নিজস্ব প্রতিনিধি: বাংলার বুকে আয়োজিত বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট এবার এক ঐতিহাসিক সাফল্যের মুখ দেখেছে। ৩ লক্ষ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগের প্রস্তাব উঠে এসেছে রাজ্য সরকারের কাছে ষষ্ঠ বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন(Bengal Global Business Summit) থেকে। এর মধ্যে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ প্রস্তাব এসেছে শুধুমাত্র স্বাস্থ্যক্ষেত্রেই। অ্যাপেলো গ্রুপের তরফ থেকে রাজ্যে ১ হাজার কোটি টাকার লগ্নির আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। তবে সব থেকে বড় আশ্বাস এসেছে দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবী শেঠীর(Dr. Debi Shetty) দিক থেকে। তিনি বাংলায় দেশের প্রথম অঙ্গ প্রতিস্থাপণের হাসপাতাল গড়ার কথা ঘোষণা করেছেন। এর জন্য তিনি এদিন বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলন থেকে রাজ্যের কাছে জমিও চেয়েছেন। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়(Mamata Banerjee) দেবী শেঠীর এই প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছেন ও দ্রুত জমি প্রদানের আশ্বাসও দিয়েছেন। এর পাশাপাশি বাংলার স্বাস্থ্যক্ষেত্র নিয়ে দেবী শেঠী বেশ কিছু গুরিত্বপূর্ণ দিশাও দেখিয়েছেন।
রাজ্যের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো উন্নত হয়েছে মমতার আমলে – এদিন দেবী শেঠী জানিয়েছেন, তৃণমূল কংগ্রেস রাজ্যের ক্ষমতায় আসার পর থেকেই স্বাস্থ্য পরিকাঠামোর উন্নয়ন দেখা যাচ্ছে। গ্রামীণ স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলি ঢেলে সাজানোর পাশাপাশি জেলায় জেলায় তৈরি হয়েছে সুপার স্পেশালিটি হসপিটাল। বেশ কয়েকটি মেডিকেল কলেজও তৈরি হয়েছে। হাসপাতালে বেডের সংখ্যাও বাড়ানো হয়েছে। সর্বোপরি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত স্বাস্থ্যসাথী কার্ড রাজ্যের স্বাস্থ্যব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন এনেছে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণও বেড়েছে। রাজ্যে এবার স্বাস্থ্যক্ষেত্রে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার ও ফার্মাসি ক্ষেত্রে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে। ২০২১-২২ অর্থবর্ষে রাজ্যের চিকিৎসা ক্ষেত্রে বেসরকারি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ২,৫৩৭ কোটি টাকা। আগামী চার বছরে বেসরকারি বিনিয়োগের লক্ষ্যমাত্রা ধার্য হয়েছে ৫,২৩৮ কোটি টাকা।
