নিজস্ব প্রতিনিধি: ২০২১-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে ‘পরিযায়ী পাখি’র মত বঙ্গে এসে ভিড় জমিয়েছিলেন একঝাঁক বিজেপি নেতা। বিভিন্ন জেলার কৃষক, আদিবাসী, সঙ্গীতশিল্পী, দিনমজুরের বাড়িতে দুপুরের খাওয়া দাওয়া সেরে ভোটের আগে ‘শো অফ’ প্রচার সেরেছিলেন। কিন্তু ভোটবাক্সে ভরাডুবি হয়ে আর দেখা নেই সেই বিজেপি নেতাদের। ভোটের আগে দেওয়া আশ্বাসের গ্যাস বেলুন ফেঁসে গিয়েছে। তাই এখন হা হুতাশ করছেন সেই সমস্ত মানুষগুলি যারা বিজেপির অতিথিদের ঘরে অ্যাপ্যায়ন করেছিলেন। যার মধ্য অন্যতম বাঁকুড়ার অখ্যাত গ্রাম চতুর্ডিহির জনমজুর বিভীষণ হাঁসদা। আজ থেকে ঠিক একবছর আগে তাঁর বাড়িই হয়ে উঠেছিল বাংলার মূল চর্চার জায়গা। কারণ একুশের নির্বাচনের আগে বিভীষণ হাঁসদার বাড়িতেই দুপুরের ভোজ খেতে এসেছিলেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।
তাঁর জন্যই আয়োজন করেছিলেন বিভীষণের বাড়ির লোকেরা। ইচ্ছা ছিল স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে কাছে পেয়ে নিজের মেয়ের রোগের চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা। সেইদিন আশ্বাস দিলেও তা আর পূরণ হয় নি। কিছুদিন ইঞ্জেকশন ও ওষুধের খরচ দিলেও ভোটের পর বিভীষণ বাবুর নামটাই ভুলে গিয়েছে বঙ্গ বিজেপি। আক্ষেপ হাঁসদা পরিবারে। ২০২০ সালের ৫ নভেম্বর সেজে উঠেছিল বিভীষণের বাড়ি। সে দিন বাংলায় সফরে থাকা অমিত শাহ ছাড়াও বিভীষণের বাড়িতে মধ্যাহ্নভোজ সেরেছিলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ থেকে কৈলাস বিজয়বর্গীয়-সহ আরও অনেকেই। বিভীষণ শাহকে নিজের মেয়েরত দুরারোগ্যের কথা জানিয়েছিলেন। আর্জি ছিল এইমসে চিকিৎসা করানোর, যা পূরণ করবেন বলে জানিয়ে যান শাহ। কিন্তু সেই ৫ তারিখেই দেওয়া কথা বেমালুম ভুলেই গিয়েছেন শাহ।
আক্ষেপে সংবাদমাধ্যমে বিভীষণ বাবু জানিয়েছেন, ‘সবাই বলেছিল, আমার অসুস্থ মেয়ের চিকিৎসার ভার নেবে। দিল্লির এইমসে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করবে। প্রথম প্রথম ওষুধ, ইঞ্জেকশনের ব্যবস্থাও করেছিল। কিন্তু এখন কেউ খোঁজটুকুও নেয় না। কেউ কথা রাখেনি। আমরা স্বামী-স্ত্রী অন্যের জমিতে দিনমজুরি করি। যা উপার্জন করি তা দিয়েই মেয়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে হয়। আমার মেয়েকে রোজ চার বার ইনসুলিন দিতে হয়। সঙ্গে কয়েকটি ওষুধও খেতে হয়। সব মিলিয়ে মাসে পাঁচ হাজারেরও বেশি টাকা খরচ। প্রথমে অনেকে সাহায্য করেছিলেন। এখন আর কেউ খোঁজটুকু রাখেন না।’ সূত্র মারফত জানা গিয়েছে, গতবছরের ৫ নভেম্বর শাহ বঙ্গের নেতাদের বিভীষণের মেয়ে রচনার চিকিৎসার দায়িত্ব নিতে বলেন। প্রথম প্রথম বিভীষণ বাবুর বাড়ি গিয়ে সমস্ত তথ্য ও ডাক্তারি সার্টিফিকেট নিয়ে, রক্ত পরীক্ষা করে ও ওষুধ আর সবরকম সাহায্য করতেন বাঁকুড়ার সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সুভাষ সরকার। কিন্তু তাঁর পাত্তাও এখন পাওয়া যায় না বলেই দুঃখপ্রকাশ করেছেন বিভীষণ বাবু। যদিও এই অভিযোগ সম্পূর্ণ অস্বীকার করেছেন বিজেপি সাংসদ সুভাষ সরকার।