নিজস্ব প্রতিনিধি: বলি হচ্ছেটা কী? অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Abhishek Banerjee) অফিসে চলে যাচ্ছেন বিজেপি বিধায়কেরা, রাজ্য সরকারের উৎসবে নিজেরাই হাজিরা দিচ্ছেন বিজেপি বিধায়কেরা, এবার কী গোটা দলটাই তৃণমূলে মিশে যাবে? প্রশ্নটা উঠেই গেল। এমনিতেই কাঁথির বুকে দাঁড়িয়ে অভিষেক জানিয়েই দিয়েছেন দলের দরজা তিনি খুলতে চলেছেন। তবে সবার জন্য সেই দরজা খোলা না হলেও বেছে বেছে কিছু লোককে নেওয়া হবে দলে। সেই ঘোষণার পর থেকেই রাজ্য রাজনীতিতে জোর জল্পনা ছেয়ে গিয়েছে। সেই জল্পনা সম্প্রতি আরও বেগবান হয়ে উঠেছে বিজেপির ২ বিধায়ক কলকাতায় ক্যামাক স্ট্রিটে অভিষেকের নিজস্ব অফিসে চলে যাওয়ায়। যদিও কোন সেই ২ বিধায়ক তা অবশ্য এখনও সরকারি ভাবে সামনে আসেনি। কিন্তু শনিবার সন্ধ্যায় বিজেপির ৪ বিধায়ক(4 BJP MLA) রাজ্য সরকারের ডুয়ার্স উৎসবে(Dooars Utsab) হাজির হলে তাঁদের ঘিরে নতুন করে জল্পনা ছড়িয়ে পড়েছে রাজ্য রাজনীতিতে। যদিও সেই ৪ বিধায়কের দাবি, সরকারু অনুষ্ঠানে তাঁদের আমন্ত্রণ না জানানোর প্রতিবাদ হিসাবেই তাঁরা টিকিট কেটে সেই উৎসবে সামিল হয়েছিলেন। কিন্তু এহেন যুক্তি কেউ মানতে চাইছেন না। বরঞ্চ জল্পনা ডানা মেলেছে যে একসঙ্গে ৬ বিধায়ক দলবদলের পথে।
আরও পড়ুন ৩ পুরসভার জন্য ৩২৮ কোটি টাকার পানীয় জল প্রকল্প
জানা গিয়েছে, উত্তরবঙ্গের আলিপুরদুয়ার(Alipurduyar) শহরের প্যারেড গ্রাউন্ডে গত ৭ জানুয়ারি থেকে শুরু হয়েছে ডুয়ার্স উৎসব। চলবে আগামী ১৭ জানুয়ারি পর্যন্ত। আলিপুরদুয়ার জেলার ৫টি বিধানসভা কেন্দ্রের সবকটিতেই একুশের ভোটে জয়ী হন বিজেপির প্রার্থীরা। কিন্তু অভিযোগ উঠেছে আলিপুরদুয়ার শহরের বুকে রাজ্য সরকার ডুয়ার্স উৎসবের আয়োজন করলেও ওই ৫বিধায়কের কাউকেই নাকি আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। এমনকি অভিযোগ উঠেছে, আমন্ত্রণ জানানো হয়নি এলাকার বিজেপি সাংসদ তথা কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী জন বারলাকেও। যদিও সেই অভিযোগ মানতে নারাজ শাসক শিবির। সেই বিরোধের মধ্যেই শনিবার সন্ধ্যায় রীতিমত নিজেদের গ্যাঁটের কড়ি খরচ করে টিকিট কেটে ডুয়ার্সে উৎসবে যান আলিপুরদুয়ার, মাদারিহাট, কালচিনি ও কুমারগ্রামের চার বিজেপি বিধায়ক। এরা হলেন যথাক্রমে সুমন কাঞ্জিলাল, মনোজ টিগ্গা(Monoj Tigga), বিশাল লামা এবং মনোজ কুমার ওরাঁও। যাননি কেবল ফালাকাটার বিজেপি বিধায়ক দীপক বর্মণ। আর তার জেরেই প্রশ্ন উঠেছে বিনা আমন্ত্রণে কেনই বা রাজ্য সরকারের অনুষ্ঠানে গেলেন ওই ৪ বিজেপি বিধায়ক? প্রতিবাদ জানানোর কী আর কোনও রাস্তা খোলা ছিল না?
আরও পড়ুন মাথাপিছু বরাদ্দ মাত্র ৫ টাকা ৪৫ পয়সা, প্রশ্নের মুখে পুষ্টি
যদিও দলবদলের জল্পনা উড়িয়ে দিয়ে কেন এই প্রতিবাদের রাস্তা তাঁরা বেছে নিয়েছিলেন সেই বিষয়ে মুখ খুলেছেন মাদারিহাটের বিজেপি বিধায়ক তথা দলেরে মুখ্য সচেতক মনোজ টিগ্গা। তিনি জানিয়েছেন, ‘এটা কোনও নির্দিষ্ট জাতি, ধর্ম, বর্ণ কিংবা রাজনৈতিক দলের মানুষের উৎসব নয়। ডুয়ার্সে বসবাসকারী সকলকে কেন্দ্র করে উৎসব শুরু হয়েছিল। তবে এখন এটি একটি নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠান হয়ে গিয়েছে। আমরা এটা মানতে পারব না। ডুয়ার্স উৎসব আয়োজনের অছিলায় বেআইনিভাবে তৃণমূল নেতারা ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা তুলছে। জেলাশাসককে সঙ্গে নিয়ে স্থানীয় হোটেল ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে টাকা তোলা হচ্ছে। ডুয়ার্স উৎসব কমিটির সদস্যরা ওই টাকা দিয়ে সংসার চালাচ্ছে। তৃণমূল সব অনুষ্ঠানকে নিজের দলের অনুষ্ঠান বলে মনে করে। আমরা কোনওদিন সরকারি অনুষ্ঠানে ডাক পাইনি। ডুয়ার্স উৎসবকে পৈতৃক সম্পত্তি করার অনুমতি কেউ দেয়নি।’ কিন্তু মনোজের এই ব্যাখা সহজ সরল পথে কেউই মেনে নিতে পারছেন না। অনেকেই মনে করছেন আলিপুরদুয়ারের চা-বলয়ে গেরুয়া বাহিনীর কদর ক্রমশই কমছে। সেটা বুঝতে পেরে এখন থেকেই শাসক শিবিরের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা বাড়াতেই ৪ বিজেপি বিধায়কের ডুয়ার্স উৎসবে আগমন ঘটেছে। আজ তাঁরা সরকারি অনুষ্ঠানে যাচ্ছেন, আগামী দিনে সরাসরি তৃণমূল ভবনে চলে যাবেন।