নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) হাত ধরে গত ১২ বছরে বাংলার(Bengal) যে অগ্রগতি হয়েছে এবং উন্নয়নের যে অভিমুখ ধরা পড়েছে তাতে মুগ্ধ বিশ্বব্যাঙ্কের(World Bank) আধিকারিকেরা। আর সেই কারণেই বিশ্বব্যাঙ্কের হাত ধরে রাজ্যে আসছে ২৫০০ কোটি টাকা। সব থেকে চমকে দেওয়ার বিষয়, বিশ্ব ব্যাঙ্কের ঋণ(Loan) পেতে হলে আবেদন জানাতে হয়। তবে এবারই প্রথম একেবারে ব্যতিক্রমীভাবে বাংলার শিল্পসম্ভাবনা খতিয়ে দেখে এই বিপুল পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করতে নিজের থেকেই আগ্রহ প্রকাশ করছে বিশ্বব্যাঙ্ক। ফলে এই সুযোগ কোনওভাবেই হাতছাড়া করতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। তাই তড়িঘড়ি, শুক্রবার অর্থাৎ এদিনই বিশ্বব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের সঙ্গে বৈঠকে বসতে চলেছেন রাজ্যের মুখ্যসচিব হরিকৃষ্ণ দ্বিবেদী। মন্ত্রিসভার(State Cabinet) দ্রুত ছাড়পত্রের জন্য সামগ্রিক বিষয়টি সেখানে পেশ করা হবে বলেও নবান্ন সূত্রের খবর। সহজ শর্তে ঋণ হিসেবে এই টাকা দেবে বিশ্বব্যাঙ্ক।
আরও পড়ুন পিএম কিষান প্রকল্প নিয়ে তদন্ত করতে কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল বাংলায়
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, বিশ্বব্যাঙ্কের দেওয়া টাকা রাজ্য সরকার পণ্য মজুত করে রাখার জন্য উন্নতমানের পরিকাঠামো ও দ্রুত গতির পরিবহণ ব্যবস্থা গড়ে তুলতে চাইছে। শিল্পসম্ভাবনা উজ্জ্বল এমন জায়গাগুলিতে উন্নত রাস্তা ও অন্যান্য পরিকাঠামো নির্মাণ করা হবে। দ্রুত পণ্য পরিবহণের লক্ষ্যে জোর দেওয়া হবে সড়ক, রেল ও জলপথের সমন্বয়ের ওপর। লজিস্টিকস ক্ষেত্রে কাজের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে। বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকল্পের মাধ্যমে পরিকাঠামো উন্নয়নের কাজ হলে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অন্তত ৫০ হাজার মানুষ কাজের সুযোগ তৈরি হবে। নদিয়া জেলার হরিণঘাটায় একটিমাত্র ই-কমার্স সংস্থা লজিস্টিক হাব খোলায়, ১১ হাজারের বেশি কর্মসংস্থান হয়েছে। এখান থেকেই বোঝা যায়, বিশ্ব ব্যাঙ্কের প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে কত সংখ্যক মানুষ কাজ পাবেন। দুর্গাপুজো মিটলেই রাজ্যে বসতে চলেছে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন। এবারের বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের মূল লক্ষ্যই হল, ক্ষুদ্রশিল্পে রাজ্যকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়া। দেশ-বিদেশের বিনিয়োগকারীদের সঙ্গে রাজ্যের উৎপাদকদের সমন্বয় বৃদ্ধি এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বাজারে রাজ্যের তৈরি পণ্যের রফতানি বাড়ানো।
আরও পড়ুন কলকাতা সহ ৬ জেলায় বাজি ক্লাস্টার, বিনিয়োগ কয়েকশো কোটি
এর মাঝেই বিশ্বব্যাঙ্কের ঋণ চলে এসেছে রাজ্যের হাতের মুঠোয়। এর ফলে আগামিদিনে রাজ্যে তৈরি পণ্যের চাহিদা, বাড়বে উৎপাদনও। বিশেষভাবে উপকৃত হবে পোশাক, গয়না, ইঞ্জিয়ারিং সামগ্রী, চা এবং সামুদ্রিক পণ্যের সঙ্গে যুক্ত শিল্প। আসলে এই ঋণ আসার রাস্তাটা অনেক আগে থেকেই তৈরি হয়েছিল। ২০১৯ সালে রাজ্যের তৎকালীন অর্থমন্ত্রী এবং বর্তমানে রাজ্যের আর্থিক উপদেষ্টা অমিত মিত্রের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বিশ্ব ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের কথা হয়। সেই সময়েই এই ঋণ প্রদানের বিষয়ে রাজি হয়েছিল বিশ্বব্যাঙ্ক। কিন্তু কোভিড ও লকডাউনের জেরে সেই বিষয়টি থিতিয়ে যায়। এখন বিশ্ব ব্যাঙ্কের তরফে নতুন করে বিষয়টি সামনে নিয়ে আসা হয়েছে। এর পিছনে বেশ কিছু কারণ কাজ করছে বলেই মনে করা হচ্ছে।
আরও পড়ুন ধূপগুড়ির বিডিও বদল, পূর্ব মেদিনীপুরে বদল একাধিক থানার পুলিশ
প্রথমত, ভৌগোলিক অবস্থানের জন্য পণ্য সরবরাহের ক্ষেত্রে বিশেষ সুবিধার জায়গায় রয়েছে বাংলা। ফলে, উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিসহ জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক স্তরে পণ্য সরবরাহের পথ হিসেবে বাংলাকেই বেছে নিচ্ছে বহু শিল্প সংস্থা। দ্বিতীয়ত, বাম জমানার বনধ, হরতাল, ধর্মঘট এখন বাংলার বুকে অতীত। আবার রাজ্যের বুকে দাঙ্গাহাঙ্গামার ঘটনাও সেভাবে নেই বললেই চলে। ফলে এখানে এখন নির্বিঘ্নে ব্যবসা বাণিজ্য করা যায়। এখানকার দ্রুত যোগাযোগ ব্যবস্থা, সড়ক ও রেল যোগাযোগ এবং সুলভ শ্রমিক অনেক বিনিয়োগকারীকেই আকর্ষিত করছে। তৃতীয়ত, অবশ্যই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাকে ঘিরে জাতীয় স্তরের রাজনীতি আবর্তিত হতে শুরু করে দিয়েছে। তাই তাঁর রাজ্যে বিনিয়োগে এগিয়ে আসছেন একের পর এক শিল্পপতিরা। সেই দৌড়ে পিছিয়ে থাকতে চায় না বিশ্বব্যাঙ্কও। তাই তাঁরা পুরাতন কাসুন্দিকেই সামনে নিয়ে চলে এসেছে।
