এই মুহূর্তে




নিজেই বাড়িতে করতে পারেন বিপত্তারিণী পুজো, জেনে নিন সহজ পদ্ধতি




পৃথ্বীজিৎ চট্টোপাধ্যায় : বিপত্তারিণী ব্রত যুগ যুগ ধরে হিন্দু ধর্মাবলম্বী গৃহস্থ নারীদের এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ এবং বিশ্বাসভিত্তিক ব্রত, যা সংসারের শান্তি, স্বামীর সুস্থতা ও সকল প্রকার বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য পালন করা হয়। এই ব্রত বাঙালি হিন্দু মহিলাদের কাছে এক গভীর আস্থা, বিশ্বাস ও সংকল্পের প্রতীক। জানা যায়, দেবী দুর্গার এক বিশেষ রূপ হিসাবে পূজিত হন মা বিপত্তারিণী। ‘বিপদ থেকে উদ্ধার’—এই মূল উদ্দেশ্যেই পালিত হয় এই ব্রত। আষাঢ় মাসে রথযাত্রা ও উল্টো রথের মধ্যে শনিবার ও মঙ্গলবার—এই দুই দিনই পালিত হয় বিপত্তারিণীর ব্রত। বছরে মাত্র দুইদিন পালনযোগ্য এই পুজোর বিশেষ তাৎপর্য রয়েছে হিন্দু শাস্ত্র ও লোকবিশ্বাসে।

এই পুজো করতে এমন কিছু আড়ম্বরের প্রয়োজন হয় না, তাই অবিলম্বে মনে ভক্তি ও বিশ্বাস রেখে নিজেরাই করে নিতে পারেন বিপত্তারিণী মঙ্গল চণ্ডীর পুজো।

পুজোর প্রস্তুতি

বাড়িতেই বিপত্তারিণী পুজো আয়োজন করা যায় খুব সহজে, কিন্তু সততা, নিষ্ঠা ও নিয়ম মানা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমেই একটি পরিষ্কার স্থানে দেবীর মূর্তি বা ছবি স্থাপন করুন। এরপর নিচের উপকরণগুলি সংগ্রহ করুন:

  • ১৩টি ফল
  • ১৩টি ফুল
  • ১৩টি সুপারি
  • ১৩টি পান পাতা
  • ১৩টি দুর্বা
  • ১৩টি মোমবাতি
  • ১৩টি ধূপকাঠি
  • ১৩টি প্রদীপ
  • ১৩টি ভোগ দ্রব্য (যেমন মিষ্টি, পায়েস, লুচি, আলুর তরকারি)
  • ১৩টি লাল সুতো

এছাড়া পুজোর জন্য প্রয়োজন জল, তেল, কুমকুম, চন্দন, দুধ, ঘি ইত্যাদি উপকরণ।

ব্রত সংকল্প ও পুজার প্রক্রিয়া

পুজোর দিন সকালে স্নান সেরে, শুদ্ধ বস্ত্র পরে দেবীর সামনে বসুন। এরপর ব্রত সংকল্প নিন—নিজের নাম, গোত্র এবং ব্রত পালনের উদ্দেশ্য উল্লেখ করে দেবীর কৃপা কামনা করুন।

এরপর ধাপে ধাপে এগনো আবশ্যক:

গণেশ বন্দনা:

সব পুজোর আগে গণেশ ঠাকুরের আরাধনা বাধ্যতামূলক। তাঁর কৃপা ছাড়া কোনও পুজো সিদ্ধ হয় না।

দেবীর ধ্যান ও মন্ত্র পাঠ:

“মাসি পূণ্যতমেবিপ্রমাধবে মাধবপ্রিয়ে।

ন বম্যাং শুক্লপক্ষে চবাসরে মঙ্গল শুভে।

সর্পঋক্ষে চ মধ্যাহ্নেজানকী জনকালয়ে।

আবির্ভূতা স্বয়ং দেবীযোগেষু শোভনেষুচ।

ওঁ (নমঃ) সর্ব মঙ্গল্যে শিবে সর্বার্থসাধিকে শরণ্যে

ত্র্যম্বকে গৌরী নারায়ণী নমস্তুতে।”

