নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) বুকে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ(RSS) বা আরএসএস’র নিজস্ব পত্রিকাটির নাম ‘স্বস্তিকা’(Swastika)। সেই পত্রিকার ৭৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে কলকাতায় এসেছেন আরএসএসের চালক মোহন ভাগবত। এদিন অর্থাৎ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বেলুড়ে ‘স্বস্তিকা’-র একটি অনুষ্ঠানে হাজির থাকার কথা ভাগবতের। ঘটনাচক্রে কিছুদিন আগে ‘স্বস্তিকা’য় এমন একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে যা পড়লে যে কেউ বলবে তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) সর্বভারতীয় সাধারন সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) পাশে দাঁড়িয়েছে সঙ্ঘ এবং তাঁদের আক্রমণের নিশানায় উঠে এসেছেন বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী(Suvendu Adhikari)। আর সেই লেখা নিয়েই এখন তুমুল আলোড়ন পড়ে গিয়েছে বাংলার পদ্মশিবিরে(BJP)।
কী লেখা আছে সেই নিবন্ধে? সেপ্টেম্বরের শেষে প্রকাশিত সঙ্ঘের পত্রিকা ‘স্বস্তিকা’-র ওই নিবন্ধের নামই দেওয়া হয়েছে ‘অভিষেক আটক ইন্দ্রিয়সুখ না রাজনৈতিক প্রয়োজন? অবোধের গোবধে আনন্দ’। নিবন্ধে লেখা হয়েছে, ‘সন্দেহ নেই অভিষেকবাবুর গ্রেফতার বা আটক এই মুহূর্তে রাজ্যের সবচাইতে আলোচিত বিষয়। অনেকের কাছে মূল সমস্যা, অভিষেক কেন জেলের বাইরে? এটা অবান্তর চিন্তা। তদন্তকারীদের মতে গ্রেফতার তদন্তের একটি অংশ। পুরো তদন্ত নয়। মনে হয় এই একমুখী ভাবনা এখানকার বিরোধীদের সত্য থেকে বিচ্ছিন্ন করে রাখছে। অনেকের কাছে অভিষেকবাবুর যেন-তেন প্রকার আটক ইন্দ্রিয়সুখের শামিল। কেন তিনি আটক হবেন, নির্দিষ্ট ভাবে তাঁরা জানেন না। বিষয়টি তদন্তকারী সংস্থাগুলির আওতাধীন। এটা কেবল তাঁদের ইচ্ছা। অভিষেকের বিরুদ্ধে কিছু ‘অসংলগ্ন উল্লেখ’ ছাড়া খাতায়কলমে কোনও অভিযোগ নেই। অথচ রাজ্য জুড়ে সারা দিন কীর্তনের মতো বেজে চলেছে— পিসি-ভাইপো চোর। ইডি, সিবিআই নিয়ে বিরোধী নেতা শুভেন্দু অধিকারীর হতাশাকে তাই মান্যতা দিতেই হবে। তার মানে এই নয় যে, তদন্তকারীরা তদন্ত বন্ধ করে দিয়েছেন বা উঁচুতলার রাজনৈতিক চাপে ভেঙে পড়েছেন। এ সব আজগুবি তত্ত্ব? অন্য নাম সেটিং। মনে হয় আটক বা গ্রেফতারির উপর বেশি গুরুত্ব না দেওয়াটাই রাজনৈতিক ভাবে অনেক বেশি সমীচীন।’
বস্তুত নিয়োগ দুর্নীতি থেকে নানা পাচার মামলায় যতবারই বিজেপি বা বিরোধীদের তরফ থেকে কালিঘাটের দিকে আঙুল তোলা হয়েছে ততবারই এই বিষয়ে নীরব থেকেছে সঙ্ঘ। এই প্রথম তাঁরা নিরাবতা ভেঙে কিছু লিখলো বা বললো। আর সেটাও তৃণমূলের স্বপক্ষে, বিজেপির বিপক্ষে। অভিষেকের পক্ষে এবং শুভেন্দুর বিপক্ষে। আসলে সঙ্ঘ ও বিজেপির মধ্যে একটা অদ্ভূত বৈপরিত্য লক্ষ্য করা যাচ্ছে নরেন্দ্র মোদির জমানায়। মোদিকে কখনই সঙ্ঘ ভজনা করতে দেখা যায় না। তিনি নিজেকেই তুলে ধরতে ব্যস্ত। সঙ্ঘের সেখানে কোনও জায়গা নেই। মোদি জমানায় বিজেপি যে পথে এগোচ্ছে সেই পথেও সঙ্ঘের সব বিষয়ে সহমত নেই। অন্তত সূত্র তেমনটাই জানিয়ে আসছে। যে লেখা নিয়ে এখন বিতর্ক বেঁধেছে, সেই লেখা নিয়ে ‘স্বস্তিকা’ কর্তৃপক্ষ সাফ জানিয়ে দিচ্ছে, স্বস্তিকায় যে কোনও লেখার ক্ষেত্রে লেখকের মতামতের স্বাধীনতা থাকে। সেই মতোই লেখক লিখেছেন। এর সঙ্গে কোনও তদন্তকে প্রভাবিত করা বা দুর্নীতিকে সমর্থন করার প্রশ্ন নেই। কিন্তু এটাও তো ঠিক, কর্তৃপক্ষের পূর্ণ সমর্থন বিনা এই লেখা প্রকাশিতও হতো না। আসলে এটাই রাজনীতি। যত না পর্দার সামনে, তার অনেক বেশি পর্দার পিছনে।