এই মুহূর্তে

WEB Ad Valentine 3

WEB Ad_Valentine

বাংলার বুকে একমাত্র পটে-আঁকা গ্রাম ‘নয়াগ্রাম’, এখানে প্রতিটি বাড়িই রঙিন

নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রাম-বাংলায় এমনই অসংখ্য সমৃদ্ধ জনপদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যার কথা অনেকেই জানেন না। সেরকমই একটি গ্রাম হল পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার নয়াগ্রাম। একটা আস্ত গ্রাম যে এমন রঙিন হতে পারে, তা নিজের চোখে না দেখলে আপনার বিশ্বাসই হবে না। এটিই রাজ্য়ের একমাত্র পট-গ্রাম। বাংলার প্রচীন শিল্পরীতি পটশিল্প এই গ্রামের প্রতিটি দেওয়ালে-দালানে চিত্রিত। নয়াগ্রামে পা রাখলেই আপনার চোখে ফুটে উঠবে পটচিত্র, সেখানে দেখবেন রঙিন, বর্ণময় বাংলার ইতিহাস, পুরাণ, সংস্কৃতি। তবে পটচিত্র নয়, পটের গানও আছে। ফলে বাংলার বুকে কার্যত হারিয়ে যাওয়া পটশিল্পের হদিশ পেতে হলে আপনাকে আসতেই হবে পটের গ্রাম নয়াগ্রামে।

এই গ্রামের সকলেই শিল্পী। তাই প্রত্যেকের নামের সঙ্গেই যুক্ত হয়েছে ‘চিত্রকর’ শব্দটি। তাঁরা যেমন ছবি আঁকেন, তেমনই গানও বাঁধেন। আর সেই গানের দৃশ্যই ফুটে ওঠে পটচিত্রে। কেউ কেউ মনে করেন, এই পটুয়ারা আসলে স্বয়ং বিশ্বকর্মার বংশধর। ব্রক্ষ্মবৈবর্ত পুরাণ মতে দেবশিল্পী বিশ্বকর্মার ঔরসে স্বর্গের অপ্সরা ঘৃতাচীর গর্ভে নয়জন দক্ষ শিল্পীর জন্ম হয়। তাঁরা হলেন, মালাকার, কর্মকার, শঙ্খকার, কুবিন্দকার বা তন্তুবাঈ, কুম্ভকার, কংসকার বা কাঁসার, সূত্রধর, চিত্রকর এবং স্বর্ণকার। এরমধ্যে চিত্রকর হল অষ্টম গর্ভের সন্তান। আরেকটি কথা, এই চিত্রকর পদবীর আড়ালে এই পটুয়াদের ধর্মীয় পরিচিতি কিন্তু ঢাকা পড়েছে।

একটা গ্রামের প্রতিটি বাড়ির দেওয়াল, রাস্তাঘাটের বেড়া সবেতেই পটচিত্র। রঙিন এই গ্রাম আজ স্বাবলম্বী। কিন্তু একটা সময় ছিল এখানকার বাসিন্দারা ঝোলাতে পটের ছবি নিয়ে বেরিয়ে পড়তেন আশেপাশের এলাকায়। সেখানে বাড়ি বাড়ি গিয়ে পটের ছবি দেখিয়ে গান ধরতেন চাঁদ সদাগরের বা বেহুলা-লক্ষ্মীন্দরের। পটের ছবিতে আঁকা থাকতো নানান পৌরাণিক উপাখ্য়ান বা চণ্ডীমঙ্গল, সাবিত্রী-সত্যবানের ঘটনা। এতেই যা রোজগার হতো তাই দিয়েই চলতো সংসার। আজ এখানকার শিল্পীরা দেশ-বিদেশের বিভিন্ন মেলা বা প্রদর্শনীতে যান নিজেদের পশরা নিয়ে। পটচিত্র তাঁরা ফুটিয়ে তোলেন কাপ-ডিস, কেটলির মতো সমস্ত কিছুর উপরেই। ফলে বিক্রি হয় শহরের বড় বড় শো-রুমে। পূর্বপুরুষের ধারা বজায় রেখে এখনও অনেকেই প্রাকৃতিক রং ব্যবহার করেন। যদিও বর্তমানে বেড়েছে ফেব্রিকের ব্যবহার।

চিত্রকররা জানিয়েছেন, নারকেলের মালায় বেলের আঠার সঙ্গে ফল-ফুল মিশিয়ে তৈরি হয় প্রাকৃতিক রং। এবং রং-আঠা-জলের পরিমাণ যদি ঠিক হয়, তা হলে তা ৫০০ বছরেও নষ্ট হবে না। যেমন সেগুন গাছের পাতা, খয়ের ও চুন মিশিয়ে তৈরি করা হয় লাল রঙ। আবার অপরাজিতা ফুল থেকে নীলরঙ, বরবটি, সিম ও কেশুত পাতা থেকে সবুজ রঙ, হলুদ গাছ থেকে হলুদ। বাঁশ বা চাল পুড়িয়ে কালো রঙ আবার এক ধরণের বিশেষ মাটি (কুসুম মাটি) থেকে তৈরি করা হয় সাদা রঙ। আবার সময়ের সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে পটচিত্রের ধারা এবং গান। এক সময়ে গান লেখা ও ছবি আঁকার কাজ একজনই করতেন। কিন্তু এখন অনেকেই শুধু ছবি আঁকেন আর গান ধরেন তাঁর গুরু। পটের গানে এখন জায়গা করে নিচ্ছে সামাজিক বিষয়, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ধর্ম সমন্বয়ের কথাও। যেমন, এডস, সুনামি বা হিন্দু-মুসলিম সম্প্রীতির কথা।

