নিজস্ব প্রতিনিধি: চলচ্চিত্র কে না দেখতে ভালোবাসে! একসময় মেদিনীপুরে সিনেমা হলে (CINEMA HALL) নতুন ‘ছবি’র নাম শুনলেই ছুটে যেতেন সিনেমাপ্রেমীরা। নতুন চলচ্চিত্র এলেই দৌড়ে যেত আট থেকে আশি। কেউ লুকিয়ে কেউ বা পরিবারের সঙ্গে।সত্তর- আশি তো বটেই বিংশ শতাব্দীতেও উপচে পড়ত ভিড়।এক একটা সিনেমা চলেছে প্রায় দু’মাস কোনওটা আবার আড়াই থেকে তিন মাস ধরে। তাও টিকিট হাউসফুল। সে এক দিন ছিল কিন্তু ডিজিট্যাল যুগের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে সবকিছু। বর্তমানে অ্যান্ড্রয়েড এবং ফোর’জি র দাপটে হারিয়েছে সিনেমাহলের রমরমা। সময় নষ্ট করে কেউ খুব একটা সিনেমাহলমুখী হচ্ছেন না। কারণ, একদিকে কাজের চাপ আর অন্যদিকে সময়ের অভাব। এই দুইয়ের মেঝেই সকলে সিনেমা হল এড়িয়েছেন।
চলচ্চিত্র মিক্তি পাওয়ার কয়েকদিনেই এখন অ্যান্ড্রয়েড মোবাইলে দেখা যাচ্ছে ওটিটি প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে। আর এর ফলেই ধীরে ধীরে লোপ পাচ্ছে সিনেমা হল। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ঘাটাল, মেদিনীপুর ও খড়গপুর- এই তিনটি ডিভিশনে ১০-১২ টি করে বড় সিনেমা হল ছিল। এর সঙ্গে সঙ্গে ছোট পর্দার ভিডিও হল ছিল খান দশেক। কিন্তু যুগের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে লোপ পেয়েছে বেশির ভাগ সিনেমা হলগুলি। বিলুপ্ত হয়েছে মিনি পর্দার ভিডিও হল।
তবে এত কিছুর মধ্যেও সেই ১৯৪৭ সাল থেকে শুরু হওয়া মেদিনীপুরের সিনেমাহল ‘হরি সিনেমা’ আজও কোনক্রমে টিকিয়ে রেখেছে তার অস্তিত্ব। ভর্তুকি দিয়েই হল চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। কর্তৃপক্ষের আবেদন, সরকারি সাহায্য। এই হলের কর্মচারীর সংখ্যা এক সময় ছিল ৩০ থেকে ৪০ জন। সেই রমরমা বাজারে বেতনও ছিল অনেক বেশি। দিনরাত নাওয়া খাওয়া ভুলে সকলে এই সিনেমা হলেই পড়ে থাকতেন। কিন্তু সেই মূল কর্মীর সংখ্যাটা এখন দাঁড়িয়েছে মাত্র তিনে। ঝাড়পোঁছ কেয়ারটেকার নিয়ে সংখ্যাটা বড়জোর দশ। তবে বেতন বাড়েনি, বেতন সেই সাড়ে তিন হাজার। ৬৭০ টা সিটের হলে চারটি শো চালিয়েও মিলছে না দর্শক। ফলে ‘ভাঁড়ে মা ভবানী’। দর্শকের অভাবে বেশিরভাগ শো বাতিল করতে হচ্ছে হল মালিককে। আর তাই প্রশাসনের সাহায্যের দিকেই তাকিয়ে রয়েছে এই সিনেমাহল।
এ বিষয়ে সিনেমা মহলের কর্মী সমিত কুমার দাস, পিনাকী চন্দ্ররা বলেন, খুব কম বয়স থেকেই এই হলে কাজ করছি। তখন ছিল এক অন্যরকম উন্মাদনা। দীর্ঘ লাইন অপেক্ষা করে মানুষ টিকিট কাটতে আসতেন হলে। প্রতিটি ছবি চলত প্রায় সপ্তাহ থেকে এক মাস। আবার কোনওটা তিন থেকে চার মাস। সে এক যুগ গেছে কিন্তু বর্তমানে দর্শকের অভাবে শো বন্ধ করতে বাধ্য হতে হচ্ছে।একদিকে অতিমারি বিপর্যয় এবং তারপরে অনলাইনের দাপটের জন্যই আজ সিনেমা হলের এই অবস্থা। কর্মীদের পক্ষ থেকে একজন আক্ষেপের সুরে বলেন, ‘জানি না এটা কতদিন চলবে, হয়ত যে কোনওদিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে’।
তবে এই বিষয়ে মেদিনীপুর পুরসভার ভাইস চেয়ারম্যান অনিমা সাহা বলেন, অনলাইনের জন্যই সিনেমা হলগুলির এই করুণ অবস্থা। কোনওক্রমে তারা টিকে রয়েছে। যদিও বিধায়িকা জুন মালিয়া মুখ্যমন্ত্রীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে একটি মাল্টিপ্লেক্স করার দাবি করেছেন এবং সেই মাল্টিপ্লেক্স হলে আবার হয়ত দর্শকরা হলমুখো হবেন। তা হলেই করুণ অবস্থা কাটবে। উল্লেখ্য, ঐতিহ্যের মেদিনীপুর শহরে সিনেমা হল ছিল ৩টি। এখন সম্বল বলতে খুঁড়িয়ে চলা সেই হরি সিনেমা।