সুব্রত রায়, নিসর্গ নির্যাস: দুরন্ত পায়ে ফুটবল (FOOTBALL) নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন মাঠে ছুটে বেড়িয়েছেন তিনি। তাঁর কদর করেছে বিশ্ব। তবে গেঁয়ো যোগী পায়নি ভিখ। পৌলমী অধিকারীর পরিচয় এখন শুধুই ‘জোমাটো গার্ল’। পেটের ভাত জোগাড় করতে ফুটবলের বদলে তিনি ছোটেন অন্যের খাবার নিয়ে। দেশের প্রতিনিধিত্ব করা ফুটবলারের আক্ষেপ, ‘মহিলারা আদৌ সম্মান পান!’ সেই সম্মান মানে তো শুধুই বাসে থাকা লেডিস সিট!
বেহালার শিবরামপুরের বাসিন্দা পৌলমী। চারুচন্দ্র কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্রী। ফুটবল নিয়ে একসময়ে ছুটে বেড়িয়েছেন দেশের বিভিন্ন রাজ্য এবং বিদেশে। জার্মানি, ইংল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, শ্রীলঙ্কার মাঠে ফুটবল নিয়ে ছুটে বেড়িয়েছেন দুরন্ত গতিতে। ভারতীয় মহিলা দলের সদস্য হয়ে খেলেছেন অনুর্ধ্ব ১৬, হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপ। তবে সেসব অতীত। আজ তিতি হোম ডেলিভারি গার্ল। পরিচয় এখন শুধুই এই। পেটের ভাত জোগাড় করতে বেসরকারি সংস্থা ‘জোমাটো’র হয়ে বাড়ি বাড়ি খাবার পৌঁছন তিনি। কাজ করেন বেসরকারি হোম ডেলিভারি সংস্থা ‘সুইগি’তেও। এলিট ক্লাসের লোকজন তাঁকে ডাকেন, ‘জোমাটো’ বা ‘সুইগি’ বলেই। নাম টুকু পর্যন্ত হারিয়ে যেতে বসেছে প্রতিভাবান ফুটবলারের। এ যে অস্তিত্ব সংকট! এত প্রতিভা থাকতে এই কাজ কেন? পৌলমী’র শুকনো হাসিতে জবাব ‘কিছু তো করে খেতে হবে’।
তাঁর ছোটবেলাতেই প্রয়াত হয়েছেন মা। বিয়ে হয়ে গিয়েছে দিদি’র। বাড়িতে সদস্য বলতে বাবা ও তিনি। সংসারের বেশির ভাগটাই চলে তাঁর রোজগার থেকেই। সেই টাকা থেকেই পড়াশোনা। কেমন রোজগার হয়? তেল খরচা বাদ দিলে খুব বেশি হলে দিনে ৩০০ বা ৪০০ টাকা। আর কোনও কোনও দিনে ১৫০ বা ২০০ টাকা।
সম্মাননা বা সম্বর্ধনা পেয়েছেন? পৌলমীর জবাব, ‘না’। তিনি বলেন, এসব অনেক দূর। কেউ ন্যূনতম সম্মানটুকু দেন না। থাকে না আন্তরিকতাও। আক্ষেপ, বাসে লেডিস সিট থাকলেই তো আর সম্মান হয়ে যায় না। তাঁর পাল্টা প্রশ্ন, মহিলাদের সম্মান আদৌ আছে কি? এরপরেই বলেন, পুরুষ হলে এসব হতো। সংবাদে সংবাদে ভরে যেত!
জার্মানি তাঁকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে বিনামূল্যে। ২০১৩ সালের এশিয়া কাপে তিনি কাঁপিয়েছেন ময়দান। ২০১৬ সালের হোমলেস ওয়ার্ল্ড কাপে তিনি ঝড় তুলেছিলেন। সে সবই এখন ধুলোর আস্তরণ পড়া সোনালী স্মৃতি। ফুটবলারের নেই ডায়েট চার্ট অনুযায়ী খাওয়া, নেই ভালো জুতো। আছে একটা মলিন ফুটবল। কাজের ফাঁকে ওই প্রিয় ফুটবলকে পায়ে তুলে নাচান ফুটবলার থুড়ি জোমাটো গার্ল।