নিজস্ব প্রতিনিধি: গরু পাচার(Cattle Smuggling) চক্রের মূল মাথা যে অনুব্রত মণ্ডল(Anubrata Mondol) তা নিয়ে এখন সন্দেহ নেই সিবিআই(CBI) আধিকারিকদের। কিন্তু তা প্রমাণের জন্য তাঁর এই পাচারচক্রের অন্য সহযোগিদের এখন খুঁজে বের করতে চাইছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বাহিনীর আধিকারিকেরা। আর সেই সূত্রেই তাঁরা এখন খুঁজছেন আব্দুল লতিফকে(Abdul Latif)। গরু পাচার মামলায় সিবিআইয়ের সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিটে নাম রয়েছে ‘অনুব্রত-ঘনিষ্ঠ’ বলে পরিচিত এই ব্যবসায়ী। সিবিআই আধিকারিকদের সন্দেহ, লতিফ ও এই পাচারচক্রে জড়িত বেশ কিছু ব্যবসায়ী বাংলাদেশে পালিয়ে গিয়ে গা ঢাকা দিয়েছে। গত ৮ অগস্ট আসানসোল বিশেষ আদালতে গরু পাচার মামলায় যে সাপ্লিমেন্টারি চার্জশিট জমা দিয়েছে সিবিআই, সেখানেই উল্লেখ করা হয়েছে ইলামবাজার ব্লকের বাসিন্দা লতিফের নাম। সেখানে এটাও উল্লেখ করা হয়েছে যে, লতিফের মতো ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে গরু পাচার চক্রের কোটি কোটি টাকা ‘প্রভাবশালী’দের কাছে গিয়েছে। অনুব্রত ঘনিষ্ঠ এই লতিফই গরু পাচার-কাণ্ডে অন্যতম মাথা। তাই তাঁকেই এখন হন্যে হয়ে খুঁজছেন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা্র আধিকারিকেরা।
সিবিআই আধিকারিকেরা অনুব্রত মণ্ডলের দেহরক্ষী সায়গল হোসেনকে জেরা করে জানতে পেরেছে লতিফকে পাচার চক্রের মাথারা ‘হিঙ্গুল’ হিসাবে ডাকে। লতিফের মূল পরিচয় যাতে সামনে না আসে তার জন্যই এই ব্যবস্থা। বীরভূম(Birbhum) জেলায় যে দু’টি হাট হয়ে মূলত গরু পাচার চলত তার অন্যতম ইলামবাজারের সুখবাজার পশুহাট। সেই পশুহাট কার্যত নিয়ন্ত্রণ করত এই লতিফই। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে গরু আসত ওই হাটে। সুখবাজার থেকে গরু কিনে পড়শি বাংলাদেশে পাচার করা হতো। আন্তর্জাতির গরুপাচারের মূল কাণ্ডারী এনামুলের অত্যন্ত ‘আস্থাভাজন’ লতিফ ছিলেন জেলায় গরুপাচার সিন্ডিকেটের মাথা। সুখবাজারে তাঁর বিরাট বাড়ি। ইলামবাজার থেকে বোলপুর যাওয়ার রাস্তায় বিরাট মার্বেলের শো-রুমও রয়েছে। তবে আপাতত কোনও খোঁজ নেই সেই লতিফের। শোনা যাচ্ছে, ইতিমধ্যেই তিনি বাংলাদেশে চলে গিয়েছেন। অনুব্রতকে বাঁচাতেই নাকি এই কৌশল নেওয়া হয়েছে। বাংলার বুকে ভৌগলিক অবস্থানের দরুন বীরভূম জেলা পাচার চক্রের অন্যতম করিডর হিসাবে চিহ্নিত হয়। এ জেলার গরু কারবারিদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে পড়শি দেশের কারবারিদের। সেই পথ ধরেই পালিয়েছেন লতিফ।
তবে শুধু লতিফ নয়, সিবিআইয়ের নজরে রয়েছে বোলপুরে অনুব্রত মণ্ডলের রাইসমিল ‘ভোলে ব্যোমে’র গায়েই থাকা অপর একটি রাইস মিল ‘শিবশম্ভু’ও। ওই রাইস মিলে ধান ভাঙা ছাড়াও আর কী কাজ চলত, সরকারকে চাল বেচতে কোনও অনিয়ম হত কিনা, তারই এখন খোঁজ শুরু করেছেন সিবিআই আধিকারিকেরা। আর সেই সূত্রেই তাঁরা চিঠি দিয়েছেন ওই চালকলের মালিককে। পাশাপাশি ‘শঙ্কর রাইস মিল’ নামে আরও একটি চালকলের দিকে নজর রয়েছে সিবিআই আধিকারিকদের। ওই রাইসমিলটিও কেষ্ট নিয়ন্ত্রণ করত বলেই সিবিআই আধিকারিকেরা জানতে পেরেছেন। বোলপুরে জামবনি যাওয়ার রাস্তায় ভুবনডাঙা সুকান্তপল্লি এলাকায় প্রায় ১০-১২ বিঘা জায়গার ওপর রয়েছে ‘শিবশম্ভু’ চালকলটি। বিভিন্ন সূত্রে জানা গিয়েছে, চালকলটি বহু শরিকের মালিকাধীন থাকলেও বেশ কয়েক বছর আগে অনুব্রতর এক নিকটাত্মীয় সেটি ১২ বছরের জন্য লিজ নেন। তার পর থেকে ওই চালকলে অনুব্রত ঘনিষ্ঠদের আনাগোনা ছিল বলে স্থানীয়দের দাবি।