নিজস্ব প্রতিনিধি: ১৯৯৯ সাল থেকে তিনি বহরমপুর(Berhampur Constituency) থেকে জিতে আসছেন। কার্যত ৫ বারের সাংসদ তিনি। কখনও জিতেছেন কংগ্রেসের(INC) কাঁধে ভর দিয়ে, কখনও জিতেছেন নিজের সংগঠনের দৌলতে। কখনও জিতেছেন বামেদের বন্ধু হয়ে, কখনও বা জিতেছেন অঘোষিত ভাবে বিজেপির বন্ধু হয়ে। এই যেমন উনিশের ভোটে তিনি জিতলেন ৮০ হাজারেরও বেশি ভোটে। সেই নির্বাচনেই বিজেপি(BJP) পেয়ে গেল ১ লক্ষ ৪৩ হাজার ভোট। ঠিক তার ২ বছর পরে একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর খাস তালুকে জিতে গেল বিজেপি। অনেকেই মনে করছেন, এই দুই জয় আদতে ছিল Give and Take Policy। উনিশের ভোটে তাঁর বিরুদ্ধে থাকা প্রায় দেড় লক্ষ ভোট কেটে তাঁর জয় নিশ্চিত করেছিল বিজেপি। বিনিময়ে তিনি একুশের বিধানসভা নির্বাচনে তা৬র খাস তালুক বহরমপুর ছেড়ে দিয়েছেন বিজেপিকে। এবারে কিন্তু সেই তাঁর মুখেই শোনা যাচ্ছে হারের ইঙ্গিত। রাজনৈতিক সন্ন্যাস গ্রহণের কথা। কার্যত যে যেন যুদ্ধের আগেই হার মেনে নিচ্ছেন তিনি। নজরে মুর্শিদাবাদ জেলার বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের ৬ বারের কংগ্রেস সাংসদ অধীররঞ্জন চৌধুরী(Adhir Ranjan Chowdhury)।
বহরমপুর লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে যে ৭টি বিধানসভা কেন্দ্র রয়েছে সেগুলি হল – বড়ওয়ান, কান্দি, ভরতপুর, রেজিনগর, বেলডাঙা, বহরমপুর ও নওদা। উনিশের লোকসভা নির্বাচনে তৃণমূল ভরতপুর, রেজিনগর, বেলডাঙা ও নওদা থেকে লিড তুললেও বাকি ৩টি বিধানসভা কেন্দ্র থেকে লিড তোলেন অধীর। সেই লিডই তাঁকে জয়ের মুখে এনে দাঁড় করায়। এবারে সেই বহরমপুরে তৃণমূল প্রার্থী করেছে দেশের প্রাক্তন ক্রিকেটার ইউসুফ পাঠানকে। এবার সেই ইউসুফই অধীরের প্রধান প্রতিপক্ষ। একে জনপ্রিয় ক্রিকেটার, তারওপর সংখ্যালঘু সমাজের মুখ। তাই অধীরের জয়ের পথে ইতিমধ্যেই বেশ বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়েছেন পাঠান। এই অবস্থায় সোমবার অধীর জানিয়েই দিলেন, ‘বহরমপুরে যদি তৃণমূল(TMC) জিতে যায়, তাহলে রাজনীতি থেকেই অবসর নিয়ে নেব।’
প্রশ্ন হচ্ছে, এই কথা তিনি কেন বললেন। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এবার জয় নিশ্চিত নয় বুঝেই এই কথা আগে থেকেই বলে রাখলেন তিনি। যদি সহানুভূতির ভোট টানা যায়। তবে তিনি হেরে গেলে যে রাজনৈতিক ভাবে সন্ন্যাস নেওয়া ভিন আর কিছুই করার থাকবে না সেটাও সকলের জানা। কেননা, ওনার অন্ধ মমতা বিরোধিতার কারণেই আজ বাংলার বিধানসভা থেকে বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে কংগ্রেস। স্বাধীনতার পরে এই প্রথম বাংলার বিধানসভায় কোনও কংগ্রেস বিধায়ক নেই। আবার একই সঙ্গে অধীরের আমলেই তাঁর নিজে জেলায় ২টি বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হয়েছে বিজেপি। এরপর এখন তাঁর পালা। কংগ্রেস যেভাবে বাংলার বিধানসভা থেকে বিলুপ্ত হয়েছে, সেই একই পথে হেঁটে এবার তাঁর সময় হয়েছে রাজ্য রাজনীতি থেকে বিলুপ্ত হওয়ার। সেই বিলুপ্তির সম্ভাবনা আঁচ করেই এদিন অধীর মুখ ফস্কেই বলে ফেলেছেন আসল সত্য।