এই মন্ত্রসহ আরও কিছু মন্ত্র যেমন – মহাদেবের প্রণাম, নিজের ইষ্ট দেবতার প্রণাম, গুরু থাকলে গুরু প্রণাম ইত্যাদি  পাঠ করতে পারেন ।

পুষ্পাঞ্জলি ও ভোগ নিবেদন:

১৩টি পুষ্প, ১৩টি ফল এবং ভোগ নিবেদন করে দেবীর আরাধনা করুন।

আরতি:

প্রদীপ জ্বালিয়ে ধূপ ও দীপ আরতির মাধ্যমে পুজো সম্পূর্ণ করুন।

লাল সুতো ধারণ ও এর তাৎপর্য

বিপত্তারিণী ব্রতের বিশেষ অংশ হল লাল সুতোয় ১৩টি গিঁট দেওয়া। প্রতিটি গিঁট বাঁধার সময় দেবীর নামজপ করুন এবং পরে সেটি হাতে ধারণ করুন।

  • পুরুষরা এটি ডান হাতে
  • মহিলারা বাম হাতে পরিধান করবেন।

বিশ্বাস করা হয়, এই সুতো বিপদ থেকে রক্ষা করে এবং শুভ শক্তির সঞ্চার ঘটায়।

ব্রতের বিধি ও নিষেধ

✅   ব্রতের আগের দিন থেকে নিরামিষ আহার

✅   চাল, মুড়ি, চিড়ে, আটার রুটি নিষিদ্ধ

✅   পুজোর দিন কাউকে অপমান বা কটূক্তি করবেন না

✅   কাউকে টাকা ধার দেবেন না, নেবেনও না

✅   চিনি বা মিষ্টি দেওয়া বারণ (শুক্র দুর্বল হয়)

✅   পরিবারের কেউ মদ্যপান করলে দেবীর ক্রোধ আহ্বান করতে পারেন

 

পুজোর পরবর্তী তিন দিন

বিপত্তারিণী ব্রত শুধু একদিনের পুজো নয়, এটি চারদিনের আচার:

  • প্রথম দিন: পুজার সূচনা, ঘট স্থাপন, আরাধনা
  • পরবর্তী দুই দিন: কীর্তন, ভজন, লোকগান
  • চতুর্থ দিন: পুজোর সমাপ্তি, নিরঞ্জন অর্থাৎ ঘট বিসর্জন

ব্রতের অন্তিম কথা

এই ব্রত কমপক্ষে টানা ৩ বছর পালন করার নিয়ম রয়েছে, যেন দেবীর কৃপা দীর্ঘস্থায়ী হয়। উপবাসের শেষে ফলের রস বা সরবত গ্রহণের রীতিও প্রচলিত।

বিপত্তারিণী ব্রত কেবল একটি আচার নয়, এটি আধ্যাত্মিক ভক্তি, পারিবারিক মঙ্গল এবং জীবন থেকে অশুভ শক্তি দূর করার এক মহিমান্বিত উপলক্ষ। নিষ্ঠা ও শ্রদ্ধার সঙ্গে পালন করলে দেবী বিপত্তারিণী জীবনের সকল সংকট থেকে রক্ষা করেন।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

পদ্মফুলে কেন বিরাজ করেন দেবী লক্ষ্মী? জেনে নিন অজানা কাহিনি

জোর করে মুসলিম ছেলের সঙ্গে বিয়ে, পাকিস্তানে ক্রমেই বাড়ছে হিন্দু নারী অপহরণের ঘটনা

অবিশ্বাস্য! মাত্র ২৪ ঘণ্টাতেই আইটিআর রিফান্ড, জেনে নিন সম্পূর্ণ প্রক্রিয়া

শিব সাজার শখ! গলায় কোবরা ঝুলিয়ে বাইক চালাচ্ছিল সর্পবন্ধু, তারপর যা ঘটল…

পাকিস্তানে পেট্রোলের লিটার ২৭২ টাকা, ডিজেলের দাম গগনচুম্বী

কেন গাড়ির চাকাতে প্রস্রাব করে কুকুর ? জানুন অজানা কারণ

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