নিজস্ব প্রতিনিধি: সোয়াইপ মেশিন এনে তাতে আঙুলের ছাপ নিয়ে বৃদ্ধার টাকা আত্মসাৎ করেছিলেন স্থানীয় এক ‘গুণধর’ নেতা। অভিযোগ এমনটাই। তিনি ১০০ দিনের কাজের সুপার ভাইজার। তাঁকে বৃদ্ধা ‘চোর’ বললে বেধড়ক মারধর করেন অভিযুক্ত। বৃদ্ধাকে ‘ফুল চোর’ বলেও অপবাদ দেওয়া হয়। মার খেয়ে হাসপাতালে (HOSPITAL) চিকিৎসাধীন বৃদ্ধা।
১০০ দিনের কাজ দেওয়া হবে এই অছিলায় বাড়িতে সোয়াইপ মেশিন এনে বৃদ্ধার টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। পরে চাপের মুখে পড়ে টাকা ফেরৎ দেন ঠিকই কিন্তু বৃদ্ধাকে বেধড়ক মারধর করা হয় বলেও অভিযোগ। মার খেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধা। বর্তমানে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তিনি। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে ময়নাগুড়ির ভোটপট্টি স্টেশন পাড়া এলাকায়।
জানা গিয়েছে, ময়নাগুড়ি ভোটপট্টি স্টেশন পাড়া এলাকার বাসিন্দা ময়না দাস (৭০)। ১০০ দিনের কাজে নাম ওঠানো হবে, এই অছিলায় সম্প্রতি তাঁর বাড়ি যান স্থানীয় তৃণমূল নেতা তরুণ রায়। বৃদ্ধার বাড়িতে সোয়াইপ মেশিন এনে আঙুলের ছাপ নিয়ে দশ হাজার টাকা আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ। পরে অভিযুক্তকে পাড়ার সকলে মিলে চেপে ধরলে টাকা ফেরৎ দিতে বাধ্য হন তিনি।
অভিযোগ, শুক্রবার সকালে বৃদ্ধাকে ‘ফুল চোর’ অপবাদ দেন অভিযুক্ত। বৃদ্ধাও ‘চোর’ বলেন অভিযুক্তকে। এরপরে ওই বৃদ্ধাকে বেধড়ক মারধর করে গলা চিপে ধরেন তরুণ রায়। এই ঘটনায় গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়েন বৃদ্ধা। তাঁকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় ময়নাগুড়ি হাসপাতালে নিয়ে গেলে তাঁর প্রাথমিক চিকিৎসা করা হয়। এরপর তাঁকে জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বর্তমানে আশঙ্কাজনক অবস্থায় জলপাইগুড়ি সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বৃদ্ধা।
বৃদ্ধা ময়না দাস বলেন, ‘মাটি কাটার টাকা দেওয়া হবে বলে আমার আঙুলের ছাপ নেয়। প্রথমে আমি দিতে চাইনি। পরে আমার থেকে একপ্রকার জোর করে ছাপ নেয়। আমি বিষয়টি পঞ্চায়েতকে জানালে বলা হয় এখন কোনও টাকা দেওয়া হবে না। ওরা আমার দশ হাজার টাকা তুলে নিয়েছিল। আমি আজ চোর বলেছি। সেজন্য আমাকে মারল’।
বৃদ্ধার বৌমা কল্পনা দাস বলেন, ‘আমার শাশুড়ি পেনশন পান। তাঁর ব্যাঙ্কে ১ লক্ষ টাকা ছিল। একথা জানতে পেরে ওই যুবক আমার শাশুড়িকে বলেন ১০০ দিনের কাজ এসেছে। একটি মেশিন এনেছি এখানে আঙুলের ছাপ দিতে হবে। পরবর্তীতে সে আঙুলের ছাপ নিয়ে চলে যায়। এরপর স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্যকে সেই বিষয়টি জানানো হলে বলা হয়, এখন কোনও ১০০ দিনের টাকা দেওয়া হবে না। এরপর আমরা তাকে চেপে ধরলে সে টাকা ফেরত দেয়। আজ সকালে আমার শ্বাশুড়ি ফুল তুলতে গেলে তাকে ফুল চোর অপবাদ দিয়ে বেধড়ক মারধর করা হয়’।
এই ঘটনায় ময়নাগুড়ির ব্লক সভাপতি শিবশঙ্কর দত্ত যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি টেলিফোনে বলেন, তরুণ একটি মিনি ব্যাঙ্ক চালায়। বৃদ্ধা তাঁর কাছ থেকে দশ হাজার টাকা তোলেন। তাঁর কাছে সেই সময় টাকা না থাকার কারণে ওই টাকা পরের দিন দেওয়া হয়। তিনি আরও বলেন, আজ তরুণের বাড়িতে বৃদ্ধা ফুল তুলতে গেলে দু’জনের বচসা হয়। তখন বৃদ্ধা তরুণকে ‘টাকা চোর’ অপবাদ দেয়। এর বেশি কিছু হয়নি ওখানে। প্রসঙ্গত, এর আগে জলপাইগুড়ি পাহাড়পুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় সোয়াইপ মেশিন দিয়ে ১০০ দিনের কাজের টাকার জন্য কাটমানি নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল।