নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রে ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার ও তাঁর দলের একটাই লক্ষ্য, যেনতেন প্রকারণে হোক ক্ষমতায় টিকে যাওয়া এবং দেশজুড়ে একটা একদলীয়, একতান্ত্রিক, একনায়কতন্ত্র কায়েম করা। আর সেই লক্ষ্যের পথে অবিরত কাজ করে চলেছে কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন বিজেপি(BJP) সরকার। সংবিধানকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে চেষ্টা করে চলেছে একের পর এক অগণতান্ত্রিক আইন তৈরি করে নিতে ও তা পাশ করিয়ে নিতে। যদিও এই ৯ বছরে তাঁদের বেশ কয়েকবার ধাক্কাও খেতে হয়েছে সুপ্রিম কোর্টে(Supreme Court)। মোদি সরকারের অসাংবিধানিক আইনকে খারিজ করে দিতে বিন্দুমাত্র সময় নেয়নি দেশের সর্বোচ্চ আদালত। তাই বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও(Mamata Banerjee) কাতর আবেদন জানালেন দেশের সর্বোচ্চ আদালতের কাছে ‘My lord, save our country’। নেপথ্যে, জাতীয় নির্বাচন কমিশনের মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির কোনও ভূমিকা না থাকার বিষয়টি।
আরও পড়ুন সুপ্রিম রায়ে বাংলার ১৬ হাজার ৫০০ শিক্ষকের চাকরির ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন
রাজ্যসভায় পেশ করা হয়েছে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচম কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিল। এই বিলে অনুযায়ী, এবার থেকে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রধান বিচারপতির কোনও ভূমিকা থাকবে না। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন গঠিত প্যানেলের সুপারিশ রাষ্ট্রপতির কাছে অনুমোদনের জন্য পাঠানো হবে। ফলে প্রধান বিচারপতির ভূমিকায় রাশ পড়তে চলেছে। শনিবার তা নিয়েই ট্যুইটে(Tweet) সরব হয়েছে বাংলার মুখ্যমন্ত্রী। তিনি এদিন লিখেছেন, ‘জাতীয় নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগের ক্ষেত্রে দেশের প্রধান বিচারপতির ভূমিকা যথেষ্ঠ গুরুত্বপূর্ণ। অথচ সেই কমিটিতেই কমিটিতে দেশের প্রধান বিচারপতির বদলে একজন কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে রাখা হয়েছে। আমি এর তীব্র প্রতিবাদ করছি। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রমাণ করছে ভোটে কারচুপি যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় তা জন্যই এই ব্যবস্থা। ‘বিচার ব্যবস্থা নয়, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার নৈরাজ্যের কাছে মাথা নত করেছে। বিচার বিভাগের প্রতি এই নির্লজ্জ অবহেলা নিয়ে গোটা ভারতের উচিত প্রশ্ন তোলা। কেন্দ্র সরকার কি বিচার বিভাগকে মন্ত্রী-চালিত ক্যাঙ্গারু আদালতে পরিণত করতে চাইছে? বিচার ব্যবস্থার কাছে তাই কাতর আর্জি জানাচ্ছি। মাই লর্ড, আমাদের দেশকে বাঁচান।’
আরও পড়ুন ফৌজদারি মামলায় জড়িতের পাসপোর্ট পেতে বাধা নেই, রায় হাইকোর্টের
প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং অন্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ সংক্রান্ত বিল ২০২৩-এ সরকার ও বিচার বিভাগের মধ্যে নতুন করে বিরোধ তৈরি করেছে। প্রধানমন্ত্রী নেতৃত্বাধীন প্যানেলে স্থান পাবেন বিরোধী দলনেতা সহ আরও পাঁচ সদস্য। এমনটাই উল্লেখ করা হয়েছে প্রস্তাবিত বিলে। যদিও মুখ্য নির্বাচন কমিশনার সহ অন্য কমিশনারদের নিয়োগ নিয়ে চলতি বছরের মে মাসে একটি রায় দেয় সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ। সেই রায়ে বলা হয়, নির্বাচন কমিশনের আধিকারিকদের নিয়োগ ক্ষেত্রে তিন সদস্যের কমিটির সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত। প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও দেশের প্রধান বিচারপতি এবং বিরোধী দলনেতাকে নিয়ে কমিটি গঠন করতে হবে বলে একটি মামলার পর্যবেক্ষণে জানানো হয়। ফলে আশঙ্কা করা হচ্ছে, নতুন এই আইন প্রণয়ন হলে শীর্ষ আদালতের এই নিয়ম আদৌ বলবৎ থাকবে কি না। প্রস্তাবিত বিলে আরও বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বাধীন কমিটিতে কারা সদস্য হবেন, তা ঠিক করতে গঠন করা হবে একটি সার্চ কমিটি। কেন্দ্রীয় সরকারের তিনজন সচিবকে নিয়ে এই কমিটি গঠন করা হবে। এখন দেখার বিষয় কেন্দ্রের এই আইনকে সুপ্রিম কোর্ট মুখ বুজে মেনে নেয় কিনা। সাংবিধান বেঞ্চের রায়কে অগ্রাহ্য করে কেন্দ্রের প্রনীত আইন বহাল থাকে কিনা সেটাই দেখার।