নিজস্ব প্রতিনিধি: আজ মে দিবস(May Day)। বিশ্ব আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবস(International Labour Day) হিসাবেই এই দিনটি গোটা বিশ্বে পালিত হয়। মূলত শ্রমিকদের নানা অধিকার এবং ৮ ঘন্টা ডিউটির দাবিতে যে রক্তাক্ষয়ী আন্দোলন গড়ে উঠেছিল, তারইও নির্যাস এই মে দিবস। যদিও বিশ্বের অধিকাংশ জায়গা থেকেই এখন ৮ ঘন্টার ডিউটির কনসেপ্ট উঠে গিয়েছে। পরিবর্তে কোথাও ১২ ঘন্টা, কোথাও বা ১০ ঘন্টা ডিউটির কনসেপ্ট চালু হয়েছে। ভারতেও যে ছবি বিশেষ উজ্জ্বল তা বলা যায় না। সরকারি ক্ষেত্রে ১০ ঘন্টা বা ১২ ঘন্টা ডিউটির চাপ না থাকলেও বেসরকারি ক্ষেত্রে তা আছে বৈকি। এই অবস্থায় এদিন সকালে মে দিবসের শুভেচ্ছা বার্তা দিলেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। আবার মুখ্যমন্ত্রীর সেই বার্তার পরে পরেই জানা গেল এদিন সকালেই উত্তরবঙ্গের(North Bengal) ডুয়ার্সে এক চা-বাগানে কাজ বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দিয়েছে বাগান মালিক কর্তৃপক্ষ। আর তার জেরে মে দিবসেই কাজ হারিয়ে বসে রইলেন সেই বাগানের প্রায় ১ হাজার শ্রমিক ও কর্মচারী।
এদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর শুভেচ্ছা বার্তায় লেখেন, ‘আমাদের সকল শ্রমিক ভাই-বোনকে জানাই আন্তর্জাতিক শ্রমিক দিবসের আন্তরিক শুভেচ্ছা। শ্রমিকরা আমাদের সমাজের সম্পদ। তাঁদের নিয়ে আমরা গর্বিত। আমি সবসময় তাঁদের পাশে থাকি। ‘বিনামূল্যে সামাজিক সুরক্ষা যোজনা’র মতো যুগান্তকারী প্রকল্প চালু করা থেকে কেন্দ্রের কাছ থেকে ১০০ দিনের কাজের টাকা পাওয়া থেকে বঞ্চিত রাজ্যের ৫৯ লক্ষ গ্রামীণ শ্রমিকের টাকা রাজ্যের নিজস্ব তহবিল থেকে মিটিয়ে দেওয়া – বরাবর আমরা সকল ক্ষেত্রে শ্রমিক ভাই-বোনেদের পাশে থেকেছি, আগামীতেও থাকবো।’ মুখ্যমন্ত্রীর এই বার্তার মাঝেই জানা গেল, উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার ধূপগুড়ি মহকুমার বানারহাট ব্লকের তোতাপাড়া চা বাগানে(Tota Para Tea Garden) কাজ বন্ধের নোটিস ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে। আর তার জেরে কাজ হারিয়েছেন বাগানের ৮৩০জন স্থায়ী কর্মীর পাশাপাশি অস্থায়ী শ্রমিকেরাও। সব মিলিয়ে সংখ্যাটা প্রায় ১২০০।
জানা গিয়েছে, বিগত বেশ কয়েকদিন ধরেই তোতাপাড়া চা বাগানে পাওনাগন্ডাকে কেন্দ্র করে শ্রমিক অসন্তোষ চলছিল। পিএফ, গ্র্যাচুইটির মতো বিভিন্ন পাওনা বাকি ছিল। শুধু তাই নয়, শ্রমিকদের ৩ পাক্ষিক সপ্তাহের মজুরিও বকেয়া ছিল। যার জেরে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন কর্মরত শ্রমিকরা। এরপর ২৭ এপ্রিল নিজেদের বকেয়া অর্থ বুঝতে চেয়ে শ্রমিকদের একাংশ বানারহাট থানায় গিয়ে অবস্থানে শামিল হন। বানারহাট বিডিও অফিসে একটি ত্রিপাক্ষিক বৈঠকও ডাকা হয়। তবে মালিকপক্ষের কেউ উপস্থিত না থাকায় সেই বৈঠক ভেস্তে যায়। কিন্তু মালিকপক্ষের তরফে একটি চিঠি দিয়ে প্রশাসনকে জানানো হয়, মঙ্গলবার বকেয়া মজুরির এক কিস্তির টাকা তাঁরা মিটিয়ে দেবেন। সেই টাকা গতকাল দিয়েও দেওয়া হয়। কিন্তু তারপরই রাত্রিবেলা কর্মবিরতির বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়। পুলিশ-প্রশাসনকেও মালিক পক্ষ জানিয়ে দেয় নিজেদের সিদ্ধান্তের কথা। বাগানে ঝুলিয়ে দেওয়া হয় তালা। এরপর আজ সকালে শ্রমিকরা কাজে এসে দেখেন বাগানে ঝুলছে তালা।
এই ঘটনায় তৃণমূলের চা বাগান শ্রমিক ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সভাপতি তবারক আলি জানিয়েছেন, ‘সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে বাগান বন্ধ করে দেওয়া হল। কাজ করিয়েও মজুরি দেওয়া হচ্ছিল না। নিজেদের হকের কথা জানাতেই শ্রমিকরা খারাপ হয়ে গেল। এমন মালিকপক্ষ আর যাই হোক কখনওপ্রকৃত শিল্পপতি নন। দ্রুত বাগান খোলার দাবি জানাচ্ছি।’ আবার চা শ্রমিক নেতা অজয় মাহালি জানিয়েছেন, ‘কোন সমস্যা থাকলে মালিকপক্ষ তা আলোচনার মাধ্যমে মেটাতে পারতেন। সেটা না করে শ্রমিক দিবসের ঠিক আগের রাতে এভাবে বাগান বন্ধ করে চলে যাওয়ার ঘটনার ঘোর নিন্দা জানাই। হাজার শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়লেন শ্রমিক দিবসের দিনেই।’