নিজস্ব প্রতিনিধি: নবরাত্রি উৎসব অথবা বাঙালিদের দুর্গোৎসব শেষ হওয়ার ১৮ দিন পর দীপাবলি শুরু হয়।কার্তিক মাসের অমাবস্যায় যে কালীপুজো হয় তার আগের দিন থাকে চতুর্দশী, যা ভূত চতুর্দশী নামে পরিচিত। এদিনে আগে প্রতিটি বাঙালি বাড়িতেই ১৪ প্রদীপ জ্বালিয়ে ১৪ শাক খাওয়ার রীতি প্রচলিত ছিল। এই দিনে ১৪ পুরুষের উদ্দেশ্যে প্রদীপ জ্বালানো হয়। তবে চিকিৎসকদের মতে এই ১৪ শাকেই রয়েছে আয়ুর্বেদিক গুণ।
শাকগুলি হল পাট, কুমড়ো, কলমি, মুলো, গিমে, হিলঞ্চ, গুলঞ্চ, পলতা, মেথি সর্ষে নটে, লাল ও সুষনি শাক। তবে অঞ্চলভেদে নিম, জয়ন্তী, শাঞ্চে, কালকাসুন্দে, লাউ, পালং, পুঁই, ওল, বেতো, কেঁউ, পলতা ইত্যাদি শাক।
১. ওল: গুরুত্বপূর্ণ কন্দজাতীয় উদ্ভিদটির কচি পাতা এবং কন্দ হিসেবে ওল সবার প্রিয়। মাটির নীচে থাকা কন্দ থেকে জন্মায় এই পাতা। ওলের কন্দ প্লিহা, অর্শ ও রক্তামাশার ক্ষেত্রে উপকারি।
২. কেঁউ: এটি হল দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উদ্ভিদ। ভারতে রাস্তার ধারে, পতিত জমিতে কেঁউ যথেষ্ট দেখা যায়। মাটির নীচে এর কন্দ জন্মায়। জ্বর, আমাশা, ডায়েরিয়া, কফ, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কুষ্ঠ, কৃমি, চুলকানি ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
৩. বেঁতো: এই পাতার রস ভাল হজমকারক ও ক্ষুধাবর্ধক। জ্বর, আমাশা, ডায়েরিয়া, কফ, কাটা-ছেঁড়া, ক্ষত, চর্মরোগ, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, কুষ্ঠ, কৃমি, চুলকানি ইত্যাদি রোগে ব্যবহৃত হয়।
৪. কালকাসুন্দে: সারা ভারতে রাস্তার দু’ধারে, সর্বত্র দেখা যায়। ভোজ্য অংশ হিসেবে নরম পাতা, অ্যালার্জি, কোষ্ঠবদ্ধতা, জ্বর, ও ক্ষত নিরাময়ে কালকাসুন্দার পাতার রস ব্যবহৃত হয়।
৫. সরিষা বা সর্ষে: মশলা হিসেবে সর্ষের ব্যবহার তো সারা ভারতেই প্রচলিত। ভিটামিন কে, ভিটামি সি এবং ভিটামিন ই এবং ক্যালশিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম ও লোহার সমৃদ্ধ উৎস হল এই শাক।
৬. নিম: ভোজ্য অংশ হিসেবে কচি পাতা ও ফুল অধিক ব্যবহৃত। নিম পাতা বা পাতার রস কুষ্ঠ, চর্মরোগ, বহুমুত্র রোগের অন্যতম ওষুধ।
৭. জয়ন্তী: কচি সবুজ টাটকা পাতা, দরাময়, বহুমূত্র, শ্বেতি, কৃমিনাশ, ইত্যাদি রোগের চিকিৎসায় কাজ করে।
৮. শালিঞ্চ বা শিঞ্চে: এই শাককে সাঁচিশাকও বলে। নীচু জমিতে সামান্য আর্দ্রতা থাকলেই সেখানে শালিঞ্চা জন্মায়। ডায়েরিয়া, অজীর্ন, চিকিৎসায় এই শাক খেলে উপকার হয়। এই শাক খেলে মায়ের স্তনদুগ্ধের পরিমাণ বাড়ে।
৯. গুড়ুচী: ডায়াবেটিস, যক্ষ্মা, কোষ্ঠকাঠিন্য, বাত, রিউম্যাটয়েড আর্থ্রাইটিস, হেপাটাইটিস, পেপটিক আলসার, গনোরিয়া, সিফিলিস, শোথ, জ্বর ইত্যদি নানা রোগের আয়ুর্বেদিক চিকিৎসায় গুলঞ্চ ব্যবহৃত হয়। গুলঞ্চ শাক খেলে অনাক্রম্যতা বৃদ্ধি পায়।
১০. শেলুকা: মাতৃদুগ্ধের পরিমাণ বাড়াতে ও বাচ্চাদের পেটের রোগ সারাতে এই শাক খুব উপকারী। চোখের রোগ, চোখে ঘা, পুরানো ক্ষত, জ্বর ইত্যদি রোগের নিরাময়ে খুবই কার্যকর।
১১. পটলপত্র: পটল পাতা নিয়মিত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়। পটল পাতা ক্ষিদে ও হজমশক্তি বাড়ায়। ক্ষতস্থানে পটল পাতার রস লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।
১২. হিঞ্চে: আয়ুর্বেদে হেলেঞ্চাকে রক্তশোধক, পিত্তনাশক, ক্ষুধাবর্ধক, হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই শাক নিয়মিত খেলে রক্তে হিমোগ্লোবিনের পরিমাণ বাড়ে।
১৩. ঘেঁটু /ঘন্টাকর্ণ: চুল পড়া, হাঁপানি, কফ, বাত, জ্বর, চর্মরোগ, লিভারের রোগ, ইত্যদি রোগ প্রতিরোধে ঘেঁটু পাতা খুব কার্যকর। ঘেঁটু পাতা বেটে ঘা বা ফোলা জায়গার ওপর লাগালে তাড়াতাড়ি সারে।
১৪. শুষনি: নিয়মিত শুষনি শাক খেলে মাথার যন্ত্রণা, তীব্র মানসিক চাপ, উচ্চ রক্তচাপ, হাঁপানি, শ্বাসকষ্ট, গায়ে ব্যথা, পায়ের পেশির অনিয়ন্ত্রিত সংকোচন, বাত, জিভে ও মুখে ক্ষত, চর্মরোগ ইত্যদি দূর হয়।