নিজস্ব প্রতিনিধি: নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে যত দিন গড়াচ্ছে ততই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের হাতে গ্রেফতার হওয়া মানুষের সংখ্যাও ক্রমশ বেড়ে চলেছে। সেই তালিকায় নবতম সংযুক্তি হুগলির(Hogghly) তৃণমূল(TMC) নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়(Shantanu Banerjee)। তিনি গ্রেফতার হওয়ার পরেই সামনে এসেছে তাঁর বিপুল সম্পত্তি। এখনও পর্যন্ত সেই সব সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে হোটেল, বিলাসবহুল রিসর্ট, একাধিক ফ্ল্যাট, পেল্লাই বাড়ি, বহুমূল্য গাড়িও। এরই মধ্যে শান্তনু আদালত চত্বরে সংবাদমাধ্যমের সামনে দাবি করেছে, ‘জেলে যারা রয়েছে তাঁরা আমাকে ফাঁসিয়ে দিচ্ছে। আমার কোনও দোষ নেই। আমার সব সম্পত্তি বৈধ।’ আর শান্তনুর এই দাবি ঘিরেই প্রশ্ন উঠে গিয়েছে নানান মহলে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা যখন নিশ্চিত নিয়োগ দুর্নীতির টাকাতেই শান্তনুর এই বিপুল সম্পত্তি, সেখানে শান্তনু কীভাবে দাবি করছে তাঁর সব সম্পত্তি বৈধ! আর এই সবের মাঝেই সামনে এসেছে শান্তনুর বালির ব্যবসার(Sand Buisness) তথ্য। এখন অনেকে মনে করছেন এই বালির ব্যবসার মাধ্যমেই হয়তো শান্তনু এই বিপুল সম্পত্তি বানিয়েছে।
আরও পড়ুন ১০৯৪ কোটি টাকায় জলপ্রকল্প গড়ছে মমতার সরকার
জানা যাচ্ছে, ২০১৪ সালে হুগলি জেলার তৃণমূল যুব সভাপতি হওয়ার পর থেকেই শান্তনুর রকেটসম উত্থান। তখন থেকেই জেলার বালি খাদানগুলির সিংহভাগ নিয়ন্ত্রণ চলে যেতে শুরু করে তাঁর হাতে। এমনকী, আরামবাগ মহকুমার বিভিন্ন বালি খাদানেও কার্যত তাঁরই রাজত্ব চলত বলে স্থানীয় সূত্রে দাবি। আরামবাগ মহকুমার ওপর দিয়ে বয়ে গিয়েছে ৩টি নদ-নদী। দামোদর, দ্বারকেশ্বর এবং মুণ্ডেশ্বরী। এখন সামনে আসছে, একসময় পুরশুড়ার মারকুণ্ডা, করঞ্জাতলা, শ্রীরামপুর ও খানাকুলের মুণ্ডেশ্বরী এবং দামোদর নদের দুই পাড়ের বেশ কিছু অবৈধ খাদানের নিয়ন্ত্রণ ছিল বর্ধমানের তিন বালি মাফিয়ার হাতে। পুরশুড়া ও বর্ধমানের জামালপুরের সংযোগস্থল এলাকায় বালি তুলে পাচার করা হতো। তৃণমূলের পদ পেয়েই শান্তনু কিছুদিনের মধ্যে ওই তিন মাফিয়াকে উত্খাত করেন। এই সব বালি খাদান থেকে প্রতিদিন প্রায় ৩০ লক্ষ টাকার বালি ওঠে এক একটি মরশুমে। সেই বালি বিক্রি করে তার কমিশন দিয়ে শান্তনুর হাতে থাকত ৩ থেকে ৪ লক্ষ টাকা। জামালপুরের মৈদিপুরেরও একটি বৈধ বালিখাদানেরও শেয়ার নিয়েছিলেন শান্তনু। পরে অবশ্য সেই খাদান পুরোটাই নিজের হাতে নিয়ে নেন তিনি।
আরও পড়ুন সাংবিধানিক বেঞ্চে সমলিঙ্গের বিবাহ মামলা, ১৮ এপ্রিল শুনানি
শান্তনুর বিরুদ্ধে অভিযোগ, বেআইনি খাদানের প্রতিবাদ করলে নিজের দলের নেতা-কর্মীদেরও শাসিয়ে দিতেন তিনি। এমনকি শোনা যাচ্ছে হুগলি জেলা পরিষদের তৃণমূলেরই এক কর্মাধ্যক্ষকে ২০২০-তে পুরশুড়ায় শান্তনুর বেআইনি কারবারের প্রতিবাদ জানানোর জন্য পিস্তল দেখিয়ে হুমকি দেওয়া হয়েছিল। মারকুণ্ডা এলাকার বেগুয়াহানা থেকে হরিণখোলা পর্যন্ত মুণ্ডেশ্বরী নদীর বালি খাদান শান্তনুই শাসন করত। ওই বিস্তীর্ণ এলাকায় শান্তনুর বিরুদ্ধে মুখ খোলার সাহস কারও ছিল না।