নিজস্ব প্রতিনিধি: দুই বর্ধমান, বীরভূম, বাঁকুড়া, পশ্চিম মেদিনীপুর ও হুগলি জেলা। দক্ষিণবঙ্গের(South Bengal) এই জেলাগুলিতে দীর্ঘদিন ধরেই নদী থেকে বালি পাচারের কাজ চলছে দিনদুপুরে। বালি মাফিয়াদের(Sand Mafia) দাপটে সেই সব নিয়ে কার্যত সরব হন না এলাকার বাসিন্দারাও। কারণ মুখ খুললেই জীবন নিয়ে সংশয় তৈরি হয়ে যাবে। তার মধ্যেই রাজ্য সরকার(West Bengal State Government) বালি চুরি ঠেকাতে একাধিক পদক্ষেপ নিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হল যে রাস্তা দিয়ে ট্রাকের পর ট্রাক বালি নিয়ে যায় সেই সব রাস্তায় নাকা চেকিং। সেই নাকা চেকিং করতে গিয়েই সম্প্রতি রাজ্য পরিবহণ দফতরের(State Transport Department) আধিকারিকেরা হাতেগরমে এক চাঞ্চল্যকর তথ্য পেয়েছেন। কুপনে(Coupun) ‘বিশ্ববাংলা’ লোগো(Biswabangla Logo) ছাপিয়ে চলছে দেদার বালি পাচার। আর তা করছে বালি মাফিয়ারাই। ওই কুপনে লেখা থাকছে, ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল পরিবহণ ডিপার্টমেন্ট সুরক্ষা কমিটি পরিষেবা’। চাঞ্চল্যকর এই ঘটনা সামনে আসতেই ওই কুপন সম্পর্কে প্রতিটি জেলা প্রশাসনকে সতর্ক করে দিয়েছে রাজ্য প্রশাসন।
আরও পড়ুন মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এখনই নয় মামলা, হতাশ বিকাশ
ঠিক কী হয়েছে? নবান্ন(Nabanna) সূত্রে জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহের প্রথমদিকে পূর্ব বর্ধমান জেলার শক্তিগড়ে রাতের বেলায় নাকা চেকেইংয়ের সময়ে বালি ভর্তি একটি ওভারলোডেড ট্রাক আটক করেছিলেন রাজ্যের পরিবহণ দফতরের আধিকারিকেরা। ট্রাকের চালক সেই সময় আধিকারিকদের মেজাজ দেখিয়ে বলেছিলেন, সরকারি অনুমতি রয়েছে। তারপরেই তিনি ওই কুপনটি দেখান। তা দেখে সন্দেহ হয় আধিকারিকদের। তাঁরা খোঁজখবর নিয়ে দেখেন এরকম কোনও কুপন সরকার আদৌ চালু করেনি, পুরোটাই জাল। এরপরেই শক্তিগড় থানার পুলিশ ট্রাকটিকে আটকে কেস দেয়। বিষয়টি পরিবহণ দফতরের শীর্ষ কর্তাদের পাশাপাশি নবান্নেও জানানো হয়। তারপরেই ওই কুপন সম্পর্কে প্রতিটি জেলাকে সতর্ক করা হয়েছে নবান্নের তরফ থেকে।
আরও পড়ুন প্রতি বুথ থেকে ৩টি করে নাম, মাথায় হাত বঙ্গ বিজেপির
প্রাথমিক ভাবে জানা গিয়েছে, ট্রাকটি বীরভূমের ইলামবাজার থেকে কলকাতা যাচ্ছিল। দীর্ঘ পথ পেরিয়ে আসার পর শক্তিগড়ে সেটিকে আটক করা হয়। বালি মাফিয়ারা প্রশাসনের চোখে ধুলো দেওয়ার জন্যই এই ধরনের কুপন তৈরি করেছিল। আর সেই কুপন দেখিয়েই দিন দুপুরে অবাধে বালি পাচার চালিয়ে যাচ্ছে বামি মাফিয়ারা। ওই কুপনটিকে তারা ‘প্যাড’ হিসেবে ব্যবহার করতে চেয়েছিল। সূত্রে জানা গিয়েছে বিষয়টি ED’র নজরেও এসেছে। তাঁদের ধারনা বীরভূমের দাপুটে নেতা অনুব্রত মণ্ডলের(Anubrata Mondol) হাত ধরে এই ভাবে কুপন ছাপিয়েই অবাধে বীরভূম-মুর্শিদাবাদ হয়ে গরু আর কয়লা পাচার হয়েছে বাংলাদেশে। এখন সেই দাপুটে নেতা দিল্লিতে তাঁদের হেফাজতে থাকলেও তাঁর নেটওয়ার্ক এখনও সক্রিয়। সেই নেটওয়ার্কই এখন বালি মাফিয়াদের সঙ্গে হাতে হাত মিলিয়ে বালি পাচার করছে দক্ষিণবঙ্গ জুড়ে। অজয়, ময়ূরাক্ষী, দামোদর, রূপনায়রণ, মুন্ডেশ্বরী, দ্বারকেশ্বর, শিলাবতী, কংসাবতী থেকে দিন দু[উরে এভাবেই বালি পাচার চলছে।
আরও পড়ুন Land Records-এ ভুল, ৩ লক্ষ ৮৯ হাজার ২৫২টি অভিযোগ নবান্নে
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, কার নির্দেশে ওই কুপন ছাপা হয়েছিল তা জানতে ওই ট্রাক চালককে জেরা করা হচ্ছে। এরকম কত কুপন রয়েছে সেটাও জানার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে রাজ্য সরকার কখনও এধরনের কুপন ছাপায় না সেটা ইতিমধ্যেই সামনে চলে এসেছে। সরকারের বদনাম করার জন্যই এসব করা হচ্ছে বলে অভিযোগ শাসক দলের। তাঁদের দাবি, বালি মাফিয়াদের সঙ্গে বিজেপির যোগ রয়েছে। তাঁরাই এই কাজ করে থাকতে পারে। যদিও বিজেপির নেতাদের দাবি, বালি মাফিয়াদের সঙ্গে কাদের সম্পর্ক রয়েছে তা নতুন করে বলার দরকার নেই। তৃণমূলের নেতারাই বালি কারবারের সঙ্গে যুক্ত।