নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে(TMC) হারাতে পঞ্চায়েত নির্বাচনের(Panchayat Election) অনেক আগে থেকেই রাম-বামের জোট দেখা যাচ্ছিল মেদিনীপুরের মাটিতে। কোনওটা ছিল ‘নন্দকুমার মডেল’ তো কোনওটা ছিল ‘পাঁশকুড়া মডেল’। এমনকি বাংলাজুড়ে আলোচনা শুরু হয়ে গিয়েছিল পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই মডেলেই জোট গড়ে তৃণমূলকে হারাতে পারা যায় কিনা। যদিও পরবর্তীকালে বামেরা যেমন জানিয়েছিল রামের হাত ধরতে পারবে না, তেমনি পদ্মশিবিরের তরফেও জোট না গড়েই তৃণমূলের বিরুদ্ধে লড়াই করার কথা বলা হয়। যদিও বাস্তবে দেখা যাচ্ছে জেলা পরিষদ স্তরে কোনও জোট না হলেও পঞ্চায়েত সমিতি ও গ্রাম পঞ্চায়েত স্তরে বহু এলাকাতেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে হাতে হাত মিলিয়েছে রাম-বাম জোট। কিন্তু এর ঠিক উল্টো ছবি দেখা যাচ্ছে পূর্ব মেদিনীপুরের(Purba Midnapur) হলদিয়া মহকুমার খেজুরি(Khejuri) ১ ও ২ ব্লকে। সেখানে অভিযোগ উঠেছে বিজেপির(BJP) সন্ত্রাসে বহু আসনে নাকি প্রার্থীই দিতে পারেনি বামেরা।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েত ভোটের আবহেই বাংলায় নয়া CBI তদন্তের নির্দেশ
খেজুরি একসময় ছিল বাম দুর্গ। আরও বলা ভাল সিপিআই(এম)’র দুর্গ। পরিবর্তনের পরে সেখানে ঝান্ডা উড়েছিল তৃণমূলের। কিন্তু অধিকারীদের দলবদলের সঙ্গে সঙ্গে খেজুরির বুকেও রঙ বদলেছে। একুশের ভোটে সেখানে জিতেওছে বিজেপি। আর তারপর থেকেই সেখানে বার বার বিজেপির বিরুদ্ধে উঠছে সন্ত্রাসের অভিযোগ। এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও সেই ছবি বদলালও না। রাজ্যের বহু জায়গায় যখন তৃণমূলকে হারাতে তলে তলে রাম-বাম জোট মাথাচাড়া দিয়েছে ঠিক তখনই বামেদের লড়াই করতে হচ্ছে রামের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধেই। অভিযোগ উঠেছে খেজুরির ২টি ব্লকেই বহু আসনে বিজেপির সন্ত্রাসের জেরে প্রার্থীই দিতে পারেনি বামেরা। এমনকি মনোনয়ন দাখিলের পর্বে DSR কাটার পরেও বিজেপির সন্ত্রাসে খেজুরিতে মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি বহু সিপিআই(এম)(CPIM) নেতা-কর্মী। গত বিধানসভা ভোটের পর খেজুরিতে ঘর গোছানোর কাজে মন দেয় বামেরা। বিজেপিতে চলে যাওয়া কর্মীদের অনেকেই সেই সময় থেকেই ফিরে আসতে শুরু করেন।
আরও পড়ুন বাংলার ৭ লক্ষ আবাস উপভোক্তার আধার যাচাই আটকে দিয়েছে কেন্দ্র
২০১৮ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে খেজুরি-১ ও ২ ব্লকে সেভাবে প্রার্থীই দিতে পারেনি সিপিআই(এম)। এবার খেজুরির সব আসনে তাঁরা প্রার্থী দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়েছিলেন। সেই লক্ষ্যে গত ৯জুন থেকে দুটি ব্লকেরই BDO অফিসে DSR ফর্ম কাটা শুরু করে বাম নেতৃত্ব। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে তারপর থেকেই শুরু হয় বাম নেতাকর্মী থেকে সম্ভাব্য প্রার্থীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হুমকি দেওয়ার পালা। আর তার জেরেই এবারেও অনেক বাম প্রার্থী মনোনয়ন জমা দিতে পারেননি। খেজুরি-১ ব্লকের বালিচক গ্রামের অনুপ মান্না, তল্লা গ্রামের রামকানু গোল, চিঙুরদনিয়া গ্রামের বকুল প্রধান সহ অনেকে বাম শিবিরের প্রার্থী হতে চেয়েছিলেন। সেই আশায় BDO অফিসে গিয়ে DSR ফর্ম সংগ্রহ করেছিলেন। তাঁদের অভিযোগ, গেরুয়া শিবির তাঁদের প্রার্থী হতে বাধা দিয়েছে। আবার খেজুরি-২ ব্লকের মানসিংহবেড় গ্রামের কৃষ্ণেন্দু দাস, দেখালি গ্রামের হরিপদ আদক, কসারিয়ার উত্তম ঢালি সিপিএম প্রার্থী হওয়ার DSR ফর্ম কেটেছিলেন। কিন্তু তাঁদের কেউই শেষ পর্যন্ত তাঁদের মনোনয়ন দাখিল করতে যেতেই পারেননি।
আরও পড়ুন কেন্দ্রীয় বাহিনীকে ঘিরে সুপ্রিম কোর্টের পথে রাজ্য
তবে বিজেপির হুমকি, সন্ত্রাস সত্ত্বেও খেজুরি-১ ব্লকে গ্রাম পঞ্চায়েতে ১২০টির মধ্যে ৮৩টি আসনে প্রার্থী দিয়েছে সিপিআই(এম)। এছাড়া পঞ্চায়েত সমিতির ১৮টির মধ্যে ১৭টিতে এবং জেলা পরিষদের ২টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে সিপিআই(এম)। খেজুরি-২ ব্লকে গেরুয়া শিবিরের হুমকি-ধমকি অনেকটাই বেশি। তাই সেখানে গ্রাম পঞ্চায়েতে সিপিআই(এম) প্রার্থীর সংখ্যাও বেশ কম। ওই ব্লকে ১২৪টির মধ্যে মাত্র ৪৪টি আসনে প্রার্থী দিতে পেরেছে সিপিআই(এম)। এছাড়া পঞ্চায়েত সমিতিতে ১৫টির মধ্যে ১২টি এবং জেলা পরিষদে ২টি আসনেই প্রার্থী দিয়েছে তাঁরা। মজার কথা একসময় যে সিপিআই(এম)’র সন্ত্রাসে ৩৪ বছর ধরে বাংলার বুকে বিরোধীরা সন্ত্রস্ত হয়ে থাক্তো, এখন সেই সিপিআই(এম)-কেই বিজেপির সন্ত্রাসে ভোট ময়দান ছেড়ে পালিয়ে বেড়াতে হচ্ছে।