দেহ নিয়ে তাঁর স্ত্রী ও পুত্র মুম্বইতে ফিরে যাবেন। সেখানেই আগামিকাল তাঁর শেষকৃত্য সম্পন্ন হবে।