নিজস্ব প্রতিনিধি, পাবনা: ছোটবেলা থেকেই দারিদ্র্যের সঙ্গে লড়াই শুরু। আজ মধ্য বয়সে এসেও সেই লড়াই চলছে। সংসারের জোয়াল টানতে টানতেই ডিসকভারি চ্যানেলে বিয়ার গ্রিলসের অনুষ্ঠান দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন আকরাম প্রামাণিক। শুরু করেছিলেন জ্যান্ত সাপ, কেঁচো, আরশোলা, ব্যাঙ থেকে শুরু করে মাছ খাওয়া। তার পরে কার্যত জ্যান্ত প্রাণি খেতে আসক্ত হয়ে পড়েছেন তিনি। অনেকে মজার ছলে তাঁর নাম দিয়েছেন, ‘ডিসকভারি আকরাম’। অনেকে আবার ‘মানসিক বিকারগ্রস্ত’ বলে লাগাতার কটাক্ষ ছুঁড়ে দিচ্ছেন। কিন্তু তাতে কিছু যায় আসে না পেশায় কাঠমিস্ত্রি আকরামের।
পাবনার ঘোড়াদহ গ্রামের বাসিন্দা আকরাম ২০০২ সালে বহু কষ্টে টাকা জমিয়ে একটি সাদা-কালো টিভি কিনেছিলেন। একদিন সেই টিভি ঘোরাতে-ঘোরাতে নজর আটকে গেল ডিসকভারি চ্যানেলে। বিদেশিদের জ্যান্ত পোকামাকড় খেতে দেখে ভাবলেন, একবার শুরুই করা যাক না। যেমন ভাবা, তেমন কাজ। ২০০৩ সালে তাজা কাঁকড়া খেয়ে শুরু করলেন দুঃসাহসিক মিশন। তার পরে কেঁচো, কাঠের পোকা, সাপ, কুচিয়া, আরশোলা, ইদুঁর, বিভিন্ন প্রজাতির কাঁচা মাছ, গোবরের পোকা. শামুক, ঝিনুকসহ নানা পোকামাকড় খাওয়া শুরু করেন। আকরামের জ্যান্ত সাপ-ব্যাঙ খাওয়ার কথা দাবানলের মতো ছড়িয়ে পড়ে। অবিশ্বাস্য ঘটনা নিজেদের চোখে চাক্ষুস করতে দূর-দূরান্ত থেকে উৎস্যুক সাধারণ মানুষ ভিড় জমাতে থাকেন আকরামের বাড়িতে।
তাতে আরও উৎসাহিত হয়ে সব কাজকর্ম ছেড়ে পোকামাকড় খাওয়ার নেশায় আসক্ত হয়ে পড়েছেন ডিসকভারি আকরাম। স্বামীর এমন শখের খেয়ালে প্রথমে কিছুটা বিরক্ত হলেও এখন আর কিছু বলেন না আকরামের স্ত্রী মুর্শিদা খাতুন। তাঁর কথায়, ‘প্রথমে রাগারাগি করতাম। কিন্তু অনেক বকাঝকা করেও খামখেয়ালিপনার রাস্তা থেকে ফেরাতে পারিনি। এখন হাল ছেড়ে দিয়েছি।’ যিনি গত ২০ বছর ধরে জ্যান্ত সাপ-ব্যাঙ খেয়ে চলেছেন সেই আকরাম অবশ্য নির্বিকার। তাঁর কথায়, ‘সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মানুষদের দেখাতে পারতাম, বাঙালিরাও কিসিসে কম নেহি।’