নিজস্ব প্রতিনিধি: গ্রাম বাংলার বুকে অনেকের বাড়িতেই দীর্ঘকাল ধরে দুর্গাপুজো(Durga Puja) হয়ে আসছে। কোনওটার বয়স ৩০০ বছর তো কোনওটার বয়স ৫০০ বছর। তর্ক সেখানে দূরে থাকে, মানুষ আঁকড়ে ধরে বিশ্বাসকে। সেই বিশ্বাসের ওপর ভর দিয়ে জাঁকজমকহীন ভাবে আজও অনেক পরিবারে দুর্গাপুজোর আয়োজন হয়ে থাকে। সেইরকমই এক পরিবার হল নদিয়া(Nadia) জেলার নাকাশিপাড়া(Nakashipara) ব্লকের বাহিরগাছি গ্রামের(Bahirgachi Village) ভট্টাচার্য পরিবার(Bhattacharya Family)। একসময় এই গ্রামের পাশ দিয়েই গঙ্গা বয়ে যেত। পরে তা গ্রাম থেকে বেশ দূরেই সরে যায়। সেই গ্রামেরই ভট্টাচার্য পরিবারে প্রতি বছর একসঙ্গে ৬টি দুর্গামূর্তি পূজিত হয়। বাংলার কোথাও এমন পুজো সচরাচর দেখা মেলে না। রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কার এই পরিবারে প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করলেও পরবর্তীকালে তাঁর ৬ পুত্রের হাত ধরে একসঙ্গে ৬টি দুর্গার পুজোর রীতি চালু হয়।
জানা গিয়েছে, ভট্টাচার্য পরিবারের আদি নিবাস ওপার বাংলার জেলার সারল গ্রামে। এই বংশের রঘুরাম সিদ্ধান্তবাগীশ ছিলেন নদিয়ার রাজা রুদ্র রায়ের গুরুদেব। সেই সূত্রেই এই পরিবারের যশোর থেকে নদিয়ায় আগমন। আবার এই বংশেরই পুরুষ পণ্ডিত রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কার ছিলেন নদিয়ারাজ কৃষ্ণচন্দ্র রায়ের গুরুদেব। রাজা কৃষ্ণচন্দ্র গঙ্গার ধারে বহিরগাছি গ্রামে তাঁর গুরুদেবের জন্য তিনি নির্মাণ করে দেন বসবাসের ঘর, পুজোর দালান, বারোটি শিবমন্দির ও একটি সিদ্ধেশ্বরী মন্দির। সেই বাড়ি নির্মাণের পরেই রামভদ্র ন্যায়ালঙ্কার এই পরিবারে প্রথম দুর্গাপুজোর প্রচলন করেন। সেউ সময়কার গঙ্গার খাত এখন নিছকই খাল। নাম তার গুড়গুড়ে খাল।
রামভদ্রের ছয় পুত্র— রামরাজ, রাজেশ্বর, রামকান্ত, রামহরি, রামগোবিন্দ ও রামানন্দ। প্রত্যেকেই ছিলেন পণ্ডিত। ছয় ভাই এক বার ৬টি দুর্গামূর্তি তৈরি করেন। সেই ৬টি মূর্তি এক সঙ্গে পূজিত হয়। এই ঘটনা ঘটে রামভদ্রের মৃত্যুর পর। তখন থেকেই শুরু ভট্টাচার্য বাড়ির ৬ দুর্গার পুজো। সেই পুজো আবার হয় শাক্ত মতে। পুজোর অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল অষ্টমীর দিন মায়ের জন্য রান্না করা হয় ইলিশ ভোগ। ইলিশ মাছ কাঁচা অবস্থায় সর্ষের তেলে ফোটানো হয়। এক ফোঁটা জলও ব্যবহার করা হয় না রান্নাতে। এই রান্নাকে পরিবারের লোকেরা বলেন ‘তেলমাছ’।