নিজস্ব প্রতিনিধি: মুখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) চালু করা আর্থসামাজিক প্রকল্পগুলির চূড়ান্ত বিরোধিতা। পদে পদে সেই সব প্রকল্প বন্ধ করার কেন্দ্রীয় ষড়যন্ত্র। অথচ দলেরই একাংশ দুয়ারে সরকার(Duyare Sarkar) শিবিরে গিয়ে সেই সব আর্থসামাজিক প্রকল্পের জন্য আবেদন জানাচ্ছেন। বঙ্গ বিজেপির(Bengal BJP) একাংশের এই দ্বিচারিতা নতুন কোনও ঘটনা নয়। মানুষকে ভাঁওতাবাজি দিয়ে চলা এইও দলটি এটিও এক বড়সড় ভাঁওতাবাজির উদাহরণ। মুখে বিরোধিতা কিন্তু শিবিরে গিয়ে সেটা পাওয়ার জন্যই লাইন দেওয়া। এর আগে খোদ বঙ্গ বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের(Dilip Ghosh) পরিবারের লোকেরাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের আর্থসামাজিক প্রকল্পের জন্য আবেদন জানিয়েছিলেন। তা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু কম ট্রোলিংয়ের ঘটনা ঘটেনি। কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে বঙ্গ বিজেপির নেতানেত্রীদের এই দ্বিচারিতা বিন্দুমাত্র কমেনি, বরঞ্চ তা বেড়েই চলেছে। এর নয়া নিদর্শন দলের মহিলা মোর্চার রাজ্য সহ সভানেত্রী অন্তরা ভট্টাচার্য(Antara Bhattacharya)।
আরও পড়ুন মিশে যাচ্ছে কী CPI-CPIM, দাবি ক্রমশ জোরালো হচ্ছে বাম শিবিরে
জানা গিয়েছে, চলতি সপ্তাহের সোমবার অর্থাৎ গতকাল অন্তরা পশ্চিম মেদিনীপুর(Paschim Midnapur) জেলার পিংলা(Pingla) ব্লকের রঘুনাথচক প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দুয়ারে সরকার শিবিরে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের(Sasthasathi Card) জন্য আবেদন জানান। সেই আবেদনপত্রে নিজের নামের সঙ্গে স্বামী বিকাশ চক্রবর্তী ও কন্যা অস্মিতা চক্রবর্তীর নামও তিনি জুড়ে দেন। অর্থাৎ গোটা পরিবারের নামেই এই প্রকল্পের সুবিধা পাওয়ার জন্য আবেদন জানান বঙ্গ বিজেপির নেত্রী। অন্তরাদেবী আগে বাম ছিলেন, পরে রাম হয়েছেন। মানে বাম জমানায় তিনি সিপিএম পরিচালিত পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার সভাধিপতি ছিলেন। পরে তিনি বিজেপিতে যোগ দেন। গত বিধানসভা ভোটে বিজেপির হয়ে প্রার্থীও হয়েছিলেন। একসময় বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলার সভানেত্রী ছিলেন। তাঁর এখন স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য আবেদন দেখে অনেকেই মনে করছেন এই নেত্রী খুব শীঘ্রই পাল্টি খেতে পারেন। মানে জার্সি বদলে বিজেপি ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিতে পারেন।
আরও পড়ুন ইটভাটার শ্রমিকদের বেতন বাড়ানো হল ৭ শতাংশ
যদিও শুধু অন্তরা নন, বিজেপি নেতানেত্রীরা কথায় কথায় দুয়ারে সরকার ও স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নিয়ে রাজ্যের শাসক দল তৃণমূল কংগ্রেসকে থেকে থেকেই তীব্র কটাক্ষ করেন। আবার সেই বিজেপির নেতানেত্রী বা তাঁদের পরিবারের সদস্যরা দুয়ারে সরকার ক্যাম্পে গিয়ে স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের জন্য বা লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য আবেদন জমা দেন। এই দ্বিচারিতা এখন রাজ্য রাজনীতিতে গেরুয়া শিবিরকে বেশ অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে। অন্যদিকে এই ঘটনাকে শাসক দল অর্থাৎ তৃণমূল কংগ্রেস তাঁদের নৈতিক জয় বলেই মনে করছে। অন্তরার ঘটনায় পিংলা ব্লকের তৃণমূল সভাপতি শেখ সবেরাতি জানিয়েছেন, ‘ওরা মুখে মুখ্যমন্ত্রী ও তাঁর প্রকল্পগুলির সমালোচনা করেন। আবার তার সুযোগও নেন। এই ঘটনা তার বড় প্রমাণ।’ এই ঘটনায় রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে যাওয়ায় অন্তরাদেবী জানান, ‘আমি তো লক্ষ্মীর ভাণ্ডারের জন্য আবেদন করিনি। স্বাস্থ্যসাথী কার্ড তো তৃণমূল দেয়নি, রাজ্য সরকার দিচ্ছে। তারজন্য আবেদন করতেই পারি। আবেদন করেছি। পরিষেবা তো পাইনি। রাজ্য সরকার জনগণের সরকার। মানুষ পরিষেবা পাওয়ার জন্য চেষ্টা করতেই পারেন।’ যদিও এই সব বলে আসল ঘটনা লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না। লুকিয়ে রাখা যাচ্ছে না বঙ্গ বিজেপির নেতানেত্রীদের দ্বিচারিতাও।