প্রাচীন পটের ধরণ কিন্তু আলাদা আলাদা। তবে বাংলায় তিন ধরণের পট দেখা যায়। সবচেয়ে জনপ্রিয় হল জড়ানো বা গোটানো পট। একটি গল্পকে বর্ণনা বা গানের মাধ্যমে বোঝানোর জন্য পটগুলি বেশ লম্বা হয়। কাপড়ে আকাঁ পটচিত্রটি গোটানো থাকে। ওই লম্বা পটে ১৫ থেকে ২০টি পটের ছবি আঁকা থাকে। যা গানের তালে তালে একে একে দর্শকদের সামনে মেলে ধরা হয়। এছাড়া আছে আড়েলটাই পট বা আয়তকার পট এবং চৌকস পট বা বর্গক্ষেত্রকার পট। এখন আর পটের গানের চল সেভাবে না থাকলেও শিল্পকর্মের জন্য এখানকার চিত্রকরদের দিন বদলেছে। তাঁরা এখন অনেকটাই স্বাবলম্বী। মাটির বাড়িও খুব একটা নেই নয়াগ্রামে। দেশ-বিদেশে তাঁদের শিল্পকর্ম বিক্রি হয়। তাই এক-দুদিন সময় নিয়ে ঘুরে আসুন এই বাংলার একমাত্র পট-গ্রামে।

কিভাবে যাবেন এবং কোথায় থাকবেন?

কলকাতা থেকে পিংলার দূরত্ব ১১৫ কিলোমিটার। সময় লাগবে কমবেশী আড়াই ঘণ্টা। গাড়িতে কলকাতা থেকে এনএইচ ৬ ধরে ডেবরা, সেখান থেকে বালিচক হয়ে পিংলার নয়াগ্রাম। এছাড়া কলকাতা থেকে খড়গপুরের বাস ধরে ডেবরা। সেখান থেকে ময়নার বাস ধরে নয়াগ্রাম আসা যায়। পাশাপাশি হাওড়া থেকে খড়গপুরগামী ট্রেনে বালিচক স্টেশনে নামুন। সেখান থেকে বাস কিংবা ট্রেকারে নয়াগ্রাম।

পুরো ব্যাপারটি খুব কাছে থেকে দেখতে এবং বুঝতে একটি দিন থেকেই আসতে পারেন বাংলার একমাত্র পটের গ্রামে। এই গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই রয়েছে কর্মশালা। কাজ হয় দিনরাত। আবার দু-একটি সংগ্রশালাও আছে গ্রামে। সেখানে দেখা যায় দেশ-বিদেশের নানান মুখোশ, মুদ্রা, পুঁথি ও পট। বর্তমানে নয়াগ্রামে পটশিল্পীদের বাড়িতে তৈরি হয়েছে হোম-স্টে। সেখানে রাত কাটাতে পারেন। ফলে চাইলে এখানেই থাকা ও খাওয়া যাবে। আবার একদিনের জন্যও ঘুরে আসা যায়। চাইলে কোনও বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরে নিতে পারেন।

Published by:

Ei Muhurte

Share Link:

More Releted News:

ঝাড়খণ্ডের মাওবাদী ঘাঁটি ‘বুড়া পাহাড়ে’ প্রথমবার ভোট দেবেন বাসিন্দারা

দোপাট্টা পরিয়ে দেওয়ার প্রতিবাদ পাকিস্তানি ইউটিউবারের, ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়

বিনা টিকিটে সংরক্ষিত আসনে সফর মহিলার, ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়

আন্দামানে জঙ্গল থেকে বেরিয়ে প্রথমবার ভোট দিলেন শোমপেন মূলবাসীরা

স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে ভোট উ‍ৎসবে সামিল ‘বামন’ আজিম মনসুরী

সকলকে ভোট দেওয়ার বার্তা  বিশ্বের ক্ষুদ্রতম মহিলা ভোটারের

Advertisement
এক ঝলকে
Advertisement

জেলা ভিত্তিক সংবাদ

দার্জিলিং

কালিম্পং

জলপাইগুড়ি

আলিপুরদুয়ার

কোচবিহার

উত্তর দিনাজপুর

দক্ষিণ দিনাজপুর

মালদা

মুর্শিদাবাদ

নদিয়া

পূর্ব বর্ধমান

বীরভূম

পশ্চিম বর্ধমান

বাঁকুড়া

পুরুলিয়া

ঝাড়গ্রাম

পশ্চিম মেদিনীপুর

হুগলি

উত্তর চব্বিশ পরগনা

দক্ষিণ চব্বিশ পরগনা

হাওড়া

পূর্ব মেদিনীপুর