নিজস্ব প্রতিনিধি: ভোটের ৬-৭ মাস আগে থেকেই গেরুয়া শিবিরের সবাই জোর গলায় দাবি করতেন, বাংলায়(Bengal) আসন বাড়বেই ২৪’র ভোটে(Loksabha Election 2024)। তাল মিলিয়ে গোদি মিডিয়াও সকাল থেকে রাত অবধি শুরু করেছিল চ্যানেলে চ্যানেলে সুরে সুর মিলিয়ে ‘আপকে বার ৪০০ পার’। এই সব কিছুই থেমে গিয়েছে হুট করে আচমকাই। ১৯ এপ্রিল বিকাল থেকেই অদ্ভূত নৈশব্দতা নেমে এসেছে গেরুয়া শিবিরে। আর বাংলায় তো কথাই নেই। হাতেগোনা ২-৩জন বাদ দিয়ে গোটা দলটার মুখেই কেউ যেন কুলুপ এঁটে দিয়েছে। জোর গলায় কেউই দাবি করছে না, করতে পারছেন না, উত্তরবঙ্গের ভোট হয়ে যাওয়া ৩ আসনেই ফের জিতবে বিজেপি(BJP)। উল্টে সেই দাবি এখন বেশ জোর গলায় করে চলেছে তৃণমূল(TMC)। তাঁদের দাবি ৩ আসনেই জয় আসবে এবার। সেই ৩ আসনের পদ্মপ্রার্থীও কার্যত শুক্রবার বিকাল থেকেই থম মেরে গিয়েছেন। অন্তত তাঁদের নিকটজনদের তেমনটাই দাবি। ভোট বৈতরণী পার হওয়া যে খুব সহজ হচ্ছে না, সেটা সম্ভবত বুঝেই গিয়েছেন তাঁরা।
বাংলার যে ৩ আসনে ইতিমধ্যেই ভোট হয়ে গিয়েছে, সেখান ভোটের আগে প্রচার পর্বে সব থেকে বেশি চনমনে থাকতে দেখা গিয়েছে কোচবিহার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী তথা কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রকের প্রতিমন্ত্রী নিশীথ প্রামাণিককে। কিন্তু ১৯ তারিখ বিকাল থেকেই তিনি থম মেরে গিয়েছেন। বিজেপি সূত্রে জানা গিয়েছে, খুব একটা নাকি কথাবার্তা বলছেন না। বাড়িতেই আছেন। বিশ্রাম নিচ্ছেন। প্রায় একই ছবি আলিপুরদুয়ার লোকসভা কেন্দ্রের বিজেপি প্রার্থী মনোজ টিগ্গা এবং জলপাইগুড়ির বিজেপি প্রার্থী জয়ন্ত রায়ের ক্ষেত্রেও দেখা যাচ্ছে। তুলনায় চনমনে তৃণমূল শিবির। ৩ কেন্দ্রেই তাঁরা ইতিমধ্যেই আগাম বিজয় মিছিল সেরে ফেলেছে। রীতিমত উৎসবের আমেজ নেমে এসেছ জোড়াফুল শিবিরে। আর ৩ কেন্দ্রেই গেরুয়া শিবিরে নেমে এসেছে অদ্ভূত নৈশঃব্দতা। কেননা ধাক্কা তাঁরা সকলেই খেয়েছেন। তাঁদের কারও হিসাবের মধ্যে ছিল না যে প্রথম ২ ঘন্টায় ৩০ শতাংশ ভোট পড়ে যাবে আর দুপুর ১টার মধ্যে ৫০ শতাংশ মানুষ ভোট দিয়ে দেবেন। তাঁদের হিসাব ছিল না বুথের পর বুথে দলের এজেন্টদের দেখাই মিলবে না।
ভোট বিশেষজ্ঞদের দাবি, টানা প্রচারের পরে শরীরে ক্লান্তি নেমে আসে ঠিকই, কিন্তু সেটা নৈশঃব্দতা নয়। সেটা নেমে এলে ধরে নিতে হবে, জয় নিয়ে আছে বড় সংশয়। বিজেপির অন্দরে এখন সেই সংশয়ের ছবিটাই পরতে পরতে ধরা দিচ্ছে। যে জোর গলায় ৩ দিন আগেও পদ্মনেতারা প্রকাশ্যেই বলে বেড়াচ্ছিলেন ‘বিজেপি জিতছে’, তাঁরাই আজ মুখে কুলুপ এঁটে বসে গিয়েছেন। তাঁদের কেউই আজ জোর গলায় বলতে পারছেন না, ওই ৩ কেন্দ্রে বিজেপিই জিতবে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু যা বলার তা তাঁরা গতকালই জানিয়ে দিয়েছেন প্রকাশ্যেই। অভিষেক জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলা বিরোধীদের ঘরে ঘরে তৃণমূল সার্জিক্যাল স্ট্রাইক করেছে। ৩ কেন্দ্রেই তৃণমূল জিতছে। আর মমতা জানিয়েছেন আলিপুরদুয়ারে সম্ভবত তৃণমূলই জিতছে। দুইয়ের দাবির মধ্যে কিছুটা হলেও ফারাক থাকছে। কিন্তু তাতে তৃণমূলের শিবিরে বিজয় উৎসব থেমে যায়নি। বিজেপি কিন্তু থম মেরে গিয়েছে। শেষ হাসি কারা হাসবেন সেটা অবশ্য সেই ৪ জুনই জানা যাবে।