নিজস্ব প্রতিনিধি: শনিবার কলকাতায়(Kolkata) এলেন কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন প্রতিমন্ত্রী সাধ্ববী নিরঞ্জন জ্যোতি(Union Minister of State for Rural Development Sadhvi Niranjan Jyoti)। সেই নিরঞ্জন, দিল্লির কৃষি ভবনে যাঁর দফতরে গিয়ে গত মঙ্গলবার কয়েক ঘণ্টা বসে থেকেও ‘দেখা পাননি’ অভিষেকরা। নিরঞ্জন কলকাতায় পৌঁছনোর আগেই অবশ্য বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) সভাপতি সুকান্ত মজুমদার তৃণমূলের(TMC) উদ্দেশে খোলা ‘প্রস্তাব’ দিয়েছিলেন। বলেছিলেন রাজ্যের শাসকদল চাইলে বিজেপি পার্টি অফিসে গিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর হাতে দাবি সনদ তুলে দিতে পারে। পদ্মের সেই প্রস্তাব পত্রপাঠ উড়িয়ে দিয়ে তৃণমূল পাল্টা দাবি তোলে, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী অভিষেকের ধর্নামঞ্চে এসে ক্ষমা চেয়ে যান। যদিও এদিন নিরঞ্জন জানিয়েছেন, ক্ষমা চাওয়ার কোনও প্রশ্নই নেই। কিন্তু তৃণমূল চাইলে কলকাতার যেখানে বলবে সেখানেই তিনি আলোচনায় বসতে প্রস্তুত।
এদিন সকালে রাজ্য তৃণমূলের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক তথা দলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ জানান, ‘কেন্দ্রীয় মন্ত্রীই অভিষেকের ধর্নায় আসুন। এসে বাংলার মানুষের কাছে ক্ষমা চেয়ে যান। ওই মন্ত্রী অভিষেকের ধর্নামঞ্চে এসে হাতজোড় করে বলুন, সে দিন তিনি মিথ্যে কথা বলেছিলেন। সময় দিয়েও তৃণমূলের প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেননি। তার পর জোর করে পুলিশ দিয়ে নির্যাতন করে তিনি অন্যায় করেছিলেন এবং তাঁর দলও অন্যায় করেছিল। সেই সঙ্গে এ-ও বলে যান, ১০০ দিনের কাজ ও আবাস যোজনায় বাংলার সমস্ত বকেয়া টাকা কেন্দ্রীয় সরকার দিয়ে দেবে।’ যদিও পরে কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী কলকাতায় পা রাখার পরে তাঁকে স্বাগত বার্তাই দিয়েছে তৃণমূল। এদিন বেলা ১১.৩০ নাগাদ দমদম বিমানবন্দরে এসে পৌঁছন নিরঞ্জন। সেখান থেকে তিনি সল্টলেকের বিজেপি কার্যালয়ে গিয়ে সাংবাদিক বৈঠক করেন। সেখানে হাজির ছিলেন বঙ্গ বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ও বাংলার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী।
এদিন সেই বৈঠকেই তিনি জানান, ‘আমি সব তথ্য নিয়ে এসেছি। কলকাতার যেখানে খুশি বসে তৃণমূলের সঙ্গে কথা বলতে পারি। দরকারে রাজ্যে পঞ্চায়েত দফতরেও বৈঠক হতে পারে। কিন্তু তৃণমূল বসবে না। ওরা কথা বলতে চায় না। ওরা নাটক চালিয়ে যেতে চায়। গত মঙ্গলবার কৃষি ভবন থেকে আমি মোটেও পালিয়ে যাইনি। তৃণমূলের জন্য আড়াই ঘণ্টা অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্তু তৃণমূল কথাই বলতে চায়নি। বদলে নাটক করেছে। আমি শুনলাম তৃণমূলের এমপি মহুয়া মৈত্র বলেছেন আমি নাকি সেদিন পালিয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু আমি প্রতিদিন কৃষি ভবনের ৪ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকি এবং বার হই। সে দিনও তা-ই করেছিলাম। পিছনের কোনও দরজাই তো নেই। পালিয়ে যাওয়ার প্রশ্নও নেই। মহুয়া(Mohua Moitra) অসত্য কথা বলছেন। ওদের আমার সঙ্গে দেখা করার ইচ্ছাই ছিল না। ওরা ‘তামাশা’ করতে গিয়েছিল। ওরা শুরুতে জানতে চেয়েছিল, কতজন দেখা করতে পারেন? আমি বললাম ৫ জন আসুন। ওরা বলল, ১০ জন আসব। আমি বললাম, তাই আসুন। কিন্তু এর পর ওরা বলে, আমরা সাধারণ জনগণকে সঙ্গে আনব। আমি বলেছিলাম, সরকার যেহেতু অভিযোগ করছে, তাই সরকারি স্তরে কথা হবে। সাধারণ মানুষের সঙ্গে আমি পরে আলাদা করে কথা বলে নেব। ওরা আসলে তৃণমূলের কর্মী। সাধারণ মানুষ নয়। তা সত্ত্বেও ওরা কেউ দেখা করতে আসেনি।’
এদিনের সাংবাদিক বৈঠক থেকে নিরঞ্জন এই দাবিও করেন যে, ২০১৯, ২০২০, ২০২১, ২০২২ সালে পর পর কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়নমন্ত্রক চিঠি দিয়েছিল রাজ্য সরকারকে। সেই চিঠিতে বলা হয়েছিল, হুগলি, পূর্ব বর্ধমান-সহ বিভিন্ন জেলায় ১০০ দিনের কাজে অনিয়ম হচ্ছে। আপনারা ব্যবস্থা নিন। কিন্তু রাজ্য সরকার নির্বিকার থেকেছে। বলেন, ‘২০০৫ সালের যে রেগার আইন, তাতে কেন্দ্রীয় সরকারের অধিকার রয়েছে টাকা আটকানোর। বেআইনি কিচ্ছু হয়নি। ওরা জানে কোর্টে গেলেই আদালত সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেবে। তাই যাচ্ছে না। ইউপিএ সরকারের ন’বছরে ১০০ দিনের কাজে বাংলা পেয়েছিল ১৮ হাজার কোটি টাকা। নরেন্দ্র মোদীর শাসনের ন’বছরে বাংলা পেয়েছে ৫৪ হাজার কোটি টাকা। বাংলার সঙ্গে যদি কেন্দ্রীয় সরকার সেই মানসিকতা নিয়ে চলত, তাহলে কি এত টাকা রাজ্যে আসত? চ্যালেঞ্জ দিচ্ছি তৃণমূল যেখানে চাইবে এই কলকাতায় আমি আলোচনায় বসতে রাজি আছি। সব তথ্য নিয়ে এসেছি।’