নিজস্ব প্রতিনিধি: বিজেপিতে রাজ্য সভাপতিদের মেয়াদ ৩ বছর করে। এই পদে একজন ব্যক্তি সর্বাধিক ২ বার অর্থাৎ ৬ বছর কাজ করতে পারেন। বাংলার(Bengal) বুকে বিজেপির রাজনৈতিক ভাবে সাফল্যের সূত্রপাত ঘটে অটলবিহারী বাজপেয়ীর(Atal Bihari Vajpayee) আমলে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) সঙ্গে জোট গড়ে দমদমে প্রথমবার জয়ের মুখ দেখে বিজেপি(BJP)। কিন্তু তারপরেও এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে বাংলার মাটিতে বিজেপি সবথেকে বড় জয়ের মুখ দেখেছে দিলীপ ঘোষের(Dilip Ghosh) হাত ধরেই। তিনি বঙ্গ বিজেপির সভাপতি থাকাকালীন সময়েই ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি যেমন বাংলা থেকে ১৮জন সাংসদ পেয়েছিল তেমনি ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ৭৭জন বিধায়ক পেয়েছিল। দুটি সংখ্যাই বাংলার বুকে বিজেপির ইতিহাসে সর্বাধিক। অথচ সেই দিলীপ ঘোষকেই বঙ্গ বিজেপির সভাপতি পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় তাঁর দ্বিতীয় দফার কার্যকাল পূর্ণ হওয়ার আগেই। এখন কিন্তু সেই দিলীপবাবুর অবস্থানকেই মান্যতা দিল বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
আরও পড়ুন ২৫ লক্ষের জরিমানা সহ অভিষেক-কুন্তলের আবেদন খারিজ হাইকোর্টে
কী সেই মান্যতা? দিলীপবাবুর অভিমত ছিল, বাংলার বিজেপি ন্তাদের হাতেই থাকুক এই রাজ্যে দল পরিচালনার দায়িত্ব ও সিদ্ধান্ত গ্রহণের মতো ক্ষমতা। এলেকায় এলাকায় সুযোগ ও পরিস্থিতি বুঝে রাজ্য বিজেপির নেতারাই প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত নিক। জেলার নেতাদেরও সেই স্বাধীনতা দেওয়া হোক। কার্যত সেই পথে হেঁটেই সাফল্য এসেছিল ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে। ওই ভোটে বাংলার মাটিতে বিজেপি লড়াই করেছিল দিলীপবাবুর নেতৃত্বেই। তিনি নির্বাচনের আগে থেকেই দাবি করে আসছিলেন বিজেপি বাংলা থেকে ১৮ থেকে ২০টি আসন পাবে। ওই নির্বাচনে কেউ ভাবতেই পারেনি দিলীপবাবুর দাবি এভাবে মিলে যাবে। শুধু তাই নয়, ওই নির্বাচনে বাংলার বুকে বিজেপির ভিন্ন রাজ্যের নেতাদের বা সঙ্ঘের নেতাদের দাপাদাপিও দেখা যায়নি। বরঞ্চ রাজ্য নেতৃত্বই সেই সময় প্রয়োজনীয় যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নিতেন। কিন্তু সেই ছবিটাই আমূল বদলে যায় ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে। রাজ্য নেতৃত্বের হাত থেকে যাবতীয় ক্ষমতা কেড়ে ঘাড়ের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয় ভিন রাজ্যের হিন্দিভাষী নেতাদের যাদের আবার এই রাজ্যের ইতিহাস, ভূগোল, কৃষ্টি নিয়ে কিছুই জানা ছিল না। প্রার্থী নির্ধারণ থেকে প্রচার কৌশল কোনও কিছুতেই দিলীপবাবুদের কোনও কথাই শোনা হয়নি। কার্যত তাঁদের পাত্তাও দেয়া হয়নি। রেজাল্ট ভোটে গোহারান হার।
আরও পড়ুন শেয়ার বাজার থেকে হাওয়া LIC’র ১ লক্ষ ৯৩ হাজার কোটি টাকা
এখন কর্ণাটকের নির্বাচনে দ্বিতীয় বারের জন্য মোদি-শাহ ইমেজ জোর ধাক্কা খাওয়ায় দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এবং সঙ্ঘ নেতৃত্ব একদিকে যেমন মোদির বিকল্প মুখ খোঁজার পালা শুরু করে দিয়েছে তেমনি প্রতিটি রাজ্যের দলীয় নেতৃত্বকে দিল্লি নির্ভরতা কমাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরিবর্তে বলা হয়েছে রাজ্য ও জেলাস্তরের নেতাদের তুলে ধরতে। ভোটের প্রচার শুধুই মোদি-কেন্দ্রিক না করে দলের স্থানীয় নেতাদেরও সমান গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব মনে করছে যে, দিল্লির উপর নির্ভরতার কারণে রাজ্য নেতাদের অনেকেই সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন না। বিভিন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি পর্বে উপযুক্ত কৌশল গ্রহণের ক্ষেত্রে যার অবশ্যম্ভাবী প্রভাব পড়ছে। ফলে প্রায় সমস্ত ব্যাপারেই কেন্দ্রীয় নেতাদের দ্বারস্থ হতে হচ্ছে রাজ্য নেতাদের। যা আদতে পার্টিরই ক্ষতি করছে। রাজ্য নেতৃত্বর অতিরিক্ত মোদি-নির্ভরতাও ভাবাচ্ছে বিজেপির শীর্ষ নেতাদের। তাই শেষমেষ তাঁরা দিলীপের লাইনকেই কার্যত মান্যতা দিতে বাধ্য হলেন।