নিজস্ব প্রতিনিধি: পয়লা বৈশাখের সকালে সারা রাজ্যের মানুষ যখন নতুন বাংলা বছরকে স্বাগত জানাচ্ছে ঠিক তখনই উত্তর শহরতলির বরানগরের(Baranagar) বুকে ঘটে গেল এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা। বরানগরের নিরঞ্জন সেন নগর(Niranjan Sen Nagar) এলাকায় এক বাড়ি থেকে এদিন সকালে উদ্ধার হয়েছে দাদু, বাবা ও ছেলের দেহ। এদিন সকাল থেকেই ওই বাড়ি থেকে পচা গন্ধ বার হচ্ছিল। সেই সূত্রেই এলাকাবাসীরা পুলিশকে খবর দেন। পুলিশ এসে ওই বাড়ির কোলাপসিবল গেটের তালা ভেঙে ভেতরে ঢোকে। সেখানে একটি ঘরে এক মধ্য বয়স্ক ব্যক্তির দেহ এবং অপর একটি ঘরে এক বয়স্ক এবং এক যুবকের দেহ পড়ে থাকতে দেখেন তাঁরা। সবারই গলায়, ঘাড়ে এবং পিঠে ধারাল অস্ত্রের কোপানোর আঘাত রয়েছে। সাড়া ঘরে পড়ে রয়েছে চাপ চাপ রক্ত। আর তাই এই ঘটনার পিছনে রহস্য দানা(Mysterious Death) বেঁধে উঠেছে। পুলিশ ৩টি দেহই উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠায় এবং পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের খোঁজ করে তাঁদের খবর দেয়।
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, এদিন যে ৩জনের দেহ উদ্ধার হয়েছে তাঁরা হলেন শংকর হালদার(৭০), বাপ্পা হালদার(৪৮) এবং বর্ণ হালদার(২৩)। শংকরবাবুর ছেলে হলেন বাপ্পাবাবু। বাপ্পার ছেলে বর্ণ। পুলিশের(Police) প্রাথমিক অনুমান, নিজের বাবা ও ছেলেকে খুন করে আত্মঘাতী হয়েছেন বাপ্পা। কিন্তু সেক্ষেত্রে তাঁর মাথার পিছনে আঘাত কীভাবে এল, সেই প্রশ্নও উঠছে। বরানগরের ওই বাড়িতে এই ৩ জনই থাকতেন। বাপ্পার স্ত্রী অশান্তি করে বাড়ি থেকে বেশ কয়েক বছর আগে চলে গিয়েছিলেন। বৃদ্ধ বাবা ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন বাপ্পা। স্থানীয় বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বাড়ির প্রত্যেককেই সচরাচর রাস্তাঘাটে দেখা যায়। কিন্তু বৃহস্পতিবার থেকে বাড়ির দরজা ছিল বন্ধ। কাউকেই আর সেভাবে বাড়ির বাইরে কেউ দেখতে পাননি। শনিবার সকাল থেকে এলাকায় পচা গন্ধ বের হতে থাকে। রবিবার সকালে সে গন্ধ প্রকট হয়। গন্ধের উৎস সন্ধানেই প্রতিবেশীরা বাড়ির দরজা খোলার চেষ্টা করেন। পরে থানায় খবর দেন। পুলিশ গিয়ে দরজা ভেঙে ঘরের ভিতর থেকে তিনটি দেহ উদ্ধার করে।
পুলিশ প্রাথমিক তদন্তের ভিত্তিতে দুটি বিষয় ভাবছে। হতে পারে বাপ্পাবাবু বাবা ও ছেলেকে বিষাক্ত কিছু খাইয়ে পরে কুপিয়ে খুন করে। শেষে আত্মঘাতী হয়। অথবা চতুর্থ কোনও ব্যক্তি তাঁদের কুপিয়ে খুন করে থাকতে পারে। তাই পরিবারের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন তদন্তকারীরা। তবে পুলিশকে এটাও ভাবাচ্ছে, যেহেতু দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। তাই বাইরে থেকে চতুর্থ কোনও ব্যক্তির ভিতরে ঢোকার সম্ভাবনা কম। তাই এই ঘটনা আত্মহত্যা নাকি খুন, তা ভাবাচ্ছে বরানগর থানার তদন্তকারীদের। শঙ্কর হালদারের মেয়ে তাপসী অধিকারী এদিন জানিয়েছেন, ‘ভাইয়ের মানসিক সমস্যা ছিল। তবে ওর ধারনা ছিল তার স্ত্রী একদিন তার ভুল বুঝতে পেরে ফিরে আসবে। ওর ছেলে বলতো মা ফিরে আসবে। ওই ব্যাপারটা ও নিতে পারত না। শেষ বার ওর সঙ্গে কথা হয় ৯ তারিখে। বাবা ও ভাইয়ের সঙ্গে কথা হল। গত রবিবারই এসেছিলাম। কোনও সমস্যার কথা বুঝতে পারিনি।’