নিজস্ব প্রতিনিধি: সামনেই লোকসভা নির্বাচন(General Election 2024)। ঠিক তার আগে নতুন করে জঙ্গলমহলকে(Junglemahal) উত্তপ্ত করে তুলতে দুই সম্প্রদায়ের মানুষকে আবারও আন্দোলনমুখী করে তুলতে চাইছে গেরুয়া শিবির(BJP)। এই দুই সম্প্রদায় হচ্ছে আদিবাসী ভূমিজরা(Bhumij) এবং সদগোপ(Sadgope) সমাজ। দুই শিবিরই কালিপুজোর আগেই ঝাড়গ্রাম(Jhargram) জেলায় তাঁদের কর্মসূচী ঘোষণা করেছে। আর প্রশাসনিক আধিকারিক থেকে শাসক দলের নেতাদের ধারনা এই কর্মসূচীর আড়ালে আদতে ছক কষা হচ্ছে লোকসভা ভোটের আগে কুড়মি আন্দোলনের মতোই নয়া আন্দোলন শুরু করিয়ে জঙ্গলমহলে শান্তি ভঙ্গের পাশাপাশি প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিতে। আগামী বুধবার ৮ নভেম্বর ঝাড়গ্রামে জেলাশাসকের দফতরের সামনে ঘেরাও কর্মসূচির ডাক দিয়েছে ভারতীয় আদিবাসী ভূমিজ সমাজ। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন সমবায় নিগমের ঝাড়গ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়েও ওই দিন তালা ঝোলানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি। আবার পশ্চিমবঙ্গ সদগোপ সমাজের তরফে আগামী ৫ নভেম্বর, গোপীবল্লভপুরের হাতিবাড়ির একটি অতিথিশালায় তাঁদের জেলা সম্মেলনের ডাক দেওয়া হয়েছে।
কেন আন্দোলন? ভূমিজদের দাবি, আদিবাসী হলেও এ রাজ্যে তাঁরা বঞ্চিত। ভূমিজ সাংস্কৃতিক দলগুলিকে সরকারি সাহায্য করা হচ্ছে না। পশ্চিমবঙ্গ আদিবাসী উন্নয়ন সমবায় নিগম পরিচালিত আদিবাসী সাংস্কৃতিক প্রতিযোগিতায় ভূমিজ সাংস্কৃতিক দলগুলিকে গুরুত্ব ও অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে না। এমনকি তাঁদের লোকপ্রসার শিল্পীর তালিকায় অন্তর্ভুক্তও করা হয়নি। এ ছাড়া ‘মোড়ল’-‘লায়া’-‘ডাকুয়া’র মতো ভূমিজ সমাজের গ্রাম্য ব্যবস্থার পদাধিকারী বিশিষ্টজনদের সরকারি স্বীকৃতি এবং ভাতার দাবি করেছে ভারতীয় ভূমিজ সমাজ। ভূমিজদের ধর্মীয় জাহের থান, গরাম থান, শারুল থান এবং শ্মশান (হাড়শালী) সংরক্ষণেরও দাবি তোলা হয়েছে। পাশাপাশি ভূমিজ ভাষাকে রাজ্যের দ্বিতীয় সরকারি ভাষার স্বীকৃতি, পৃথক উন্নয়ন পর্ষদ, ভূমিজ বিদ্রোহের মহানায়ক শহিদ গঙ্গানারায়ণ সিং ও চূয়াড় বিদ্রোহের মহানায়ক শহিদ রঘুনাথ সিংয়ের জন্মজয়ন্তীর দিনগুলিতে সাধারণ ছুটি ঘোষণা এবং সরকারি উদ্যোগে দুই শহিদের মূর্তি স্থাপন সহ বিভিন্ন দাবিতেতেই তাঁরা ৮ নভেম্বর ‘ঝাড়গ্রাম চলো’-র ডাক দিয়েছেন। আবার সদগোপদের মূল দাবি, তাঁদের ওবিসি তালিকাভুক্ত করতে হবে।
কেন বলা হচ্ছে গেরুয়া ইন্ধন আছে পিছনে? এই উত্তর মিলবে সদগোপদের সংগঠনের দিকে তাকালেই। পশ্চিমবঙ্গ সদগোপ সমাজের আন্দোলন সংগঠিত করার দায়িত্বে রয়েছেন অবনী ঘোষ। অবনী বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য। কাঁথি সাংগঠনিক জেলার দলীয় পর্যবেক্ষকের দায়িত্বেও আছেন তিনি। যদিও অবনীর দাবি, সদগোপ সংগঠনের সঙ্গে রাজনীতির কোনও সম্পর্ক নেই। যদিও সূত্রের দাবি দুটি সম্প্রদায়ের দুই আন্দোলনের পিছনের প্রভূত মদত দিচ্ছে গেরুয়া শিবির। মূল লক্ষ্য, লোকসভা নির্বাচনের আগে জঙ্গলমহলের বুকে শান্তি ভঙ্গ ও স্বাভাবিক জনজীবন রুদ্ধ করে দিয়ে রাজ্য প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দেওয়া। যদিও এই দুই আন্দোলন ঘিরে উদ্বেগ প্রকাশ করছেন না শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) নেতারা। তাঁদের দাবি, গেরুয়া শিবিরের ইন্ধনেই কুড়মিরা আন্দোলনে নেমেছিল। এমনকি পঞ্চায়েত নির্বাচনে তাঁরা আলাদা করে নিজদের মতো করে লড়েছিল। কিন্তু সেই আন্দোলন যেমন মুখ থুবড়ে পড়েছে তেমনি পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমজনতাও কুড়মিদের থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। কার্যত পৃথক ভাবে লড়াই করার সিদ্ধান্তের জেরেই জঙ্গলমহলের রাজনীতিতে যে কুড়মি সমাজের আধিপত্য ছিল সেটাই এখন অদৃশ্য হয়ে গিয়েছে। ভূমিজদেরও সেটাই হবে। আর জঙ্গলমহলের বুকে সদগোপের সংখ্যা অতি নগণ্য। তাই দুই শিবিরের মাধ্যমে জঙ্গলমহলকে অস্থিত করে তোলার চেষ্টা চালানো হলেও তা কাজে দেবে না বলেই দাবি তৃণমূলের নেতাদের।