নিজস্ব প্রতিনিধি: ভাবাচ্ছে। সবাইকে ভাবাচ্ছে। মুখে তাঁরা যতই বলুন না কেন, ‘ভিক্ষা দিচ্ছে’, ‘দান খয়রাতির রাজনীতি করছে’, বাস্তবে কিন্তু তাঁদের নিজেদেরও ভাবতে হচ্ছে। ২৪’র ভোটে(General Election 2024) লক্ষ্য বাংলার(Bengal) মাটি থেকে ৩৫ আসন ছিনিয়ে নেওয়া। কিন্তু সেই আসন পেতে গেলে খুব কম করেও রাজ্যের ৪ কোটি ভোটারের সমর্থনের প্রয়োজন। কিন্তু গতকাল অর্থাৎ ৮ ফেব্রুয়ারি রাজ্য বিধানসভায় যে বাজেট(State Budget 2024-25) পেশ হয়েছে তাতে করে চোখ বুজে ৩ কোটি ভোট নিশ্চিত করে ফেলছে রাজ্যের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস(TMC)। অন্তত তেমনটাই মনে করছেন রাজ্যের অর্থনীতিবিদ থেকে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন থাকছে, যদি ধরে নেওয়া যায় তৃণমূল বিরোধী সব ভোট বিজেপির(BJP) ঝুলিতে যেতে চলেছে তাহলেও ৩৫ আসন পাওয়া তো বহু দূর, গতবারের জেতা বাংলার ১৮টি লোকসভা কেন্দ্রও ধরে রাখা অসম্ভব বিজেপির কাছে। এখন তাই লক্ষ্মীর ভান্ডার যেমন বিজেপির কাছে বড় মাথা ব্যাথা হয়ে দাঁড়িয়েছে তেমনি মাথা ব্যাথা হয়ে দাঁড়িয়েছে কন্যাশ্রী, রূপশ্রী, ঐক্যশ্রী, মেধাশ্রী, সবুজসাথী, খাদ্যসাথী, স্বাস্থ্যসাথী, শিশুসাথী, স্টুডেন্ট ক্রেডিট কার্ড, ভবিষ্যৎ ক্রেডিট কার্ড, কৃষকবন্ধু, বাংলা শস্য বিমার মতো আর্থসামাজিক প্রকল্পগুলিও। কার্যত বাংলার মাটিতে বিজেপিকে শুধু তৃণমূলের বিরুদ্ধেই লড়তে হচ্ছে তাই নয়, এই সব প্রকল্পের বিরুদ্ধেও লড়তে হচ্ছে।
একুশের ভোটে বাংলার মাটিতে তৃণমূলের ভোট প্রাপ্তির হার ছিল ৪৮ শতাংশ। ভোট সংখ্যার হিসাবে ২ কোটি ৮৭ লক্ষ ৩৫ হাজারের সামান্য বেশি। অন্যদিকে বিজেপি পেয়েছিল প্রায় ৩৮ শতাংশ ভোট। সংখ্যার হিসাবে ২ কোটি ২৮ লক্ষ ৫০ হাজারের সামান্য বেশি। সেই ভোটের ৩ বছর বাদে যখন আরও একটা ভোট দুয়ারে কড়া নাড়ছে তখন কিন্তু বাংলার মাটিতে রীতিমত পা পিছলে ধপাস হয়ে গিয়েছে পদ্মশিবির। খাস কলকাতার বুকে শাহি সভা সুপার ডুপার ফ্লপ। একই সঙ্গে হাজারো ঢাক পেটানো গীতাময় ব্রিগেডও ফ্লপ। বাংলার ৮০ হাজার বুথের মধ্যে ৪০ হাজার বুথে বিজেপির কোনও সংগঠনই নেই। একই সঙ্গে সব সমীক্ষাই বলছে দেশে আর যাই হোক বাংলার মাটিতে বিজেপির ভোট প্রাপ্তির হার ভাল রকম কমতে চলেছে ২৪’র ভোটে। রাজ্যে এখন পুরুষ ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৮৫ লক্ষ ৩০ হাজারের সামান্য বেশি। অন্যদিকে মহিলা ভোটারের সংখ্যা ৩ কোটি ৭৩ লক্ষ ৪ হাজারের সামান্য বেশি। এর মধ্যে আবার ২ কোটি ১১ লক্ষ মহিলা লক্ষ্মীর ভান্ডারের সুবিধা পান। সেই হিসাবে খুব কম করেও তৃণমূলের ঝুলিতে প্রায় ২ কোটি মহিলার ভোট ঢুকে গিয়েছে ধরাই চলে। আবার অনান্য নানা প্রকল্পের কারণে পুরুষদের মধ্যেও প্রায় ২ কোটি ভোট তৃণমূলের ঝুলিতে সুনিশ্চিত ভাবেই আসছে। তাহলে বিজেপির জন্য পড়ে থাকল কী? ৩৫ আসন আসবেই বা কোন পথে? ভাবাচ্ছে বিজেপিকে।
লক্ষ্মী দিয়ে ভোটলক্ষ্মীকে ঘরে তোলার কাজে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) যে অনন্য, তা ভূভারতে কেউ অম্বীকার করতে পারছেন না। মমতার পদচিহ্নময় পথেই হাঁটছেন দেশের সব নেতারা। একবার লক্ষ্মীর ভাণ্ডারে জায়গা পেয়ে গেলে জীবনভর মাসিক আয় ন্যূনতম ১০০০ টাকা। কে দেয়? দেশের অর্থশাস্ত্রীরা যতই নতুন নতুন করে মমতার আর্থসামাজিক প্রকল্পগুলির নেতিবাচক দিক দেখান না, ভোটবাক্সে কিন্তু তার প্রতিফলন ইতিবাচকই হতে চলেছে। গতকালের রাজ্য বাজেটের ভূয়সী প্রশংসা করছেন অর্থনীতিবিদদের একাংশ। তাঁদের দাবি এই বাজেট জনমুখী। কেন্দ্রীয় সরকারের হাজারো বঞ্চনা উপেক্ষা করেও যেভাবে সাধারণ, গরিব, খেটে খাওয়া মানুষের দিকে তাকিয়ে বাজেট করা হয়েছে তা রীতিমত প্রশংসনীয়। কীভাবে উন্নয়ন করতে হয় বাংলা সরকার সেটা দেখিয়ে দিচ্ছে। গোটা দেশ ঋণের বোঝায় ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলার সরকার দেখিয়ে দিচ্ছে কীভাবে উন্নয়ন করতে হয়। আগামী দিনে দেশের সব নেতামন্ত্রীদেরই কিন্তু বাংলার দেখানো পথেই হাঁটতে হবে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দেখানো পথে হাঁটতে হবে, দাবি অর্থনীতিবিদদের।