নিজস্ব প্রতিনিধি: দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হাঁক পেড়েছিলেন ‘আবকে বার ২০০ পার’। প্রধানমন্ত্রী ডেলি প্যাসেঞ্জারি শুরু করেছিলেন। সভার পর সভা। তারপর তো ছিল কেন্দ্রীয় এজেন্সি থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনীর দাপাদাপি। গুলি করে মানুষ খুনও করা হল শীতলকুচির বুকে। তবুও একুশে বাংলা(Bengal) দখল আর হল না। বাবুদের রাগও মিটল না। তাই একের পর এক কোপ বাংলার বুকে। ১০০ দিনের কাজের টাকা বন্ধ, প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনার টাকা বন্ধ, রাজ্যের নায্য পাওয়া দেওয়া বন্ধ, মিড ডে মিলের টাকা দেওয়াও বন্ধ। এবার তাতে যোগ হল কেরোসিনও। অবশ্য এই আশঙ্কা আগে থেকেই ছিল। সেই আশঙ্কাকে সত্যি করে দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) সরকার পুজোর সময় থেকেই বাংলার কোটায় বরাদ্দ কেরোসিন(Kerosin) কমিয়ে অর্ধেক করে দিচ্ছে, যার ধাক্কা সরাসরি পড়তে চলেছে বাংলার গ্রামীণ এলাকায় ও শহুরে নিম্নবিত্ত পরিবারের ওপরে।
এতদিন বাংলার কোটায় কেন্দ্র প্রতি ৩ মাস অন্তর পশ্চিমবঙ্গের রেশন গ্রাহকদের(Ration Buyer) জন্য প্রায় ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কিলোলিটার কেরোসিন দিত কেন্দ্র সরকার। সেই হিসাবে বাংলার জন্য প্রতি মাসে বরাদ্দ থাকত ৫৮ হাজার ৬৬৮ কিলোলিটার। ২০১৬ সাল থেকে কেন্দ্রীয় সরকার দেশের বিভিন্ন রাজ্যের কেরোসিনের কোটা পর্যায়ক্রমে কমানোর নীতি নেয়। কিন্তু কলকাতা হাইকোর্টের একটি মামলার জেরে স্থগিতাদেশ থাকায় শুধু পশ্চিমবঙ্গের জন্য কেরোসিনের বরাদ্দ কমাতে পারেননি তাঁরা। ওয়েস্ট বেঙ্গল কেরোসিন এজেন্টস ওয়েলফেয়ার কমিটি(Kerosin Agents Welfare Comeety) সম্প্রতি ওই মামলাটি প্রত্যাহার করে নেয়। মামলা প্রত্যাহার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যের কেরোসিনের কোটা কমানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে নেয় মোদি সরকার। সম্প্রতি দেশের সব রাজ্যের জন্যই অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত কেরোসিনের বরাদ্দ সংক্রান্ত নির্দেশিকা জারি করেছে কেন্দ্রীয় পেট্রলিয়াম মন্ত্রক। এই দফায় অন্য কোনও রাজ্যের বরাদ্দ কমানো হয়নি। কিন্তু কোপ পড়েছে বাংলার কোটায়। অক্টোবর মাস থেকে নতুন কোটা কার্যকর হবে। আর এই অক্টোবর মাসের মুখেই বাঙালির উৎসব। সেই সময় থেকেই বাংলার রেশন গ্রাহকেরা কেরোসিন কার্যত অর্ধেক পাবেন।
এখন বাংলায় একজন রেশন গ্রাহক প্রতি মাসে নূন্যতম ৫০০ মিলিলিটার কেরোসিন পান। কিছু কিছু এলাকায় তা মাথাপিছু ১ লিটার করে দেওয়া হয়। কিন্তু অক্টোবর থেকে বাংলার ভাগে কেরোসিন মিলবে প্রতি ৩ মাসে ৮৮ হাজার ৩৩২ কিলোলিটার। ফলে মাসিক বরাদ্দ দাঁড়াবে ২৯ হাজার ৪৪৪ কিলোলিটার। বাংলায় এখন রেশন গ্রাহকের সংখ্যা প্রায় ৯ কোটি। এদের মধ্যে ৬ কোটি মানুষের বাড়িতে নিত্যদিন কেরোসিন লাগে। সেই কেরোসিন যদি কম দেওয়া হয় রেশন থেকে তাহলে এরাই সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়বেন। কেন্দ্র সরকার অবশ্য সরাসরি এটা জানায়নি যে, কোন কোন গ্রাহকদের কপালে কেরোসিন কম মিলবে বা বন্ধ হয়ে যাবে। সেটা তাঁরা রাজ্যের খাদ্য দফতরের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। আর খাদ্য দফতরের আধিকারিকদের দাবি, কেন্দ্রের এই সিদ্ধান্তে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হবেন গ্রামীন এলাকার মানুষেরা। সেই সঙ্গে ক্ষতিগ্রস্থ হবেন শহুরে নিম্নবিত্তের মানুষেরা। ধাক্কা খাবেন রেশন ডিলাররাও। একই সঙ্গে কেরোসিনের সরবরাহ কমলে দূষণ সৃষ্টিকারী জ্বালানির ব্যবহার বাড়বে যা পরিবেশ দূষণের মাত্রা বাড়িয়ে দেবে।