নিজস্ব প্রতিনিধি: রাজ্যে নিয়োগ দুর্নীতি কাণ্ডে তদন্তের জল এগিয়েছে বহুদূর। স্কুলে স্কুলে শিক্ষক শিক্ষিকা নিয়োগ দুর্নীতির ঘটনায় যেমন রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেফতার হয়েছেন তেমনি রেশন বন্টন দুর্নীতির মামলায় গ্রেফতায় হয়েছেন প্রাক্তন খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। পুরসভাগুলির ক্ষেত্রেও ঘটেছে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির ঘটনা। সেই মামলাতেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির জিজ্ঞাসাবাদ ও তল্লাশির মুখে পড়তে হয়েছে রাজ্যের দমকলমন্ত্রী সুজিত বসুকে। এই অবস্থায় নতুন করে যাতে আর রাজ্যে পুরনিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ না ওঠে তার জন্য বড় পদক্ষেপ করলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee)। রাজ্যের পুরসভাগুলিতে(Municipalities in Bengal) স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতার সঙ্গে Group-D কর্মী নিয়োগ(Recruitment) নিশ্চিত করতে এবং গোটা প্রক্রিয়ায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ দূর করতে খর্ব করা হচ্ছে চেয়ারম্যানদের ক্ষমতা। তাদের পরিবর্তে এবার নিয়োগ কমিটির প্রধান হবেন জেলাশাসকরা(District Magistrate)। মূল উদ্দেশ্য একটাই, আইন মেনে যোগ্যতা অনুযায়ী যেন পুরসভাগুলিতে শূন্যপদ পূরণ হয়। রাজ্যের ১২৮টি পুরসভাতেই এই সিদ্ধান্ত কার্যকর হবে।
নবান্নের আধিকারিকদের দাবি, বামফ্রন্ট আমলের পুর দুর্নীতির ভার বয়ে নিয়ে যেতে হচ্ছে এখনও। বাম জমানায় পুরসভায় Group A, B, C এবং D পদমর্যাদার কর্মী নিয়োগের ক্ষমতা দেওয়া ছিল সংশ্লিষ্ট পুর কর্তৃপক্ষের হাতেই। ফলে এই চাকরি পাওয়ার একরকম অলিখিত শর্তই হয়ে যায় স্বজন-পোষণ আর দুর্নীতি। ২০১৮ সালে West Bengal Municipal Service Commission গঠন করে রাজ্যের ক্ষমতাসীন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। স্বশাসিত এই কমিশনের হাতে বাংলার সব পুরসভার Group A, B, এবং C কর্মী নিয়োগের ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। কিন্তু Group-D নিয়োগের ভার থেকে যায় পুরসভার কাঁধেই। অষ্টম শ্রেণি পাশ যোগ্যতার এই চাকরির জন্য বিজ্ঞাপন প্রকাশ হলে যাতে বেশি সংখ্যক বেকার যুবক-যুবতীরা তাতে আবেদন জানাতে পারেন তার জন্য এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। সেক্ষেত্রে কমিশনের পক্ষে গোটা নিয়োগ প্রক্রিয়া শেষ করতে বহু সময় লেগে যাবে। তাছাড়া সামান্য বেতনের জন্য ভিন্ন জেলার বা দূরবর্তী জেলার কোনও চাকরিপ্রার্থী ওই পদে যোগ দিতে আদৌ আগ্রহ দেখাত কি না সন্দেহ। তাই স্থানীয়ভাবে এই নিয়োগ করার পক্ষে মত দিয়েছিলেন তৎকালীন প্রশাসকরা।
কিন্তু দেখা যায়, রাজ্যের প্রায় সব পুরসভায় Group-D চাকরির রাশ নিজের হাতে রাখতে সংশ্লিষ্ট পুরসভার চেয়ারম্যানরাই হয়ে যান নিয়োগ কমিটির প্রধান। আর তার জেরেই দানা বাঁধে দুর্নীতি। রাজ্যের পুরনিয়োগ দুর্নীতির সিংহভাগ অভিযোগই এই Group-D চাকরি কেনা-বেচা সংক্রান্ত। তাই চেয়ারম্যানদের ‘দৌরাত্ম্য’ কমাতে এবার ১২৮টি পুরসভার নিয়োগ কমিটির প্রধান পদে বসানো হচ্ছে সংশ্লিষ্ট জেলাশাসকদের। সেক্ষেত্রে চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগে দুর্নীতি পথ বন্ধ হবে বলে আশাবাদী নবান্ন। তবে বিরোধীদের দাবি, রাজ্যের প্রতিটি পুরসভায় Group-D পদে নিয়োগের দায়িত্বও দিতে হবে রাজ্যের West Bengal Municipal Service Commission’র হাতেই। প্রার্থী নির্বাচন করতে হবে লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষার মাধ্যমে। তবে শাসক দল এখনও এই দাবিতে সাড়া দেয়নি।