নিজস্ব প্রতিনিধি: বাবা-মায়ের অক্ষর জ্ঞানটুকুও নেই। অনেকেই নিজের সইটাও করতে পারেন না। কিন্তু ছেলেমেয়েদের আর এই অবস্থায় দেখতে চান না। বরঞ্চ চান, তারা লেখাপড়া শিখে নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। তাই ছেলেমেয়েদের তাঁরা স্কুলে ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু বাধ সাজল কোভিড। তার জেরে প্রায় দুই বছর স্কুল বন্ধ। ছেলেমেয়েরা যেটুকু শিখেছিল সেটাও ভুলতে বসেছিল। এই অবস্থার পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয়েছে ’১১ টাকার টিউশন’(11 Takar Tuitions)। কী এই ’১১ টাকার টিউশন’? আর কোথায় তাঁরা অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়েছেন?
জানা গিয়েছে, এই ’১১ টাকার টিউশন’ আদতে পশ্চিম মেদিনীপুরের বিদ্যাসাগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ১১জন গবেষকের সন্মিলিত একটি দল। কোভিডকালে এরা মেদিনীপুর(Midnapur) শহর লাগোয়া ফুলপাহাড়ী(Fulpahari) এলাকায় লোধা ও শবর(Lodha Shabar) পাড়ায় গিয়েছিলেন সমীক্ষার কাজে। সেখানে গিয়ে দেখেন দীর্ঘদিন ধরে স্কুল বন্ধ থাকার জেরে সেখানকার পড়ুয়ারা কার্যত অক্ষর জ্ঞানটুকুও ভুলতে বসেছিল। তার জেরেই ওই গবেষকেরা সিদ্ধান্ত নেন গ্রামে নিত্যদিন শিশুদের পড়াশোনা চালিয়ে নিয়ে যাওয়ার। সেই গ্রামেই কার্যত শুরু হয় ‘১১ টাকার টিউশন’। এই বিষয়ে ওই গবেষক দলের তরফে জানা গিয়েছে, কোভিডকালে তাঁরা ফুলপাহাড়ীর লোধা-শবর পাড়ায় গিয়েছিলেন সমীক্ষার কাজে। সেখানে গিয়ে যে পরিবেশের সামনে তাঁরা দাঁড়ান সেখানে শিক্ষার আলো কার্যত নিভেই গিয়েছিল। কেননা তাঁরা দেখেন, কোভিডের জেরে অনেক পড়ুয়ার বাবা-মা কাজ হারিয়েছেন। পেটের তাগিদেই বাড়ির ছেলেরা স্কুল ছেড়ে বাইরে চলে গিয়েছে কাজের সন্ধানে। স্কুলে যেটুকু কচিকাঁচারা শিখেছিল সেটাও ভুলতে বসেছে তারা।
এই অবস্থায় ওই গবেষকেরা দেখেন, লোধা-শবর পরিবারের বাবা-মায়েরা নিজেরা সইটুকুও করতে না পারলেও, তাঁরা চান ছেলেমেয়েরা শিক্ষার আলোয় আলোকিত হোক। তাই গবেষকেরা যখন গ্রামে ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের প্রস্তাব দিয়েছিলেন তাঁদের তখন তাঁরা জানিয়েছিলেন তাঁদের টিউশন দেওয়ার মতো সামর্থ্য নেই। তাতে গবেষকেরা জানিয়েছিলেন তাঁরা বিনামূল্যেই পড়াবেন। কিন্তু সেখানেও আপত্তি। বিনামূল্যে ছেলেমেয়েদের পড়াতে চান না লোধা শবর পরিবারের মানুষেরা। শেষে ঠিক হয় মাসিক ১১টাকার বিনিময়ে এই পাঠশালা চলবে। সেই থেকেই নাম ’১১ টাকার টিউশন’। প্রতি সপ্তাহে সোম থেকে শনি প্রতিদিন সকাল সাড়ে ৬টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত চলে সেই টিউশনের ক্লাস। প্রতি রবিবার দাবা, আঁকা, নাচ, গানের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। আগে এই পাঠাশালায় পড়ুয়া কম থাকলেও এখন তা বেড়ে কার্যত ১০০ ছুঁই ছুঁই করছে।