নিজস্ব প্রতিনিধি: ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে হতে চলছে আন্তর্জাতিক হাট বাজার। যেখানে এপার বাংলার সামগ্রী যেমন বিক্রি হবে তেমনি পাওয়া যাবে ওপার বাংলা অর্থাৎ বাংলাদেশের সামগ্রীও। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তের জিরো পয়েন্টে পাঁচ জায়গায় এই হাট শুরু করা হবে তবে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে আগে পশ্চিমবঙ্গের মালদহ ও বাংলাদেশের রাজশাহী জেলার জিরো পয়েন্টে চালু হতে চলেছে আন্তর্জাতিক সীমান্ত হাট।
সীমান্তে হাট বাজার শুরুর পরিকল্পনা নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারত সরকারের মধ্যে প্রাথমিক পর্যায়ের আলোচনা চুড়ান্ত হয়ে গিয়েছে। ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে পাঁচটি হাট চালুর পরিকল্পনা রয়েছে। বিএসএফ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রাথমিকভাবে পাইলট প্রজেক্ট হিসাবে মালদহ-রাজশাহীর এই সীমান্ত হাটটি চালু হতে যাচ্ছে। এই হাট চালাতে রাজ্য সরকারেরও সহযোগিতা চাইছে কেন্দ্র সরকার। কারণ ভারতীয় ভূমি ও ভূমি রাজস্ব আইন অনুযায়ী জমি অধিগ্রহণের সম্পূর্ণ দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাজ্য সরকারের। ফলে দুই দেশের কেন্দ্রীয় সরকার একমত হলেও জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত প্রাথমিক বিষয়ের ক্ষেত্রে কেন্দ্র সরকারকে তাকিয়ে থাকতে হবে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের দিকেই। সূত্রের খবর, এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের তরফে সবুজ সংকেত মিলেছে। আপাতত দুই দেশের সরকারের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হাট তৈরির জন্য জমি অধিগ্রহণ করা হবে।জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশের ৭৫মিটার জমি ও পশ্চিমবঙ্গের ৭৫মিটার জমি অধিগ্রহন করে যৌথভাবে তৈরী হবে এই হাটবাজার।
মালদহ-রাজশাহীর এই সীমান্ত হাটটি ছাড়া সীমান্ত এলাকার আরও চারটি জিরো পয়েন্টকে কেন্দ্রীয় সরকার হাটের জন্য চিহ্নিত করেছে। উত্তর চব্বিশ পরগনা জেলার বসিরহাটের সঙ্গে বাংলাদেশের সাতক্ষীরা সীমান্ত, উত্তরবঙ্গের হিলি সীমান্ত, বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত এলাকা এবং নদীয়া জেলার গেদে-দর্শনা সীমান্ত এলাকায় বাকি চারটি হাট চালু করা হবে। এই আন্তর্জাতিক হাটে দুই দেশের সীমান্ত এলাকার পাঁচ কিলোমিটারের মধ্যে বসবাসকারী বাসিন্দারা তাদের পন্য সামগ্রী বিক্রি করতে পারবে। ভারত-বাংলাদেশ দুই দেশের সীমান্ত লাগোয়া গ্রামের মানুষজন এই হাটে পণ্যের সম্ভার নিয়ে বসতে পারবে। এর নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকবে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী। সীমান্ত হাটে যেমন মিলবে বাংলাদেশের ইলিশ, তেমনি মিলবে পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রী। এই হাট তৈরীর সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানিয়েছেন রাজ্যের শাসকদল ও বিরোধী দলের নেতারা। তৃনমূল নেতা কৃষ্ণেন্দু নারায়ণ চৌধুরী এই হাট প্রসঙ্গে বলেন, ‘এমনটা হলে সীমান্ত অপরাধ অনেকটাই কমে যাবে। সামাজিক উন্নতি হবে। অর্থনৈতিক উন্নতি ঘটবে এলাকার বাসিন্দাদের।’ উত্তর মালদার বিজেপি নেতা খগেন মূর্মু বলেন, ‘আত্মনির্ভর ভারত গড়ার লক্ষ্যে মোদী সরকারের এমন উদ্যোগ। বাঙালিরা খুব সহজেই বাংলার ইলিশ পাবে। আর বাংলাদেশের বাসিন্দাও সহজে পশ্চিমবঙ্গের সামগ্রী পাবে।’ অন্যদিকে এমন বাজারে খুশি সীমান্তবর্তী এলাকার বাসিন্দারা। তাঁদের কথায়, ‘জমিতে উৎপাদিত ফসল আর দুরে কোথাও নিয়ে যেতে হবে না। বাংলাদেশের কাপড় তারা সহজে কিনতে পারবে।’ কাঁচা সবজি ছাড়াও খাদ্যশস্য, মিষ্টি, মাছ, মাংস, ডিম, প্ল্যাস্টিকজাত সামগ্রী বিক্রি হবে এই হাটে। শুধু তাই নয় জামা ,কাপড় ,শাড়ি সহ একাধিক সামগ্রী বিক্রির সুপারিশ রয়েছে সরকারি তালিকায়। আগামী ছয় মাসের মধ্যে সীমান্ত হাট শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে কেন্দ্র সরকারের।
ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তে বর্তমানে চারটি এমন হাট চালু রয়েছে। এর মধ্যে ভারতের দুটি রয়েছে মেঘালয়ের কালীচরণ ও বালাটে আর ত্রিপুরার শ্রীনগর ও কমলাসাগরে রয়েছে দুটি। সীমান্ত এলাকায় মানুষের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটাতে বিকল্প অর্থনৈতিক ব্যবস্থা হিসেবে ২০১০ সালের ২২ অক্টোবর বাংলাদেশ এবং ভারত সরকার সীমান্তে হাট তৈরী সংক্রান্ত সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করে।