নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার(Bengal) বুকে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত(Minority Dominated) লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যা ৮। এগুলি হল – রায়গঞ্জ, মালদা উত্তর, মালদা দক্ষিণ, জঙ্গিপুর, মুর্শিদাবাদ, বহরমপুর, বসিরহাট ও ডায়মন্ডহারবার। অন্যদিকে সংখ্যালঘু প্রভাবিত লোকসভা কেন্দ্রের সংখ্যা ৪। এগুলি হল – কোচবিহার, বীরভূম, কৃষ্ণনগর ও উলুবেড়িয়া। সব মিলিয়ে রাজ্যের ৪২টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে ১২টি লোকসভা কেন্দ্রের ফলাফল নির্ণয়ক হয়ে ওঠে মুসলিম ভোটারদের ভোটাধিকারের মাধ্যমে। উনিশের লোকসভা ভোটে এই ১২টি কেন্দ্রের মধ্যে ৪টি কেন্দ্রে পদ্মফুট ফুটেছিল। এর নেপথ্য কারণ ছিল রায়গঞ্জ ও কোচবিহার কেন্দ্রের রাজবংশী ভোট এবং মালদার ২টি কেন্দ্রের আদিবাসী ভোট চলে গিয়েছিল বিজেপির পক্ষে। সেই সঙ্গে বিজেপি(BJP) পেয়েছিল হিন্দু ভোটও। কিন্তু একুশের বিধানসভা নির্বাচনে আবার দেখা যায়, ওই ৪টি লোকসভা কেন্দ্রের মধ্যে কোচবিহার ব্যতীত ৩টি কেন্দ্রেই মুখ থুবড়ে পড়ে বিজেপি। এখন যখন দুয়ারে আরও একটা লোকসভা নির্বাচন কড়া নাড়ছে তখন বাংলার বুকে বিজেপির তরফে শুরু হয়েছে এক বিশেষ কর্মসূচী(Special Political Campaign)। আর তা হল মুসলিম ভোটারদের(Muslim Voters) মন বোঝার কাজ।
২৪’র ভোটে(General Election 2024) বিজেপির লক্ষ্য বাংলার মাটি থেকে তাঁদের প্রাপ্ত আসনের সংখ্যা উনিশের তুলনায় দ্বিগুণ করে তোলা। অর্থাৎ উনিশের ভোটে বাংলা থেকে পাওয়া ১৮টি আসন ধরে রেখে আরও অন্তত ১৭টি আসন দখল করে মোট সংখ্যাটা ৩৫ নিয়ে যাওয়া। যদিও রাজ্যের বর্তমান রাজনৈতিক ক্ষমতা অনুযায়ী বিজেপি ২৪’র ভোটে ৩৫ তো দূর, ৫টি আসনও পাবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তাঁর চ্যালেঞ্জ, ‘আগে ৫টা আসন পেয়ে দেখাও!’ যদিও বিজেপি ৩৫টি আসন প্রাপ্তির লক্ষ্যেই কাজ করে চলেছে। আর সেই কারণেই বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের নির্দেশে রাজ্য সংখ্যালঘু অধ্যুষিত ও প্রভাবিত লোকসভা কেন্দ্রগুলির পাশাপাশি রাজ্যের সব সংখ্যালঘু এলাকায় গিয়ে কথা বলতে হবে তাঁদের সঙ্গে। শুনতে হবে তাঁদের অভাব অভিযোগের কথা। জানতে হবে তাঁদের সুখ দুঃখের কথা। দেখতে হবে তাঁরা কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা পাচ্ছেন কী পাচ্ছেন না। সব মিলিয়ে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের সঙ্গে সম্পর্ক নিবিড় করেত হবে।
যদিও এই সব কিছু নিয়েই পাল্টা প্রশ্ন থাকছে রাজ্যের সংখ্যালঘু সমাজেরও। থাকছে উদ্বেগও। বাম-কংগ্রেস-আইএসএফ জোট হল সেই উদ্বেগ। ওয়াকিবহাল মহলের দাবি, এই জোট বাস্তবায়িত হলে খুব কম করেও ৫ থেকে ৬ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোট পাবেন জোট প্রার্থীরা। যদি তা সত্যি হয় তাহলে তা তৃণমূলের কপালে ভাঁজ ফেলতে না পারলেও বিজেপির পক্ষে ভাঁজ ফেলা দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। তবুও হাল ছাড়তে নারাজ পদ্মশিবির। তাই সংখ্যালঘু মহল্লায় বাড়ি বাড়ি গিয়ে কী জিজ্ঞাসা করতে হবে, কী খোঁজ নিতে হবে সেটাও দিল্লি থেকে ঠিক করে বাংলায় পাঠিয়ে দিয়েছে বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। সেখানে বলা হয়েছে খোঁজ নিতে হবে কেন্দ্রীয় সরকারের বিভিন্ন প্রকল্পের সুবিধা তাঁদের পরিবারে কেউ পেয়েছেন কিনা, পরিবারে কতজন মাধ্যমিক থেকে স্নাতক উত্তীর্ণ, তাঁদের উপার্জনের উৎস কী, ঠিক মতো রেশন পান কিনা, রাজ্য সরকারের চাকরির জন্য তাঁরা আবেদন করেছেন কিনা ইত্যাদি। ঘরোয়া আলাপচারিতার মোড়কে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ভোটারদের কাছে এইসব প্রশ্ন রেখে তাঁদের মন পড়তে হবে। তারপর আলাপচারিতা জমে গেলে তাঁদের সমর্থন চাইতে হবে।