নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার লোকশিল্প-হস্তশিল্প-কুটিরশিল্প, তিনের সুষম সমন্বয়ে এবার তৈরি হয়েছে কলকাতার(Kolkata) সুরুচি সঙ্ঘের(Suruchi Sangha) মণ্ডপ। ভার্চুয়ালি সেই পুজোর(Durga Puja) উদ্বোধনও করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। এরপরেই ওই পুজোর সঙ্গে যুক্ত রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে(Arup Bishwas) তিনি নির্দেশ দেন পুজোর জন্য নির্মিত মণ্ডপ ও প্রতিমা যেন সংরক্ষণ করা হয়। স্পেনে সরকারি সফরে গিয়ে এই পুজোর জন্যই গান লিখে, সুর দিয়ে, নিজেই গেয়ে পাঠিয়ে দিয়েছিলেন। সেই হিসাবে এবার সুরুচি সঙ্ঘের থিম সঙের গীতিকার ও সুরকার বাংলার মুখ্যমন্ত্রীই। যদিও পরবর্তীকালে সুরুচির থিম সঙ ‘মা, তোর একই অঙ্গে এত রূপ’ গানটি তৃষা পারুইকে দিয়ে গাওয়ানো হয়। এবছর বাংলার নানা জেলার লোকশিল্প, হস্তশিল্পের মধ্যে যে বর্ণময় বৈচিত্র রয়েছে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে সুরুচির বুকে। প্রায় তিনমাস ধরে কাজ করেছেন গ্রামবাংলার শতাধিক গুণী হস্তশিল্পীরা থিম শিল্পী গৌরাঙ্গ কুইল্যার(Gouranga Kuilya) নির্দেশ কাজ করেছেন। বাঁশ-বেত, গুলঞ্চ লতা, কাপড়-সুতো দিয়ে যেমন মণ্ডপ গড়ে তোলা হয়েছে তেমনি গ্রামবাংলার জনপ্রিয় ঢ্যাপা পুতুলের আদলে মাতৃমূর্তি গড়ে তোলা হয়েছে।
মণ্ডপে ঢোকার মুখেই দর্শনার্থীদের স্বাগত জানাবে বাঁকুড়ার পাঁচমুড়ার বিশালাকার বর্ণময় টেরাকোটা ঘোড়া, বর্ধমানের নতুন গ্রামের কাঠের পুতুল এবং বীরভূমের চদর বদর শিল্প। মণ্ডপসজ্জায় ব্যবহৃত হয়েছে পুরুলিয়ার আউশ ধানের শীষ, সবং গ্রামের খাগড়াকাঠি, উত্তর ২৪ পরগনার মাছ ধরার পলো। দেওয়ালে ভিতরে শোলা ও লতার নানা উপকরণে শ্বেতশুভ্র অজস্র মালার খেলা। ঢোকরা ধাঁচের তাম্রবর্ণের সনাতনী মাতৃপ্রতিমা দেখতে ঢুকেই প্রতিমা দর্শনার্থীদের চোখ চলে যাবে মণ্ডপের ছাদে। কাপড় কেটে কেটে তৈরি নানা রঙের পটচিত্র ও পুরুলিয়ার জুন ঘাসে বোনা ঝাড়বাতি ও ঝাড়গ্রামের পাঁচি গামছার শিল্পসৌকর্যে বিস্ময়াবিষ্ট হবেনই দর্শকরা।তাৎপর্যপূর্ণ হল, কাপড়ে সুতোর বুননে মুগ্ধ করা ‘সিলুয়েট’ শিল্পসৃষ্টিতে ফুটে উঠেছে নেতাজি, রবীন্দ্রনাথ, সত্যজিৎ রায়, মহানায়ক উত্তম কুমার থেকে বাউল ও ছৌশিল্প। মূল দেবী মূর্তির ডানদিকে দু’টি বিশাল তালপাতার পাখা ‘মা’-কে হাওয়া দিতেও দেখা যাবে।
বনেদিয়ানার এমন পুরাতনী দৃশ্য দেখে মুগ্ধ মুখ্যমন্ত্রী অরূপের উদ্দেশে জানিয়ে দেন, ‘শহরে পুজো দেখতে আসা বিদেশি পর্যটক ও ইউনেস্কোর প্রতিনিধিরা এলে এই তালপাতার পাখায় হাওয়া দেবে। মাটির ভাঁড়ে চা খাওয়াবে। বাইরের পুতুলগুলি ও প্রতিমা সংরক্ষণ করবে। পুজো হয়ে গেলে আমায় দুটো পাখা দিয়ে যাবে।’’ মণ্ডপ থেকে বাইরে এলেই সার দিয়ে দাঁড়ানো আদিবাসীদের মূর্তি। অভিনবত্ব হল, মূর্তিগুলির হাত নড়বে গানের তালে তালে। সুরুচির এবারের আরেক বার্তা, প্লাস্টিক বর্জন। একথা জানিয়ে অরূপের দাবি, ‘কম বাজেটে পরিবেশবান্ধব প্রাকৃতিক সামগ্রীতে তৈরি মণ্ডপে বাংলার হস্তশিল্পীদের শ্রেষ্ঠত্বকে প্রকাশ করেছে।’