নিজস্ব প্রতিনিধি: তৃণমূলে(TMC) যোগ দিয়ে বিজেপির(BJP) বিরুদ্ধেই বিস্ফোরক অভিযোগ তুললেন বাঁকুড়া(Bankura) জেলার কোতুলপুরের বিধায়ক(Kotulpur MLA) হরকালী প্রতিহার(Harkali Pratihar)। শুক্রবার বাঁকুড়ায় তৃণমূলের এক সভায় উপস্থিত ছিলেন তিনি। সেখানেই সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তিনি পদ্মশিবিরকে রীতিমত ধুয়ে দিয়েছেন। সংবাদমাধ্যমের তরফে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, তিনি বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে কেন এলেন? সেই প্রশ্নের জবাবেই হরকালী জানান, ‘আদর্শের খোঁজেই আমার তৃণমূলে যোগদান। বিজেপিতে না আছে কোনও নীতি-আদর্শ, না আমি সেখানে থেকে মানুষের জন্য কোনও কাজ করতে পারছিলাম। নীতি আদর্শ বলে কিছু নেই বিজেপিতে। আদর্শহীন সেই দলে আমাদের মতো মানুষের আর না থাকাই ভাল। যারা জনগণকে ভাতে মারে, তাদের সঙ্গে শিক্ষিত মানুষ থাকতে পারে না।’ এর পাশাপাশি তিনি আরও জানিয়েছেন, ‘অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়(Abhishek Banerjee) যেভাবে মানুষের জন্য কাজ করছে, তাতে আপ্লুত হয়ে সৈনিক হিসেবে তৃণমূলে যোগ দিয়েছি।’
উল্লেখ্য, তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে পদ্মফুল থেকে জোড়াফুলে পা রেখেছেন হরকালী। তিনি যে সন্ধ্যায় ফুলবদল করেন সেই রাতেই রেশন বন্টন দুর্নীতির মামলায় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা Enforcement Directorate বা ED’র হাতে গ্রেফতার হন রাজ্যের প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী তথা বর্তমান বনমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। সেই প্রসঙ্গেও সাংবাদিকেরা হরকালীকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জানান, ‘আমি কখনও কাউকে ব্যক্তিগত আক্রমণ করি না। ১০০ শতাংশ ষড়যন্ত্র হয়েছে। ওনার গ্রেফতারি দুর্ভাগ্যজনক।’ পাশাপাশি হরকালী এটাও জানিয়েছেন, শুধু তিনিই শুধু একা নন, আরও অনেক বিজেপি বিধায়ক এই তালিকায় আছেন যারা আগামী দিনে তৃণমূলে পা রাখবেন। পদ্মশিবিরের আদি নেতাদের অনেকেরই অভিমত, বঙ্গ বিজেপিতে দিলীপ ঘোষের গুরুত্ব কমায় জেলাস্তরে তাঁর অনুগামীরা দলে ক্রমশ কোণঠাসা হয়ে পড়ছেন। দমবন্ধ করা পরিবেশ থেকে তাঁরা পরিত্রাণ চাইছেন। কোতুলপুরের বিজেপি বিধায়ক হরকালী প্রতিহারের তৃণমূলে যোগদান তারই পরিণতি।
আদি বিজেপি নেতাদের মতে, রাজ্য নেতৃত্বের কোন্দলের জন্য কোতলপুরের বিজেপি বিধায়ক দলবদল করেছেন। বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার বর্তমান সভাপতি অমরনাথ শাখার সঙ্গেও তাঁর সম্পর্ক খুব একটা ভালো ছিল না। পেশায় স্কুল শিক্ষক হরকালীবাবু ২০২১ সালে বিজেপির টিকিটে কোতুলপুর বিধানসভা কেন্দ্রে জয়ী হন। তার আগে দিলীপবাবু বিজেপির রাজ্য সভাপতি থাকাকালীন হরকালীবাবু বিষ্ণুপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি হয়েছিলেন। সেই সময় জেলা সভাপতি হিসেবে অমরনাথবাবুর নাম প্রায় পাকা হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু দিলীপবাবুর হস্তক্ষেপে হরকালীবাবুই জেলা সভাপতি হন। হরকালীবাবুর পর সুজিত অগস্তি হয়েছিলেন বিষ্ণুপুর সংগঠনিক জেলার সভাপতি। তিনিও দিলীপবাবুর ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। দিলীপবাবুকে রাজ্য সভাপতির পদ থেকে সরিয়ে দেওয়ার পর জেলায় তাঁর বিরোধী গোষ্ঠীর দাপট বাড়তে থাকে। তখন জেলা সভাপতি হন ওন্দার বিধায়ক অমরনাথ শাখা। সেই থেকেই দুইয়ের দূরত্ব ক্রমশ প্রকট হচ্ছিল মল্লভূমের রাজনীতিতে।