নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসের(TMC) তরফ থেকে বার বার দাবি তোলা হচ্ছে যে বাংলার বুকে বিজেপিকে খুঁজে পাওয়া যায় কেবলমাত্র হাইকোর্ট, নানা সংবাদমাধ্যম আর কলকাতার বুকে। বঙ্গ বিজেপির একাংশও তৃণমূলের এই দাবিকে সমর্থন করে। এই দাবি যে খুব একটা ভুল নয় তা নানান ঘটনায় বহুবার প্রমাণিত হয়েছে। এবার এইরকমই এক ঘটনা আবারও সামনে এল। ২০১৯ সালে সাধারন নির্বাচনের সময়ে নদিয়া(Nadia) জেলার যে রানাঘাট লোকসভা কেন্দ্রে এবং ২০২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে রানাঘাট(Ranaghat) ও কল্যাণী মহকুমা জুড়ে বিজেপি ঝড় উঠেছিল সেই রানাঘাটের এক ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতি নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারল না বিজেপি। আর এই ঘটনাই আরও একবার মুখ পোড়াল বঙ্গ বিজেপির। আর বিজেপির এই ব্যর্থতার জেরে বিনা যুদ্ধেই আবারও রানাঘাট পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কের(Peoples Co-Operative Bank) পরিচালন সমিতি তৃণমূলের দখলে গেল। আর তার জেরেই সামনে এসেছে বিজেপির(BJP) বর্তমান দুরাবস্থার ছবি।
রানাঘাট শহরের চৌরঙ্গি মোড়ে থাকা শতাব্দী প্রাচীন পিপলস কো-অপারেটিভ ব্যাঙ্কে ২০১৭ সালে পরিচালন কমিটির শেষবার নির্বাচন হয়। বর্তমানে এই ব্যাঙ্কে ২২ হাজারেরও বেশি গ্রাহক রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১৩ হাজারেরও বেশি গ্রাহক পরিচালন কমিটির ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন। এই পরিস্থিতিতে আগামী ১১ সেপ্টেম্বর পরিচালন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা। যে কারণে ব্যাঙ্কের তরফে ফের ওই কমিটির নির্বাচনের জন্য বিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছিল। তাতে ২৩, ২৪ ও ২৫ আগস্ট তারিখ মনোনয়ন জমা দেওয়ার কথা উল্লেখ করা হয়। সেই মতো গত ২৫ আগস্ট দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত মনোনয়ন জমা দেওয়ার শেষ সময় বেঁধে দেয় ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ওই সময়ের মধ্যে বিরোধী রাজনৈতিক শিবিরের পক্ষ থেকে কোনও মনোনয়ন জমা পড়েনি। ফলে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফের সমবায় ব্যাঙ্কের পরিচালন কমিটি গঠন করেছে তৃণমূল। ওই পরিচালন কমিটিতে মোট ৪২টি আসন রয়েছে। যদিও মোট ৪৩টি মনোনয়ন জমা পড়েছে।
বিষয়টি নিয়ে ব্যাঙ্কের পরিচালন সমিতির বর্তমান সেক্রেটারি তৃণমূল নেতা অসিত দত্ত বলেন, ‘ব্যাঙ্ক পরিচালন কমিটির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নিয়ম মেনেই আমরা পুনরায় নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু করি। কিন্তু বিজেপি সহ অন্যান্য বিরোধী রাজনৈতিক দল এই নির্বাচনে অংশ নেওয়ার জন্য মনোনয়ন জমা দেয়নি। আমাদের দলের বাইরে শুধুমাত্র ১০ নম্বর ওয়ার্ড থেকে একটি মনোনয়ন বেশি জমা পড়েছে। যদিও সেই মনোনয়ন প্রত্যাহার করে নেওয়া হবে।’ আবার বিজেপির নদিয়া দক্ষিণ সাংগঠনিক জেলা সভাপতি পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় জানিয়েছেন, ‘ব্যাঙ্ক রাজনৈতিক ক্ষেত্র নয়। তাছাড়া বর্তমানে ওই ব্যাঙ্কের যাঁরা পরিচালন কমিটিতে রয়েছেন, তাঁরা একসময় আমার হাত ধরেই ওই ব্যাঙ্কে ঢুকেছিলেন।’ ঘটনা হচ্ছে বিজেপির তরফে এখন যে নেতা যাই দাবি করুন না কেন, ব্যাঙ্ক পরিচালন কমিটির নির্বাচনে বিজেপির তরফে মনোনয়ন জমা না দেওয়ায় কার্যত মুখ পুড়ছে পদ্ম শিবিরের। সাংগঠনিকভাবে বিজেপি যে ক্রমশ দুর্বল হয়ে পড়ছে বাংলার মাটিতে তা ফের এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে উঠল।