নিজস্ব প্রতিনিধি: গঙ্গাসাগর মেলা ঘিরে আইনি যুদ্ধ যেন থামছেই না। একদিকে রাজ্য সরকার যেমন কলকাতা হাইকোর্টে আর্জি জানিয়েছে মেলার নজরদারি কমিটি থেকে শুভেন্দু অধিকারীকে বাদ দিয়ে কোনও চিকিৎসককে সেখানে সদস্য করতে তেমনি এই মেলা যাতে কোভিডের ‘সুপারস্প্রেডার’ না হয়ে ওঠে তার জন্য মেলা বন্ধ করতে আর্জিও জমা পড়ে কলকাতা হাইকোর্টে। এই সব বিষয়ে এদিন শুনানিও হয়েছে আদালতে। তবে হাইকোর্ট এদিন এই মামলায় কোনও রায়দান করেনি। রায়দান স্থগিত রেখেছে হাইকোর্ট। ঘটনাচক্রে এদিন থেকেই কিন্তু সরকারি ভাবে মেলা শুরু হয়ে গিয়েছে গঙ্গাসাগরে।
কোভিড পরিস্থিতিতে গঙ্গাসাগর মেলায় অনুমতি দিলেও, সামাজিক দূরত্ববিধি, জমায়েত না করার মতো শর্ত বেঁধে দিয়েছে কলকাতা হাই কোর্ট। কোথাও কোনও ভুলচুক চোখে পড়লে মেলা বাতিল করা হতে পারে বলেও জানিয়ে দিয়েছে। তার জন্য তিন সদস্যের কমিটিকে নজরদারির দায়িত্ব সঁপেছে আদালত। কিন্তু ওই কমিটিতে বিজেপি-র বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দুকে রাখা নিয়েই বিতর্ক শুরু হয়েছে। নবান্নের অভিযোগ, বিরোধী দলনেতাকে ওই কমিটিতে সামিল করায়, মেলায় রাজনৈতিক রং লেগেছে। রাজ্য সরকার এই মেলাকে ঘিরে কোনওরকম রাজনৈতিক বিতর্ক চাইছে না। এই বিষয়ে রাজ্যের বক্তব্য, শুভেন্দু এক জন আদ্যোপান্ত রাজনৈতিক মানুষ। বিরোধী দলনেতা তিনি। তাই গঙ্গাসাগর মেলার নিরপেক্ষ কমিটিতে তাঁকে কোনও ভাবেই রাখা উচিত নয়। কারণ তাতে গঙ্গাসাগর মেলায় রাজনীতির রং লাগবে। অযথা রাজনৈতিক বিতর্ক তৈরি করা হবে এবং কমিটির আশ্রয় নিয়ে কিছু মানুষ রাজনৈতিক ফায়দা তুলবেন। তাই এই কমিটিতে শুভেন্দুর অন্তর্ভুক্তি মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই রাজ্যের আর্জি শুভেন্দুর পরিবর্তে কোনও চিকিৎসককে এই কমিটির সদস্য করা হোক। রাজ্য সরকার এদিন সেই মর্মে ৩জন চিকিৎসকের নামও আদালতে জমা দিয়েছে। যদিও আদালত এই নিয়ে কোনও সিদ্ধান্তের কথা জানায়নি।
একই সঙ্গে কোভিড আবহে গঙ্গাসাগর মেলা করা কতখানি যুক্তিসংগত হবে তা নিয়ে আদালতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার জন্য সোমবার একাধিক আবেদন জমা পড়ে কলকাতা হাইকোর্টে। আদালত স্বতঃপ্রণোদিত পদক্ষেপ করে মেলা বন্ধ করে দিক, এই মর্মে আদালতে ৫টি ভিন্ন ভিন্ন আবেদন জমা পড়েছে। মামলাকারীদের আশঙ্কা, ১৪ তারিখ পর্যন্ত মেলা চললে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি আরও খারাপ হবে। যদিও রাজ্যের তরফে এদিনও আদালতে জানানো হয়, মেলার উপর কড়া নজরদারি রয়েছে। কোভিডবিধি মেনেই চলবে মেলা। যদিও মামলাকারীদের দাবি,গণপরিবহণে অধিকাংশ যাত্রীই মাস্ক ছাড়া যাতায়াত করছেন। এখনও আমজনতা সচেতন নয়। গত ৩ তারিখ থেকে ১০ তারিখ পর্যন্ত উল্কার গতিতে বেড়েছে করোনা সংক্রমণ। এমনকী, মেলায় যোগ দেওয়ার জন্য যাঁরা আসছেন তাঁদের মধ্যেও অনেকে সংক্রমিত। অনেকে উপসর্গহীন। এই পর্যায়ে মেলা হলে রাজ্যের কোভিড পরিস্থিতি সামাল দেওয়া যাবে না। এত বড় মেলায় কোভিডবিধি যথাযথভাবে পালন করা হচ্ছে কি না, তার উপর নজরদারি করা কার্যত অসম্ভব। এমন পরিস্থিতিতে ১৪ তারিখ পর্যন্ত মেলা চললে রাজ্যের করোনা পরিস্থিতি আরও সঙ্গীন হবে।