নিজস্ব প্রতিনিধি: কেন্দ্রের ক্ষমতাসীন নরেন্দ্র মোদির সরকারের বিরুদ্ধে বাংলা ও বাঙালির প্রতি বঞ্চনাকে হাতিয়ার করেই চলতি মাসের ১০ তারিখে কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে লক্ষাধিক মানুষের আগমন ঘটিয়ে লোকসভা নির্বাচনের মুখে নিজেদের সাংগঠনিক শক্তি তুলে ধরেছিল বাংলার(Bengal) শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC)। সেই সভার নামই দেওয়া হয়েছিল ‘জনগর্জন’। সেই সভার পরে রাজ্যজুড়ে শুরু হয় তৃণমূলের নতুন প্রচার, ‘জনগণের গর্জন, বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন, তৃণমূলই করবে অধিকার অর্জন’। এই শ্লোগানে কলকাতার পাশাপাশি রাজ্যের সর্বত্র পোস্টার ও বড় বড় হোর্ডিংয়ে ভরিয়ে দেওয়া হয়েছে। বার্তা পরিষ্কার। ২৪’র ভোটে(General Election 2024) বাংলার প্রতিটি লোকসভা কেন্দ্রে বাংলা বিরোধীদের বিসর্জন অর্থাৎ হারাবার ডাক দেওয়া হয়েছে জোড়াফুলের তরফে। শুধু তাই নয়, এখন লোকসভা নির্বাচনের জন্য দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) যে সব সভা করছেন, সেই সব সভার নাম দেওয়া হচ্ছে জনগর্জন। আর সেই সব সভা থেকে নিয়ম করে বার বার তুলে ধরা হচ্ছে কেন্দ্রীয় বঞ্চনার বিষয়টি। এবার সেই জনগণেরগর্জন নামেই একটি নতুন পোর্টাল চালু করল তৃণমূল কংগ্রেস।
অভিষেক তাঁর সভায় নিয়ম করে জনগনের কাছে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিচ্ছেন কেন্দ্রের ভূমিকা নিয়ে। যেভাবে কেন্দ্র সরকার ১০০ দিনের কাজের টাকা এবং আবাস যোজানার টাকা আটকে রেখেছে সেই বিষয়টি বার বার তিনি জনগণের কাছে তুলে ধরছেন। সেই সব প্রশ্নের পাশাপাশি এবার তৃণমূলের চালু করা নয়া পোর্টালে থাকছে মস্ত বড় একতা সুবিধা। আর তা হল আমজনতার মতামত দেওয়ার সুযোগ। jonogonergorjon.com নামেই এই পোর্টালে থাকছে নানা ভিডিও। সেই সঙ্গে থাকছে ‘শপথ নিন নামের একটি অপশনও। সেখানে ক্লিক করলেই বেশ কিছু প্রশ্ন সামনে চলে আসছে। সেই সব প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবেন আমজনতা। সেই সব প্রশ্নের মধ্যে থাকছে ১০০ দিনের কাজের প্রায় ৬০ লক্ষ কর্মীদের কাজ করিয়েও হকের টাকা ইচ্ছে করে আটকে রেখেছে। আপনার কি মনে হয়, এটা ঠিক? বাড়ি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিলেও কথা রাখেনি। হকের টাকা আটকে ১১ লক্ষ পরিবারের মাথার ওপরের ছাদ কেড়ে নিয়েছে ওরা। আপনার কি মনে হয়, এটা ঠিক?বাংলার মানুষ যখন তাদের হকের টাকা চাইতে দিল্লিতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল, তখন তাদের ওপর পুলিশ অত্যাচার করে। আপনার কি মনে হয়, এটা ঠিক?
এর পাশাপাশি থাকছে, আরও কিছু মক্ষোম প্রশ্ন যা বাংলা ও বাঙালির জাত্যভিমানকে উস্কে দিতে বাধ্য। কী সেই সব প্রশ্ন? ওই সব প্রশ্নের তালিকায় আছে – স্বামী বিবেকানন্দ ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে অপমান করেছে এবং বিদ্যাসাগরের মূর্তি ভেঙে দিয়েছে। বাংলার সংস্কৃতির অসম্মান করেছে। আপনার কি মনে হয়, এটা ঠিক? বাংলার বাইরে থেকে এসে বহিরাগতরা ষড়যন্ত্র করে আর বাংলার বাইরে গিয়ে বাংলাকেই অপমান করে। আপনার কি মনে হয়, এটা ঠিক? দশ বছর ধরে দিল্লির জমিদাররা কেবল ভোটের সময়ই বাংলায় এসে নানা ভুয়ো প্রতিশ্রুতি দেয়। এভাবেই জুমলা করে ভোটের পর তারা কোনও কথাই রাখে না। আপনার কি মনে হয়, এটা ঠিক? গত পাঁচ বছরে আমাদের থেকে দিল্লির জমিদাররা ৪.৬ লক্ষ কোটি টাকা কর হিসেবে নিয়ে গেছে। অথচ আমাদের হকের ১.৬ লক্ষ কোটি টাকা জোরজবরদস্তি আটকে রেখেছে। আপনার কি মনে হয়, এটা ঠিক? রাজনৈতিক কারণে বাংলা বিদ্বেষী মনোভাব রেখে বাংলার মানুষের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করা, তাদেরকে ঘৃণা করা এবং অন্যায়ভাবে তাদের জোরজবরদস্তি বঞ্চিত করা। এই কারণগুলোর জন্য বিজেপি কি বাংলা বিরোধী নয়? সব থেকে বড় কথা ইতিমধ্যেই এই নয়া পোর্টালের ২ লক্ষের ওপর ভিউয়ার হয়ে গিয়েছে। অনেকেই মনে করছেন এই পোর্টালের মাধ্যমে বাংলার শাসক দল কার্যত লোকসভা ভোটের মুখে জনমত সমীক্ষা করে নিচ্ছে নিজের মতো করে।