নিজস্ব প্রতিনিধি, ঢাকা: মাত্র দশ মাস বয়সে দুরারোগ্য টিউবেরাস স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয়েছিল। টানা দেড় যুগের বেশি সময় ধরে দুরারোগ্য ব্যাধির সঙ্গে লড়াই করতে করতে বুধবার সন্ধ্যায় জীবনযুদ্ধে হার মানতে হয়েছিল উনিশ বছরের সারাহ ইসলামকে। তবে মৃত্যুর কাছে হার মানলেও ইতিহাসে ঠাঁই করে নিয়েছেন। কেননা তাঁর দেওয়া কিডনি বাঁচিয়ে দিয়েছে দুজনের জীবনকে। আর তাঁর দু চোখের কর্নিয়া নতুন করে পৃথিবীর আলো দেখাতে সাহায্য করেছে দুজনকে। সারাহর এমন আত্মত্যাগকে কুর্নিশ জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ। তাঁর কথায়, ‘দেশের প্রথম অঙ্গদাতা সারাহ ইসলামের নাম চিকিৎসাক্ষেত্রে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। উনিশ বছরের মেয়েটির আত্মত্যাগের মাধ্যমে মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি হবে। অনেক মানুষ নতুন জীবন পাবে।’
মাত্র দশ মাস বয়সে দুরারোগ্য দুরারোগ্য টিউবেরাস স্ক্লেরোসিসে আক্রান্ত হয়েছিল সারাহ ইসলাম। ওই রোগের সঙ্গে ১৯ বছর ধরে লড়াই করছিল। সম্প্রতি রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে তাঁর মস্তিষ্কে অস্ত্রোপচার হয়। তার পরে শারীরিক অবস্থা সঙ্কটজনক হওয়ায় গত ১৩ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়। বুধবার সন্ধ্যায় চিকিৎসকরা তাঁর ব্রেন ডেথ ঘোষণা করেন। আগেই মা শবনম সুলতানাকে অঙ্গদানের ইচ্ছের কথা জানিয়ে গিয়েছিলেন উনিশ বছরের সারাহ। তাঁর সেই ইছেকে মর্যাদা দিতে বুধবার রাতেই জরুরি ভিত্তিতে অস্ত্রোপচার করে দুটি কিডনি বের করে নেওয়া হয়। কর্নিয়াও সংগ্রহ করা হয়।
সারাহর দান করা দুটি কিডনির একটি বিএসএমএমইউতে একজন রোগীর শরীরে প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। অন্যটি কিডনি ফাউন্ডেশনে আর এক রোগীর শরীরে প্রতিটন করা হয়। আর কর্নিয়া দুটি দুজনের চোখে লাগানো হয়। এদিন দেশের ইতিহাসে প্রথম মরণোত্তর কিডনি প্রতিস্থাপন নিয়ে সাংবাদিক সম্মেলনের আয়োজন করেছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। সাংবাদিক সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সারাহ’র মা শবনম সুলতানা। আবেগপ্রবণ কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘মেয়েটা যেখানে যেত হইহুল্লোড় করে সবাইকে মাতিয়ে রাখত। ও বলেছিল, ‘আমার সবকিছু গবেষণার জন্য দিয়ে দিতে পারো মা।’’ সারাহর ইচ্ছা ছিল, ওর ব্রেন নিয়ে গবেষণা হোক।’