নিজস্ব প্রতিনিধি: ৩ দফা দাবিকে সামনে রেখে বুধবার থেকে আন্দোলন শুরু করেছেন দক্ষিণবঙ্গ রাষ্ট্রীয় পরিবহণ নিগম(SBSTC) বা এসবিএসটিসি’র অস্থায়ী কর্মীরা। তাঁদের মূল দাবি, নিগমের অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করতে হবে। সেই সঙ্গে সমকাজে সমবেতন ও ছুটির সুযোগসুবিধা দিতে হবে। পুরুলিয়া, বাঁকুড়া, দিঘা, আসানসোল, দুর্গাপুর, সিউড়ি, বর্ধমান, বহরমপুর সহ দক্ষিণবঙ্গের জেলায় জেলায় ছড়িয়ে থাকা প্রতিটি ডিপোতে এই অস্থায়ী কর্মীরা আন্দোলন শুরু করায় সংস্থার বাস পরিষেবা কার্যত থমকে গিয়েছে। এই অবস্থায় সমস্যার সমাধান করতে রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী(Snehasish Chakrabarty) আন্দোলনকারীদের এক বৈঠকে ডেকেছিলেন এদিন অর্থাৎ শুক্রবারে। কিন্তু সেই বৈঠকে সমস্যার সমাধান তো হয়ইনি, উল্টে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়(Ritabrata Banerjee) জানিয়ে দিলেন এই অচলাবস্থা ও আন্দোলনের সঙ্গে আইএনটিটিইউসি’র(INTTUC) কোনও যোগই নেই। ফলে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগমের অচলাবস্থা চট করে মেটার কোনও দিশা দেখাই যাচ্ছে না।
গত কয়েকদিন ধরে দক্ষিণবঙ্গের প্রায় সমস্ত বাস ডিপোর পরিষেবা বন্ধ হয়ে রয়েছে চুক্তিকর্মীদের আন্দোলনের জেরে। দূরপাল্লার বিভিন্ন রুটের বাস বন্ধ হয়ে রয়েছে। পুজোর মুখে সাধারণ মানুষের এই হয়রানির কথা মাথায় রেখে বাস পরিষেবা যাতে বিঘ্নিত না হয়, তার জন্য আন্দোলনকারী কর্মীদের কাছে আহ্বান জানান মন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী। সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে এবং আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে উঠে আসা দাবিগুলি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার লক্ষ্যে পরিবহণ দফতরে তৃণমূল শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভাপতি ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে নেতৃবৃন্দকে বৃহস্পতিবার ডেকে পাঠান মন্ত্রী। শুক্রবারও জরুরি বৈঠক বসে। কিন্তু, কোনও বৈঠকেই সমাধানসূত্র বেরয়নি। সমস্যা যে তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই রয়ে গিয়েছে। উল্টে ঋতব্রত জানিয়ে দিয়েছেন, এই আন্দোলনের সঙ্গে তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন বা আইএনটিটিইউসির কোনও সম্পর্ক নেই। যারা তৃণমূল কংগ্রেসের নাম করে আন্দোলন করছে তারা অনৈতিকভাবে এটা করছে। দাবিদাওয়া থাকলে তা নিয়ে আলোচনার মাধ্যমে পথ অবশ্যই খোঁজা যেতে পারে। কিন্তু কখনোই অনৈতিকভাবে তৃণমূল কংগ্রেসের শ্রমিক সংগঠনের ব্যানার ব্যবহার করা উচিত হচ্ছে না বলে জানান তিনি।
ঋতব্রত এই কথা বললেও প্রায় সর্বত্রই দেখা যাচ্ছে নিগমের আন্দোলনকারী অস্থায়ী শ্রমিকেরা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি’র পতাকা ও ব্যানার নিয়েই আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন। তাঁরা নিজেদের সংগঠনের সদস্য বলেই পরিচয় দিচ্ছেন। এমনকি কয়েকজন এই মর্মে নথিও তুলে ধরেছেন সংবাদমাধ্যমের সামনে। গতকাল অর্থাৎ বৃহস্পতিবার রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগমের চেয়ারম্যান সহ আইএনটিটিইউসির নেতৃবৃন্দকে দায়িত্ব দেন চুক্তিভিত্তিক কর্মচারীদের সঙ্গে সরকারপক্ষের যে চুক্তি রয়েছে, তার ভিত্তিতেই সমাধানের পথ খুঁজে বের করার। তাঁর সেই নির্দেশ মেনেই শুক্রবার কলকাতার এইচআরবিসি ভবনে আন্দোলনকারী কর্মীদের প্রতিনিধিদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন পরিবহণ সংস্থার চেয়ারম্যান সুভাষ মণ্ডল। সঙ্গে ছিলেন আইএনটিটিইউসির নেতারা। সেই বৈঠক শেষে সুভাষবাবু সংবাদমাধ্যমকে জানান, ‘এদিনের আলোচনা অনেকটাই ফলপ্রসূ হয়েছে। রাজ্য সরকারের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করে কালীপুজোর পর এ বিষয়টি নিয়ে ফের আলোচনায় বসা হবে এবং চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। থমকে যাওয়া পরিবহণ ব্যবস্থা স্বাভাবিক করে তোলার অনুরোধও বিক্ষোভকারীদের করা হয়েছে।’
কিন্তু বিক্ষোভকারীদের প্রতিনিধি হিসাবে বৈঠকে যোগ দেওয়া এসবিএসটিসি’র দিঘা ডিপোর আইএনটিটিইউসির সম্পাদক রঞ্জন প্রধান আবার সংবাদমাধ্যমের সামনেই সাফ জানিয়ে দেন, ‘এদিনের আলোচনা মোটেই ফলপ্রসূ হয়নি। কর্মবিরতি যেমন চলছে, তেমনই চালিয়ে যাওয়া হবে। বাস চলাচল বন্ধ থাকা এবং যাত্রী হয়রানির জন্য আমরা কেউ দায়ী নন। আমাদের দাবি প্রতিমাসে ২৬ দিনের কাজ এবং সরকারি নিয়মে বেতন বৃদ্ধি। এই দুটি বিষয় চেয়ারম্যান সহ ম্যানেজমেন্ট এখনও মেনে নেয়নি। এটি দুর্ভাগ্যজনক।’ স্বাভাবিক ভাবেই খুব সহজে দক্ষিণবঙ্গ পরিবহণ নিগমের অচলাবস্থা যে ঘুচতে চলেছে এমন কথা জোর গলায় কেউই বলতে পারবে না।
