নিজস্ব প্রতিনিধি: আপনি গ্রামে থাকুন কি শহরে, এবার থেকে বাড়িতে বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে বড়সড় পদক্ষেপ করতে চলেছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) সরকার। সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, এবার থেকে আর একটি বাড়িতে একাধিক জলের সংযোগ(Water Connection) দেওয়া হবে না। বাড়ির ইলেক্ট্রিক মিটার(Electric Meter) যার নামে আছে তার নামেই একটি জলের সংযোগ দেওয়া হবে। নবান্ন সূত্রে তেমনটাই জানা গিয়েছে। মূলত গ্রামীণ এলাকায়(Rural Bengal) একটি বাড়িতে একাধিক জলের সংযোগ আটকাতেই এই নিয়ম চালু হচ্ছে বলে সূত্রের খবর। বাড়ি বাড়ি সংযোগ দেওয়ার পাশাপাশি জলের গুণগত মান এবং প্রতিটি বাড়িতে পর্যাপ্ত জল যাচ্ছে কি না, সেটাও নিশ্চিত করতে এই পদক্ষেপ করা হচ্ছে বলে জানা গিয়েছে। তবে আগামী দিনে এই ব্যবস্থা রাজ্যের সব পুরসভা(Municipalities) ও পুরনিগম(Municipal Corporations) এলাকাতেও করা হবে বলে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন ‘পান্নালালের ছেলে নন্দলাল’কে ভোট সন্ত্রাসের জবাব দিলেন মমতা
বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জল দেওয়ার লক্ষ্যে কাজ করে চলেছে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর(PHE Department)। সেই দফতরেরই নজরে এসেছে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার পাশাপাশি শহরের বুকেও অনেক জায়গাতেই একটি বাড়িতে ছোট ছোট ঘরে একাধিক পরিবার বাস করে। সকলেই নিজেদের জন্য পৃথক পৃথক পানীয় জলের সংযোগ পাওয়ার চেষ্টা করে। এতে জলের অপচয় বাড়ে। খরচও বাড়ে সরকারের। আবার একটি বাড়িতে একাধিক সংযোগ থাকলে সেই এলাকার অন্যান্য বাড়িতে জলের জোগান কমে যাওয়ার ঘটনাও চোখে পড়েছে। গোটা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর গোচরে আনা হয়। তারপরেই রাজ্য সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবার থেকে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকায় বাড়ি বাড়ি পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার ক্ষেত্রে যার নামে ইলেকট্রিক মিটার, তার নামেই জলের সংযোগ দেওয়া হবে। সেই মর্মে রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের তরফে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ পাঠিয়ে দেওয়াও হয়েছে। সঙ্গে এটাও বলে দেওয়া হয়েছে, যার নামে ইলেক্ট্রিক মিটার তাঁকে নথি দেখাতে হবে এবং সেই নথি অনুযায়ী জলের সংযোগ দেওয়া হবে।
আরও পড়ুন বিধানসভায় দাঁড়িয়ে মোদি ও বিজেপিকে নিশানা মমতার
এখনও পর্যন্ত রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার ৩৪.৪২ শতাংশ বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জল দেওয়া সম্ভব হয়েছে। সংখ্যার হিসাবে সেটা ৬৩.৫২ লক্ষ। কিন্তু রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার প্রতিটি বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জলে পৌঁছে দেওয়ার কাজ এখনও ৬৫ শতাংশের মতো বাকি যা শেষ করার টার্গেট রয়েছে ২০২৪ সালের মধ্যে। তবে অন্যান্য রাজ্যের তুলনায় দু’বছর পর বাংলায় এই প্রকল্প চালু হওয়ায়, ২০২৪ সালের মধ্যে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন সম্ভব নয় বলেই মনে করছেন রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের আধিকারিকেরা। তাঁদের ধারনা, ২০২৪ সালের মধ্যে রাজ্যের গ্রামীণ এলাকার মোট বাড়ির ৮০ শতাংশে সংযোগ দেওয়ার কাজ শেষ করা সম্ভব হবে। বাকি কাজ ২০২৫ সালের মধ্যেই শেষ হয়ে যাবে।
আরও পড়ুন মমতার সরকারে দায়িত্ব বাড়ল ইন্দ্রনীলের, কদর সায়ন্তিকারও
উল্লেখ্য, গ্রাম বাংলায় বাড়ি বাড়ি পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে যে কাজ চলছে সেখানে কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়ই সমান পরিমাণ অর্থ খরচ করছে। অর্থাৎ রাজ্য দিচ্ছে প্রকল্পের ৫০ শতাংশ অর্থ এবং বাকি অর্থ দিচ্ছে কেন্দ্র সরকার। মোট ৫৮ হাজার কোটি টাকার এই প্রকল্পে এখনও পর্যন্ত খরচ হয়েছে প্রায় সাড়ে ১২ হাজার কোটি টাকা। কাজে গতি বাড়িয়ে, চলতি অর্থবর্ষেই মোট খরচ অন্তত ২৭ থেকে ৩০ হাজার কোটি টাকায় নিয়ে যাওয়ার টার্গেট নেওয়া হয়েছে বলে সূত্রের খবর। এখনও পর্যন্ত নদিয়া এবং বাঁকুড়া জেলায় সবচেয়ে বেশি বাড়িতে পানীয় জলের সংযোগ দেওয়ার কাজ শেষ হয়েছে। নদিয়া জেলায় ৬৪.৬ শতাংশ বাড়িতে এবং বাঁকুড়া জেলায় ৪৮.৬৬ শতাংশ বাড়িতে পরিস্রুত পানীয় জলের সংযোগ পৌছে দেওয়া সম্ভব হয়েছে। ২৫ শতাংশের কম বাড়িতে জলের সংযোগ পৌঁছেছে পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর, উত্তর দিনাজপুর, দক্ষিণ ২৪ পরগনা এবং মালদা জেলায়।