নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) বুকে সব থেকে বেশি যে ফসলের চাষ হয় তা হল ধান। রাজ্যে এমন কোনও জেলা নেই যেখানে ধান চাষ হয় না। পাহাড়ে যেমন ধাপ কেটে ধান চাষ হয় তেমনি সুন্দরবন লাগোয়া গ্রামগুলির নোনাজমিতেও ধান চাষ করতে দেখা যায়। আবার পুরুলিয়া বাঁকুড়ার মতো রুক্ষ জেলাগুলিতেও ধান চাষ করেন সেখানকার কৃষকেরা(Farmers)। ধান চাষের জন্য সব থেকে বেশি যেটা লাগে তা হল পর্যাপ্ত পরিমাণ জল। সেই জলের জন্য বাংলার কৃষকেরা মূলত বৃষ্টির জলের ওপরেই নির্ভর করেন। কিন্তু কোনও বছর সেই বৃষ্টি কম হলে ধানের চাষ ধাক্কা খায়। চলতি বছরে দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির পরিমাণ প্রথম দিকে অনেকটাই কম ছিল। তার জেরে ধাক্কা খায় ধানের চারা রোপণের কাজ। পর্যাপ্ত জলের অভাবে এবারে অনেক কৃষকই তাঁদের জমিতে ধান চাষ করতে পারেননি। করলেও জলের অভাবে বীজতলা শুকিয়ে গিয়ে তা নষ্ট হয়ে গিয়েছে। রাজ্য সরকারের তরফে এবার সেই সব কৃষককে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল।
এ রাজ্যের যে সব কৃষকের নাম বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পে নথিভুক্ত আছে সেই সব কৃষকেরা ধান, আলু বা সবজির চাষ করতে গিয়ে প্রাকৃতিক কারনে ক্ষতিগ্রস্থ হলে রাজ্য সরকারের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণ পান। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপয়াধ্যায়ের(Mamata Banerjee) আমলে প্রতি বছর যাতে বাংলার বেশির ভাগ চাষী এই প্রকল্পের সুবিধা পান তার জন্য কৃষিদফতরের তরফে বেশ জোর দেওয়া হয়। এবারেও বাংলা শস্য বিমা(Bangla Shasya Bima) প্রকল্পে নথুভুক্ত আছেন এমন কৃষকদের যারা ধান চাষ করতে গিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছেন তাঁদের হাতে ক্ষতিপূরণ তুলে দেওয়া হবে। কালিপুজোর আগেই সেই ক্ষতিপূরণ প্রদানের কাজ শুরু হয়ে যাবে বলে নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে। নবান্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের চিহ্নিত করে তাঁদের হাতে দ্রুত এই ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে দেওয়ার জন্য রাষ্ট্রায়ত্ত কৃষি বিমা সংস্থাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে রাজ্য সরকারের তরফে। এই বিষয়ে রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়(Sovondev Chattopadhay) জানিয়েছেন, ‘শতাধিক গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার কৃষকের কাছ থেকে ক্ষতিপূরণের আবেদন পাওয়া গিয়েছে। বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পে নাম নথিভুক্ত থাকলে ক্ষতিপূরণ মিলবে। মূলত বাঁকুড়া, বীরভূম, পুরুলিয়া, মুর্শিদাবাদ, মালদহ ও পশ্চিম বর্ধমান জেলায় ধান চাষ ব্যাহত হয়েছে কম বৃষ্টির কারণে। ওই জেলাগুলির উপর বিশেষ নজর দিতে বলা হয়েছে কৃষি বিমা সংস্থাকে।’
অন্যদিকে রাজ্যের কৃষিদফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, গত বারের তুলনায় এবার ৯১ শতাংশ জমিতে ধান চাষ হয়েছে। নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার থেকে প্রায় ৪ লক্ষ হেক্টর কম জমিতে এবার ধান চাষ হয়েছে। শস্য বিমার ক্ষতিপূরণ দেওয়ার পাশাপাশি বিকল্প চাষ করার জন্য ১০ কোটি টাকা মূল্যের বীজ চাষিদের দিয়েছে কৃষিদফতর। বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পে চাষের মাঝপথে ফসলের ক্ষতি হলে ক্ষতিপূরণ যেমন পাওয়া যায় তেমনি প্রাকৃতিক সমস্যা সহ কোনও কারণে একটি নির্দিষ্ট এলাকায় চাষ শুরু করাই না গেলে ক্ষতিপূরণ মেলে। রাজ্যের কৃষিদফতর এর জন্য এলাকাভিত্তিক বিজ্ঞপ্তি জারি করে। গত বছর বন্যার জন্য চাষ না করতে পারা কৃষকরা ক্ষতিপূরণের টাকা পেয়েছিলেন। এবারে জলের অভাবে যারা চাষ করতে পারেননি তাঁরা ক্ষতিপূরণের জন্য বিবেচিত হচ্ছেন। এবার খরিফ মরশুমে প্রায় ৬১ লক্ষ চাষি বাংলা শস্য বিমা প্রকল্পের জন্য আবেদন করেছিলেন। এর মধ্যে ৫৪ লক্ষ আবেদন ইতিমধ্যে নথিভুক্ত হয়েছে। বাকি আবেদনগুলিও এক সপ্তাহের মধ্যে নথিভুক্ত হয়ে যাবে। গত খরিফ মরশুমের তুলনায় ১৫ লক্ষ বেশি চাষি এবার শস্য বিমা করিয়েছেন। মোট ২৩ লক্ষ হেক্টর ধান ও ভুট্টা চাষের জমি এবার বিমার আওতায় রয়েছে। এই বিমার জন্য চাষিদের কোনও প্রিমিয়াম দিতে হয় না। তা বহন করে রাজ্য সরকার। এই খাতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকা বিমা সংস্থাকে দেয় রাজ্য সরকার।