নিজস্ব প্রতিনিধি: কয়েকদিন আগেই UNESCO’র তরফে শান্তিনিকেতনকে(Shantiniketan) World Heritage হিসাবে ঘোষণা করা হয়েছে। সেই শান্তিনিকেতন থেকে ৩-৪কিমি দূরেই রয়েছে সুরুল গ্রাম(Surul Village)। এই গ্রামেই ১৭৮২ ব্যবসা শুরু করেছিলেন ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির প্রথম রেসিডেন্ট জন চিফ। সুরুলের সরকার পরিবারের প্রাণপুরুষ ভরতচন্দ্র সরকার এই জন চিফের সঙ্গে ব্যবসা শুরু করেন। এর ফলে তিনি প্রভূত ভূ-সম্পত্তি ও অর্থের অধিকারী হয়ে ওঠেন। এই পরিবারের মূল আয় ছিল নীল চাষ থেকে। এছাড়াও গড়া কাপড় এবং চিনির ব্যবসাও ছিল। এই সরকার বাড়ির কাছ থেকেই জমি কিনে শান্তিনিকেতনের গোড় পত্তন ঘটিয়েছিলেন মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর। সেই সরকারবাড়ির পুজো(Sarkar Bari Durga Pujo) দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেলেও এখনও সাড়ম্বরে তা পালিত হয় প্রতিবছর। বীরভূম জেলার সুরুলের সরকার বাড়ির পূজোয় আজও মিশে আছে মাটির গন্ধ, শিকড়ের টান আর আভিজাত্য।
সুরুলের জমিদারবাড়ি হিসাবে প্রসিদ্ধ সরকারদের পুরাতন বাড়িটি। এই বাড়িতেই ভরতচন্দ্র সরকার দুর্গাপুজোর সূচনা ঘটান। পরে শ্রীনিবাস সরকারের হাত ধরে সেই পুজোর শ্রীবৃদ্ধি ঘটেছিল। পরবর্তীকালে সম্পত্তির ভাগাভাগির পরে আরও একটি পূজোর সূচনা হয়। সেই পূজোটির বয়সও প্রায় ১০০ বছর। একচালির সাবেকি প্রতিমাকে পরানো হয় ডাকের সাজ। আজও থাকে সোনা রূপোর গহনা। প্রতিমার গায়ের রঙ তপ্তকাঞ্চন। চালচিত্রে আঁকা থাকে শিব ও দুর্গার বিয়ের দৃশ্য। প্রতিমার সাবেকি রূপটি আজও অপরিবর্তিত রয়েছে। পাঁচ খিলানের ঠাকুরদালান, সামনে থামযুক্ত নাটমন্দির, নানারঙের কাঁচের ফানুস আর বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি মনে করিয়ে দেয় এই পুজোর সাবেকি ঐতিহ্য আর রাজকীয় জৌলুষের কথা।
প্রতি বছর সপ্তমীর সকালে সরকার পরিবারের দুটি বাড়ি থেকে একযোগে ঢাক ঢোল, পাইক বরকন্দাজ সহযোগে শোভাযাত্রা বার করা হয়। সেই শোভাযাত্রার মাধ্যমে সাবেকি পালকি করে নবপত্রিকাকে নিয়ে যাওয়া হয় দিঘিতে স্নানের জন্য। ফের স্নান শেষে সেই শোভাযাত্রা সহকারেই ফিরিয়ে আনা হয়। পুরোনো প্রথা মেনেই সপ্তমীতে চালকুমড়ো, অষ্টমীতে পাঁঠা, আর নবমীতে আঁখ বলি হয়। অষ্টমীতে বলিদানের পরে সেই বলিদানের খাঁড়া নিয়ে শোভাযাত্রা করে মনসা মন্দিরে গিয়ে সেখানে আরও একটি পাঁঠা বলি দেওয়ার রীতি বহুকালের। পূজোয় অন্নভোগ না হলেও চাল ও ফলের নৈবিদ্য এবং লুচি ভাজা ও অন্যান্য ধরনের মিঠাই ভোগ থাকে। পূজোর কদিন সন্ধ্যায় জ্বালানো হয় সাবেক বেলজিয়াম কাঁচের ঝাড়বাতি ও রঙিন ফানুস।