নিজস্ব প্রতিনিধি: পাহাড়ে আবারও অশান্তির ছায়া ঘনাচ্ছে। গোর্খাল্যান্ডের(Gorkhaland) জিগির তুলে পাহাড়ে সেই আগুন লাগাতে চাইছেন বিমল গুরুং(Bimal Gurung) – রোশন গিরিরা। সেই অশান্তিতে আবার হাত পাকিয়েছেন বিনয় তামাং ও অজয় এডওয়ার্ডসও। তবে সব থেকে বড় মদতটা আসছে অবশ্যই গেরুয়া শিবির থেকেই। এই অবস্থায় পাহাড়ের পরিস্থিতি নিয়ে সোমবার নবান্নে(Nabanna) এক বৈঠকে বসতে চলেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) ও জিটিএ(GTA) চেয়ারম্যান অনীত থাপা(Anit Thapa)। ২০০৭, ২০১৩ এবং ২০১৭ সালে মোর্চার পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের জেরে আগুন জ্বলেছে পাহাড়ে। সরকারি সম্পত্তি নষ্ট করা, বন্ধ সহ নানা মারমুখী আন্দোলনের জেরে বিপর্যস্ত হয়েছে পাহাড়। এ বার আরও একবার পাহাড়ে আগুন লাগাতে চান গুরুং-গিরি-তামাং-এডওয়ার্ডসরা। সেই পরিস্থিতি মোকাবিলা করতেই সোমবারের বৈঠক বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে।
আরও পড়ুন পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে ‘দুয়ারে সরকার’ শিবিরের ভাবনা নবান্নের
শুক্রবার জিটিএ চুক্তি থেকে নিজেদের সমর্থন প্রত্যাহার করেছে বিমল গুরুংয়ের গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। আর মোর্চার এই সিদ্ধান্তে পাহাড়ের রাজনীতি সরগরম হয়ে ওঠে। জিটিএ’র অস্তিত্ব নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ায়। শুক্রবারই এই ব্যাপারে দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি লিখেছেন রোশন গিরি। মোর্চার নেতাদের দাবি, পাহাড়ের উন্নয়ন ও শান্তির জন্য জিটিএ ত্রিপাক্ষিক চুক্তি সম্পাদিত হয়েছিল। সেই চুক্তি হয়েছিল ভারত সরকার, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও মোর্চার মধ্যে। এখন মোর্চা সেই চুক্তি থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। তাঁরা জিটিএ ছেড়েছে। কেন্দ্র সরকারও এই চুক্তি থেকে বেড়িয়ে গেলে জিটির’র অস্তিতে নিয়েই প্রশ্ন উঠে যাবে। যদিও পাল্টা প্রশ্ন উঠেছে, ত্রি-পাক্ষিক চুক্তি করে কোনও একটি পক্ষ কী হুট করে এভাবে তা নাকচ করে দিতে পারে বা তা থেকে কী বেড়িয়ে যেতে পারে?
আরও পড়ুন দক্ষিণেশ্বর মন্দিরে পুজো দিলেন রাজ্যপাল
এই বিতর্কের জেরে রবিবার কলকাতার পথে রওয়ানা হওয়ার আগে জিটিএ চেয়ারম্যান অনীত থাপা শনিবার শিলিগুড়ি পিনটেইল ভিলেজে সাংবাদিক বৈঠক করে রীতিমত আক্রমণ শানিয়েছেন পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতাদের উদ্দেশ্যে। সেই সঙ্গে রাজ্য সরকারের পাশে থাকার ও তাঁদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে পাহাড়ের উন্নয়ন চালিয়ে যাওয়ার বার্তাও দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, ‘আমরা জিটিএতে নির্বাচিত হয়ে এসেছি। এখন জিটিএ ছেড়ে দিচ্ছি বলার মানে কী? যখন মোর্চা জিটিএতে ছিল, তখন সেটা ভালো ছিল? আসলে গোর্খাল্যান্ডের নামে মোর্চা পাহাড়ে আগুন জ্বালাতে চাইছে। এই ধরনের নেতারাই আমাদের জাতিকে পিছিয়ে দিয়েছে। পাহাড়ের প্রতিটি মানুষের জন্য পানীয় জল, শিক্ষা, স্বাস্থ্য ও কর্মসংস্থানের সুযোগ নিশ্চিত করতে পারলেই পাহাড় সমস্যার স্থায়ী সমাধান হবে। আর এটা রাজ্য সরকারের সঙ্গে থেকে জিটিএ’র মাধ্যমেই করা সম্ভব। তাই আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গেই রয়েছি। এই কাজের জন্য জিটিএ’কে আরও শক্তিশালী করতে হবে। এব্যাপারে সোমবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে আমরা আলোচনায় বসব। জিটিএ বা গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনের চুক্তি থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সরে দাঁড়ানোয় কোনও সমস্যাই হবে না। কেননা জিটিএ চুক্তি এখন আইন হয়ে গিয়েছে। সেখানে কোথাও বলা নেই, স্বাক্ষরিতদের কোনও এক পক্ষ সরে দাঁড়ালে জিটিএর অস্তিত্ব সঙ্কট দেখা দেবে। এটা জেনেও মোর্চার এই সিদ্ধান্তের কারণ, রাজনৈতিক চমক দিয়ে কিছু নেতা তাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে চাইছেন। এই কারণেই তাঁরা আবার গোর্খাল্যান্ডের দাবি তুলতে শুরু করেছেন। এর পিছনে বিজেপির চালও রয়েছে।’