অঙ্গ প্রতিস্থাপনে দেশের মধ্যে এগিয়ে বাংলা – দেবী শেঠী এদিন জানিয়েছেন, অঙ্গ প্রতিস্থাপনে ইতিমধ্যেই দেশের অন্যান্য হাসপাতালের থেকে এগিয়ে গিয়েছে বাংলা। কোভিড আবহেও ব্রেন ডেথ হয়ে যাওয়া ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপন করে মুমুর্ষ রোগীকে বাঁচিয়ে নজির তৈরি গড়েছেন বাংলার চিকিৎসকেরা। আমরা বাংলায় দেশের প্রথম অঙ্গ প্রতিস্থাপনের হাসপাতাল গড়তে চাইছি। যেখানে শুধুমাত্র অঙ্গ প্রতিস্থাপণের কাজই হবে। দেশে এখন কিছু বেসরকারি হাসপাতাল এই প্রিষেবা দেয়, কিন্তু আমাদের মনে হয়েছে তা প্রয়োজনের তুলনায় কম। কেননা ওই সব হাসপাতালে অনান্য রোগের চিকিৎসাও হয়। রাজ্য সরকার জমি দিলে আমরা বাংলাতেই দেশের প্রথম অঙ্গ প্রতিস্থাপন কেন্দ্র গড়ে তুলতে চাই।
চাই নার্সিং কলেজ – ষষ্ঠ বিশ্ববাংলা বাণিজ্য সম্মেলনে অংশ নিয়ে বৃহস্পতিবার দেশের বিশিষ্ট চিকিৎসক দেবী শেঠী বলেন, ‘রাজ্যের হেলথ কেয়ার ব্যবস্থারও উন্নয়নে বেশকিছু পদক্ষেপ নিতে হবে রাজ্য সরকারকে। কলেজে পড়ে নার্স হওয়া যায় না। দরকার হয় হাতে কলমে রোগীকে পরিষেবা দেওয়া। তাই অন্তত রোগীকে সর্বক্ষণ পরিষেবা দেওয়ার মতো ব্যাপক সংখ্যক নার্স তৈরি করতে হবে রাজ্যে। আর সেই জন্যই অন্তত ১ হাজার নার্সিং কলেজ(Nursing College) তৈরি করতে হবে।
ছোট ছোট মেডিকেল কলেজ চাই – দেবী শেঠীর অভিমত, ‘ভারত তথা পশ্চিমবঙ্গে বিশ্বখ্যাত চিকিৎসকরা রয়েছেন। অসাধ্য সাধন করছেন। কিন্তু একটা বিষয় মনে রাখতেই হবে, এরা সকলেই কিন্তু গরিব ঘরের সন্তান। রাজ্যে ১ হাজার, এমনকী দেড় হাজার শয্যার হাসপাতাল রয়েছে। কিন্তু সেই অনুপাতে চিকিৎসক নেই। দেশে এখন কর্মরত চিকিৎসকের সংখ্যা এখন ১০ লক্ষ। এই সংখ্যাটাকে ঠিক কতটা বাড়াতে হবে, তা সময় বলবে। আমার প্রস্তাব ছোট ছোট মেডিকেল কলেজ(Medical College) তৈরি করা হোক বাংলায়। যেখানে ১০০-১৫০ ছাত্র পড়াশোনা করতে পারবে, টাকাও কম লাগবে, তাহলে প্রচুর সংখ্যায় চিকিৎসক তৈরি হবে দেশে। অর্থাৎ আমাদের চিন্তাভাবনা বদল আনতে হবে। দেশের বড় বড় চিকিৎসক এবং গবেষক নিম্নমধ্যবিত্ত ঘর থেকেই উঠে এসেছে। তাঁরা যদি চিকিৎসক হওয়ার সুযোগ পায়, তাহলে আগামিদিনে চিকিৎসকের ঘাটতিও অনেকটা কমে যাবে।’
স্বাস্থ্যসাথী কার্ড নজর কেড়েছে সবার – বৃহস্পতিবার বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে রাজ্যের চিকিৎসা ক্ষেত্রে সম্ভাবনা নিয়ে বিশেষ আলোচনা হয়। সেখানেই দেবী শেঠী বাংলার স্বাস্থ্যসাথী কার্ডের ভূয়ষী প্রশংসা করেন দেশ বিদেশের প্রতিনিধিদের সামনে। বলেন, ‘স্বাস্থ্যসাথী কার্ড বাংলার চিকিৎসার মানচিত্রটাই বদলে গিয়েছে। আগে এই রাজ্যের একতা বড় অংশের মানুষ প্রতিবছর দক্ষিণ ভারত বা দেশের অনান্য রাজ্যে যেতেন চিকিৎসার জন্য। কিন্তু এখন সেই সংখ্যা অনেকতাই কমেছে। যারাও বা যাচ্ছেন সঙ্গে স্বাস্থ্যসাথীর কার্ড নিয়ে যাচ্ছেন। তাই দক্ষিণভারত সহ দেশের অনান্য রাজ্যগুলির বেসরকারি হাসপাতালগুলিও স্বাস্থ্যসাথী কার্ডে চিকিৎসা দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছে। তবে প্রায়শই একটা অভিযোগ আসছে যে বেসরকারি হাসপাতালগুলি বেশি চার্জ নেয়। আমার মনে হয়, এর কারণটা খুঁজে দেখার সময় এসেছে।’ এদিন এই বিশিষ্ট চিকিৎসক রাজ্যের স্বাস্থ্য সচিব নারায়ণস্বরূপ নিগমের সঙ্গেও আলাদা করে একটি বৈঠক করেন বলে জানা গিয়েছে।